পান্তার নতুন গুণের সন্ধান, কমাতে পারে রক্তে শর্করার মাত্রা
Published: 14th, April 2025 GMT
‘পান্তাভাতের জল, তিন পুরুষের বল’—পান্তার গুণ নিয়ে প্রচলিত ছড়ার এটি একটি। বাংলাদেশের প্রাচীন কৃষি সভ্যতা, মানুষের অর্থনৈতিক প্রজ্ঞা ও সামাজিক প্রথা জড়িত পান্তার সঙ্গে।
শহুরে মধ্যবিত্তের সংস্কৃতিতে পান্তা নতুন করে জায়গা পেয়েছে বাংলা নববর্ষ বৈশাখ উদ্যাপনকে ঘিরে। এবারও পয়লা বৈশাখে অনেক অনুষ্ঠানে ‘পান্তা খাওয়ার’ কর্মসূচি থাকছে, যা অনেকের কাছে একটি দিনের আনন্দ উদ্যাপনের অনুষঙ্গ মাত্র; যদিও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের বড় অংশের প্রাত্যহিক খাবার পান্তা। গরিবের এ খাবারের নতুন গুণের সন্ধান পাওয়া গেছে। আর তা খুঁজে পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক।
শরীরের জন্য উপকারী নানা উপাদান খুঁজে পাওয়া গেছে পান্তা নিয়ে নতুন এ গবেষণায়। দেখা গেছে, পান্তাভাতে অনেক উপকারী অণুজীব আছে। আবার এখানে নতুন কিছু অণুপুষ্টি উপাদানও পাওয়া গেছে। গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পান্তা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হারে বাড়ে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী ফুড অ্যান্ড হিউম্যানিটি–তে পান্তাভাত নিয়ে নতুন এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন যুক্তরাজ্যের লিভারপুল জন মুরস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ফার্মাসি অ্যান্ড বায়োমলিকুলার সায়েন্সেসের অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন সরকার। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন যুক্তরাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।
অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এবারের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল অপুষ্টির সঙ্গে লড়াইয়ে আসলে এ খাবার কতটুকু উপযোগী, তা খুঁজে দেখা। গবেষণায় পান্তার অণুজৈবিক উপাদান, পুষ্টির উপাদান এবং কম শর্করার খাদ্য হিসেবে এর উপযোগিতা যাচাই করা হয়েছে। এসব একাধিক পুষ্টি উপাদান খুঁজতে পান্তাভাতে থাকা অণুজীবের জিনগত রহস্য উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্সিং) করা হয়েছে।
সহজেই তৈরি করা যায় পান্তাভাত। কম খরচের এ খাবারের পুষ্টির মান নিয়ে আগেও একাধিক গবেষণা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক খালেদা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ গবেষণায় অভিনবত্ব আছে। আরও বিস্তৃত পরিসরে এটি করা হলে বাঙালির পান্তার গুণাগুণ নিয়ে বিশ্ববাসী জানতে পারবে। সে ক্ষেত্রে শুধু বাঙালি নয়, অন্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষকেও গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
অণুজীব ও অণুপুষ্টির সমাহার পান্তায়
যুক্তরাজ্যের মিডলসব্রো শহরে থাকা বাঙালি পরিবারে ১৩ সদস্যকে নিয়ে এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ব্যবহৃত হয়েছে সাদা বাসমতী চাল। রাতে এ চালের ভাতে পানি দিয়ে প্রায় ১২ ঘণ্টার জন্য রেখে দেওয়া হতো দুটি ভিন্ন তাপমাত্রায়-২০ ও ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ দুই ধরনের ভাতে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ ও অণুপুষ্টির উপাদানের মাত্রা দেখা হয়। খেতে দেওয়া হয় গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের এবং খাওয়ার পর তাঁদের রক্তে শর্করা বৃদ্ধির মাত্রা দেখা হয়।
পান্তা যেভাবে তৈরি হয়, তাকে গাজন বা ফারমেন্টেশন বলা হয়। সাধারণত গাজনপ্রক্রিয়ায় খাবারে অণুজীবের জন্ম হয়। নতুন এ গবেষণায় পান্তায় প্রোবায়োটিক-সমৃদ্ধ ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে পারে।
অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন সরকার বলেন, ‘আমরা সাধারণ ভাত এবং পান্তাভাতের তুলনামূলক পরীক্ষা করে দেখেছি, পান্তায় নানা ধরনের বিপুল সংখ্যায় উপকারী অণুজীবের সন্ধান পেতে থাকি। সাধারণ ভাতের চেয়ে পান্তায় ১০ গুণ বা তারও বেশি উপকারী অণুজীব তৈরি হতে দেখি।’
এ গবেষণার দ্বিতীয় বড় দিক হলো পান্তায় একাধিক অণুপুষ্টির সন্ধান। এর মধ্যে আছে লৌহ, জিংক, কপার, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম, বোরন ও পটাশিয়াম, যা সাধারণ ভাতের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
যেখানে প্রতি আড়াই গ্রাম সাধারণ ভাতে শূন্য দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রাম লৌহ থাকে, সেখানে একই পরিমাণ পান্তায় পাওয়া যায় প্রায় ১ মাইক্রোগ্রাম। ক্যালসিয়ামের মাত্রা সাধারণ ভাতে শূন্য দশমিক ১০ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেলেও পান্তায় তা শূন্য দশমিক ৪০ মাইক্রোগ্রামের বেশি পাওয়া গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, ‘ভাতে যে আঁশ থাকে, সেটা সাধারণ রান্না করা ভাতে অবমুক্ত হয় না। কিন্তু পানি দিয়ে রাখার ফলে যখন গাজনপ্রক্রিয়া সংঘটিত হয়, তখন অণুজীবের মাধ্যমে এসব আঁশ দ্রুত অবমুক্ত হয় এবং যার ফলে অণুপুষ্টির কণার বিপুল সমাহার হতে পারে। নতুন গবেষণা আমাদের এমন নতুন তথ্যের সন্ধান দিল। এটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক ধ ক উপ দ ন উপক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ