পরোক্ষ আলোচনাই চলবে, ওমানে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক
Published: 14th, April 2025 GMT
ওমানের মধ্যস্থতায় ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইরানের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বিষয়ে ইতিবাচক মত দিয়েছে দু’পক্ষই। শিগগিরই দুই দেশ আবারও আলোচনার টেবিলে বসার কথা জানিয়েছে। তবে ইরান পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা হবে শুধু পরোক্ষভাবে, ওমানের মধ্যস্থতায়। সরাসরি বৈঠকে প্রবল আপত্তি তেহরানের। আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছে দেশটি।
ইরানের স্পষ্ট মতামত, এ আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে পরমাণু কর্মসূচি ও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া নিয়ে। এর বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় যাবে না তেহরান।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাঈল বাকাঈ রোববার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, ‘ওমানের মধ্যস্থতায় আলোচনা পরোক্ষভাবেই চলবে। ভবিষ্যৎ আলোচনার স্থান এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’ আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বৈঠকে শুধুই পরমাণু কর্মসূচি ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হবে। অন্য কোনো ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলবে না ইরান।’
শনিবার মাসকাটে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি ভেঙে পড়ার পর দেশ দুটির সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। বিশ্লেষকদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতি তেহরানের সমর্থনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করতে পারে। তবে শুরু থেকেই এসব বিষয়ে আলোচনায় অসম্মতি দেখিয়ে আসছে ইরান।
গত শনিবারের আলোচনা উভয় পক্ষই ‘গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করেছে। আলোচনা মূলত ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় পরোক্ষভাবে হলেও ইরান জানিয়েছে, পরে আরাগচি ও উইটকফ কয়েক মিনিট সরাসরিও কথা বলেন। ইরানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনা খারাপ যাচ্ছে না। তবে যতক্ষণ কিছু চূড়ান্ত না হয়, সে পর্যন্ত কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়।’ সূত্র: এএফপি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র পরম ণ পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’