‘মিষ্টি একটা বউ চাই’, ‘বউ হতে চাই’—নতুন বছরে এমন আরও যেসব চাওয়া উঠে এল
Published: 14th, April 2025 GMT
পয়লা বৈশাখে নতুন বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) দেখা গেল এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিচালিত সংগঠন সেন্টার ফর বেঙ্গল স্টাডিজ ‘বর্ষবরণ শামিয়ানা ১৪৩২’ উপলক্ষে আয়োজন করে ‘ভালো কাজের হালখাতা’ অনুষ্ঠান। আয়োজনজুড়ে ছিল বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যনির্ভর নানা তথ্য।
‘ভালো কাজের হালখাতা’র বোর্ডের দুই পাশে দুটি খালি জায়গা রাখা ছিল। খালি জায়গার বাঁ পাশে লেখা ছিল ‘যাহা পাইতে চাই’ আর ডান পাশে লেখা ছিল ‘যাহা হারাতে চাই’, যেখানে দর্শনার্থীরা নিজেদের মতো করে নতুন বছরে পেতে চাওয়া এবং হারাতে চাওয়ার কথা লিখেছেন। হরেক রকম চাওয়া-পাওয়ার লেখা নানা ধরনের রঙের কালিতে ভিন্ন মাত্রা দেয় ‘ভালো কাজের হালখাতা’র বোর্ডটিকে।
‘যাহা পাইতে চাই’ স্থানে অনেকে লিখেছেন নিজেদের মনের কথা। কেউ লিখেছেন ‘নতুন বছরে বউ চাই, মিষ্টি একটা বউ চাই’, আবার কেউ লিখেছেন, ‘বউ হতে চাই’। সবার চাওয়া শুধু বউ চাওয়া আর বউ হতে চাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। অনেকে চেয়েছেন ‘বিবাহ ভাতা’। আবার অনেকে লিখেছেন ‘আমার প্রিয়তমাকে চাই’, ‘বউয়ের ফ্যাসিবাদ মুক্ত যাক’, ‘পুরুষের অধিকার সুনিশ্চিত চাই’।
নতুন বছরে চাওয়া গড়িয়েছে রাজনৈতিক বিষয়েও। একজন লিখেছেন, ‘নির্বাচন চাই’, আরেকজন লিখেছেন, ‘ড.
আবার কেউ কেউ লিখেছেন, ‘দেশে শান্তি চাই’, ‘গরিবের পেটে ভাত আর মাথায় একটা ছাদ চাই’, ‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই, পরিবেশদূষণ বন্ধ চাই’, ‘নদীদূষণ বন্ধ চাই’, ‘সৎ লোকের শাসনব্যবস্থা চাই’, ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই’।
‘যা হারাতে চাই’-এর জায়গায় চোখ বুলালে ব্যতিক্রম অনেক কিছু দেখা যায়। কেউ লিখেছেন ‘বেকারত্ব হারাতে চাই’, আবার কেউ লিখেছেন, ‘বর্তমানকে হারাতে চাই’। কেউ একজন লিখেছেন, ‘সকল রাগ ও দুঃখ এবং ভাব দেখানো মানুষদের হারাতে চাই’।
এখানেও রাজনীতির কথা উঠে এসেছে। কেউ লিখেছেন, ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি হারাতে চাই’, আবার কেউ লিখেছেন, ‘ভারতের আধিপত্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই’। আবার কেউ কেউ লিখেছেন, ‘চাঁদাবাজি, টেম্পোস্ট্যান্ড বন্ধ চাই’, ‘বালি আর মাটিখোরদের হারাতে চাই’।
কেন এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন ছিল, তা নিয়ে সেন্টার ফর বেঙ্গল স্টাডিজের মুখপাত্র আশিক খানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘হালখাতা আমাদের গ্রামবাংলার একটি ঐতিহ্য। ক্যাম্পাসে তো আমরা হালখাতা করতে পারব না, সে জন্য আমাদের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন “ভালো কাজের হালখাতা” রেখেছি।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫