তুচ্ছ ঘটনার জেরে এনসিপি–বিএনপির সংঘর্ষ, ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 15th, April 2025 GMT
রাজধানীর রূপনগরে তুচ্ছ ঘটনার জেরে সংঘর্ষে জড়িয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সোমবার রাতের এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে ২১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৫০–৬০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকাম্মেল হক সমকালকে বলেন, মিরপুরের বিইউবিটির এক ছাত্রীর সঙ্গে উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অনিকের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তরুণী তার এক সহপাঠী আশিকের সহায়তা চান। এরপর সোমবার রাত ৮টার দিকে তরুণী রূপনগর আবাসিক এলাকার ১২ নম্বর সড়কের ঝিলপাড় এলাকায় তার প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে যান। ওই সময় আশিক সেখানে উপস্থিত হয়ে অনিককে গালমন্দ করেন। এ নিয়ে দুজন বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়ান।
ওসি আরও বলেন, আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে মারধরের কারণ জানতে চাইলে তাদের সঙ্গেও বিতণ্ডায় জড়ান আশিক। একপর্যায়ে রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক টুটুল মিয়াসহ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হন। অন্যদিকে খবর পেয়ে আশিকের পক্ষের লোকজনও সেখানে যান। এ সময় ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে করা মামলার আসামিরা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।
এদিকে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে শেখ মাহিন আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
এজাহারে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কর্মী অনিককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য থানায় সংবাদ দেয়। ওই সময় টুটুল মিয়াসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৫০–৬০ জন এসে ছাত্রলীগ কর্মীকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে টুটুলসহ তার লোকজনের কথা কাটাকাটি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আমি সেখানে উপস্থিত হই। তখন টুটুল আমাকে দেখে বলেন, এটাই সেই মাহিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এরপর তারা লাঠিসোঁটা, ধারালো চাকু, রাম দা, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প নিয়ে আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে আমাকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে। আমাকে রক্ষার জন্য অন্যরা এগিয়ে গেলে তাদেরও মারধর ও ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মারধর ও ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার পর দুই পক্ষই মিছিল নিয়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে থানার সামনে জড়ো হয়। এ নিয়ে দীর্ঘ সময় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প ব এনপ র ন ত কর ম র পনগর ম রধর এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
আমরা একটি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পে জড়িয়ে গেছি
সমকাল : চামড়া খাতে দীর্ঘদিনের সমস্যা। এটি কেন?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আইনজীবী আদালতে জানান, সাভারে চামড়া শিল্পনগরী সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হওয়ার পরও ট্যানারি মালিকরা হাজারীবাগ থেকে যেতে চাচ্ছেন না। এমন মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে মহামান্য হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দেন যে ট্যানারি সাভারে করতে হবে। একই সঙ্গে হাজারীবাগের ট্যানারিতে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার আদেশ দেন। এতে ট্যানারি মালিকরা সাভারে যেতে বাধ্য হন। সেখানে গিয়ে দেখি, কোনো অবকাঠামো প্রস্তুত হয়নি। সিইটিপি হয়নি, রাস্তাঘাট ছিল না। তখন থেকে চামড়া খাতে ব্যাপক সমস্যা শুরু হয়। উদ্যোক্তারা বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে সাভারে কারখানা করেছেন। এখনও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট-সিইটিপির সমস্যা রয়েই গেছে। এদিকে কয়েক বছর আগে থেকেই চামড়া প্রস্তুতের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিকভাবে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদপ্রাপ্ত না হলে ভালো কোনো গ্রাহক আমাদের চামড়া কিনছে না। ইতালিসহ বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশ থেকে চামড়া কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের জুতা কোম্পানিগুলোকেও ক্রেতারা বলে দিয়েছে, তারা যদি এলডব্লিউজি সনদ ছাড়া প্রতিষ্ঠান থেকে চামড়া কেনে, তাহলে তাদের জুতা কিনবে না। ইতোমধ্যে ট্যানারি মালিকরা অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। অথচ সরকার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিইটিপি প্রস্তুত করছে না। সার্বিকভাবে আগে যে চামড়া ট্যানারি মালিকরা দেড় হাজার টাকায় কিনতেন, এখন তা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় কিনলেও প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে লোকসান করছেন। এভাবে ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়ে ৩০ থেকে ৪০ জন ট্যানারি মালিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখন আমরা একটি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পে জড়িয়ে গেছি।
সমকাল : চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের ফলে এ খাতের উন্নতি হওয়ার কথা। হচ্ছে না কেন?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : সাভারে শিল্পনগরীর সিইটিপির মানোন্নয়ন, কঠিন বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত এবং ট্যানারির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ উন্নত করা দরকার। অসম্পূর্ণ শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের কারণে ট্যানারির আগের ভাবমূর্তি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তরল বর্জ্য শোধনের জন্য নির্মিত সিইটিপি ত্রুটিপূর্ণ ও প্রয়োজনের তুলনায় কম সক্ষমতার। কঠিন বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। ফলে কমপ্লায়েন্স হতে পারছে না ট্যানারি।
সমকাল : এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ সরকারের ভুলের কারণে চামড়াশিল্প বর্তমান অবস্থায় এসেছে। এ শিল্পকে নীতিসহায়তা দিতে হবে। সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে, সাভার চামড়া শিল্পনগরী উন্নয়ন ছিল ত্রুটিপূর্ণ। যারা এ অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন শিল্প উপদেষ্টা। সবার আগে সাভার ট্যানারিশিল্পের অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। সিইটিপি পুরোপুরি প্রস্তুত করতে হবে। শুধু এসব করলেই হবে না; কারণ এসব ভুলের কারণে উদ্যোক্তারা গত সাত বছর লোকসান করেছেন, উদ্যোক্তাদের ক্ষতি পূষিয়ে দিতে হবে।
সমকাল : সরকারের কী কী নীতি সহায়তা চান?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : নানা কারণে ট্যানারিগুলো অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। সংকট সমাধানে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। উদ্যোক্তাদের স্বল্পমেয়াদি ঋণকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর করতে হবে। ঋণখেলাপি এবং ঋণখেলাপির দ্বারপ্রান্তে উপনীত উদ্যোক্তাদের ঋণ পুনঃতপশিল করতে হবে। হাজারীবাগের জমিগুলোর সদ্ব্যব্যহার ত্বরান্বিত করে উদ্যোক্তাদের আর্থিক সংকট মেটানো দরকার।
সমকাল : কোরবানির চামড়ার দাম না পাওয়ার কারণ হিসেবে ট্যানারি মালিকদের এক ধরনের সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায়। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলেই বলে থাকেন, সিন্ডিকেট আমাকে শেষ করে দিল। প্রকৃত অর্থে ১৫০ ট্যানারি মালিক ৬৮ হাজার গ্রাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তিন থেকে চার হাত বদল হয়ে চামড়া ট্যানারিতে আসে। ট্যানারি মালিক চামড়ার মান যাচাই করার পর দাম নির্ধারণ করেন। চামড়া ভালো থাকলে সর্বোচ্চ দাম ধরা হয়। পচন ধরলে স্বাভাবিকভাবেই দাম কম হবে। তাই ঠিকমতো লবণ দিয়ে চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। যে ব্যক্তি কোরবানি দেবেন, প্রাথমিকভাবে তাকেই লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে। এ জন্য বাড়তি খুব বেশি খরচ হবে না।
সমকাল : সিইটিপি সংস্কার হলেই কি সব ট্যানারি এলডব্লিউজি সনদ পাবে?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : সিইটিপি সংস্কার হলেই ৩০ থেকে ৪০টি ট্যানারি এলডব্লিউজি সনদ পাওয়ার যোগ্য হবে। একই সঙ্গে ছোট ট্যানারিগুলোর জন্য আলাদা আলাদা ক্লাস্টার করে কমপ্লায়েন্স উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
সমকাল : চামড়া ও চামড়াজাতপণ্যের রপ্তানিতে আমরা পিছিয়ে কেন?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে পণ্যের গুণগত মান একটি বড় নিয়ামক। ট্যানারিগুলোর এলডব্লিউজি সনদ পেতে উৎপাদন প্রক্রিয়া, পরিবেশ সুরক্ষা, কাঁচামালের উৎস, সামাজিক দায়বদ্ধতা, শ্রমিক অধিকার ও পরিচ্ছন্ন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করাসহ বহুবিধ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। মানদণ্ড অর্জন করতে একদিকে যেমন বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন, অন্যদিকে দরকার এসব বিষয়ে উত্তম চর্চা।
সমকাল : রপ্তানি আয় বাড়াতে আপনার পরামর্শ কী?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : বিশ্ববাজারে দর পতনের কারণে আগের চেয়ে বেশি চামড়া রপ্তানি করলেও আয় কম। ফলে রপ্তানি আয় কয়েক বছর ধরে প্রায় একই রকম থাকছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে, কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা। কমপ্লায়েন্ট না হওয়ার কারণে ইউরোপের বাজার আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। একই কারণে আমাদের চামড়াজাতপণ্য কিনতে বিখ্যাত ক্রেতারা আগ্রহ দেখায় না কিংবা অত্যন্ত কম দাম অফার করে। তাই ট্যানারিগুলোকে কমপ্লায়েন্ট করা সবচেয়ে জরুরি।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেসবাহুল হক