সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি: ক্রেতা-বিক্রেতার অস্বস্তি, প্রত্যাহার দাবি
Published: 15th, April 2025 GMT
ব্যবসায়ীদের দেনদরবারের মুখে সরকার সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে; মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবিও উঠেছে।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের বৈঠকের পর সয়াবিন তেল ও পাম তেলের নতুন দাম ঘোষণা করা হয়।
বৈঠকের পর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা ও পাম তেলের দাম ১২ টাকা বেড়েছে। নতুন দাম অনুসারে, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে খরচ করতে হবে ১৮৯ টাকা, আগে যা ছিল ১৭৫ টাকা। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের নতুন ৯২২ টাকা, আগে যা ছিল ৮৫২ টাকা।
আরো পড়ুন:
ব্যবসা শুরু করতে ব্যর্থ এসকিউ ব্রোকারের বিরুদ্ধে তদন্তে কমিটি
সূচকের পতন, কমেছে শেয়ারদর
বোতলজাত তেলের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম হয়েছে লিটারপ্রতি ১৬৯ টাকা, আগে যা ছিল ১৫৭ টাকা।
ব্যবসায়ীদের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বির্ধত দাম কার্যকর ধরা হয়েছে ১৩ এপ্রিল থেকেই। মঙ্গলবার তা সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছে তারা।
ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর ঢাকার কারওয়ান বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা হলে তারা অস্বস্তি প্রকাশ করেন।
কারওয়ান বাজারে নিজের বাসার জন্য সয়াবিন তেল কিনতে আসা নোমান হাসান রাইজিংবিডি ডকমকে বলেন, “আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সবসময় নিজেদের দিকটা দেখেন। তারা সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বিষয়টা দেখেন না। এক বছরে যদি দুইবার এত বেশি তেলের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ কীভাবে জীবন চালাবে?”
“সরকার ব্যবসায়ীদের কাছে সহায় হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা মানবিক না হলে এই সমস্যার সমাধান বাংলাদেশে কখনো সম্ভব না,” বলেন নোমান হাসান।
কারওয়ানবাজারে সয়াবিন তেল কিনতে আসা আরেক ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী মো.
“এই যে এখন সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা বেড়েছে, সেটা আমাদের মতো মানুষের জন্য জুলুম ছাড়া আর কিছুই না। এখন তো বাজারে চাইলে এক লিটারে ও ২ লিটারের সয়াবিন তেল পাওয়া যায় না। বিক্রেতারা বলেন, ভাই অন্য কিছু পণ্য নেন। ভোক্তা অধিকার অফিসাররা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তাদের উচিত আরো বেশি তদারকি চালানো,” ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন সানি।
২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছিল সরকার। প্রায় চার মাসের ব্যবধানে আবার দাম বৃদ্ধির খবরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন কারওয়ান বাজারের বাবুল জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী বাবুল শিকদার।
কথা হলে রাইজিংবিডি ডটকমকে বাবুল শিকদার বলেন, “এবার সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা বাড়ানো এ ধরনের জুলুম হয়েছে। কারণ ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি ডিল করতে হয়। এবার দাম বাড়ানোর আগে ডিলাররা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা চাহিদা মতো অর্ডার দিয়ে তেল পাচ্ছি না। তেলের দাম বাড়ানো ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাত নেই।”
“এখন ক্রেতারা এলে নতুন দাম বললে আমরা তাদের কাছ থেকে মন্দ কথা শুনি। সরকার অনেক চেষ্টা করছে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার, কিন্তু বড় বড় কোম্পানিরা মিলে এবার তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য করেছে,” বলেন বাবুল শিকদার।
সয়াবিন তেল কিনতে হলে বাড়তি অন্য পণ্য কেনা লাগে- ক্রেতাদের এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের আরেকজন মুদি ব্যবসায়ী নাসিম হাওলাদার বলেন, “সয়াবিন থেকে আমাদেরকে ডিলাররা সামান্য লাভ দিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে আমাদের পরিবহন খরচ দিয়ে লাভ করার কোনো সুযোগ নেই। তাই সয়াবিন তেলে লোকসান দিতে হলে অন্য যে পণ্য রয়েছে, তা থেকে দুই এক টাকা লাভ করে আমাদের পোষাতে হয়।”
তিনি আরো বলেন, “তবে ক্রেতাদের এমন ঢালাও অভিযোগ ঠিক না। সব সময় বিক্রেতারা এ রকম করেন না। যখন সয়াবিন তেলের সাথে অন্য পণ্য ডিলাররা আমাদেরকে ধরিয়ে দেয়, তখন আমরাও ক্রেতাদের অনুরোধ করি যে আর কোনো পণ্য লাগবে কি না, লাগলে নিতে পারেন।”
সয়াবিন তেলের শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার বলেছেন, “চলতি মাসের শুরু থেকে প্রতি লিটারে তেলের ওপর ২০-২১ টাকা করে ভ্যাট দিয়ে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। ঈদের পর এখনো ওইভাবে চাহিদা তৈরি হয়নি। পণ্য সরবরাহ ঠিক আছে।”
বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার দাবি জামায়াতের
বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে ১৪ টাকা এবং শিল্পের গ্যাসে প্রতি ইউনিটে ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক দাবি করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহ্বান রেখেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “গ্রাহক পর্যায়ে সয়াবিন তেলের মূল্য লিটার প্রতি ১৪ টাকা এবং নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেছে, তা অযৌক্তিক। নতুন শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে নতুন শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের মূল্য এখন ৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নতুন শিল্প উদ্যোক্তাদের আশাহত করেছে।”
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পরে দেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস বইছে। দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যেও আশার সঞ্চার হয়েছে। বিগত সরকারের শাসনামলে শিল্পবান্ধব পরিবেশ না থাকায় নতুন শিল্প গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে অনেকেই নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এমতাবস্থায় নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকারের অপরিণামদর্শিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এতে নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবে। তাই নতুন শিল্প বিকাশের স্বার্থে সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত।”
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৪ টাকা বৃদ্ধির সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে দরিদ্র জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। সয়াবিন তেল সাধারণত দরিদ্র জনগণই রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকে। গ্যাসের এই মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগের কারণ হবে। কাজেই সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরকারকে সরে আসা উচিত।’
“দেশে নতুন শিল্প বিকাশের স্বার্থে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ এবং সয়াবিন তেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৪ টাকা বৃদ্ধির অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য আমরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি,” বলেন তিনি।
মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার দাবি এনসিপির
হঠাৎ ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে দাম জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-িএনসিপি।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাতের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “গণমাধ্যম মারফত আমরা জানতে পেরেছি যে, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও, গত কয়েকদিন ধরে বাজারে চালের দামেও বেশ অস্থিতিশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছে; যা জনদুর্ভোগ তৈরি করছে।”
“লক্ষণীয় যে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিগত রমজান মাস থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও শাক-সবজির দাম স্থিতিশীল থাকায় জনমনে স্বস্তি বিরাজ করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে এমন মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে সৃষ্ট জনদুর্ভোগকে আরো বেশি ত্বরান্বিত করবে বলে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি মনে করে। ফলে আমরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। ফলত, হঠাৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি তাদের দৈনন্দিন জীবনে চাপ তৈরি করছে। আমরা মনে করি, শুধু ব্যবসায়ীদের দাবিতে নয়, বরং ভোক্তা সংগঠন ও শ্রমজীবী নাগরিকের মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণই হবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও ন্যায্য।”
“এমতাবস্থায় জনস্বার্থে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি সরকারকে চাল ও ভোজ্যতেলসহ যাবতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নির্ধারণে ভোক্তাদের অভিমত ও অধিকার-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানায় এবং পাশাপাশি, এই হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি পুনর্বিবেচনা করে চাল ও ভোজ্যতেলের দাম জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতায় আনার জোর দাবি জানাই।”
ঢাকা/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন ত ল ক নত ব যবস য় দ র নত ন শ ল প ভ জ যত ল নত ন দ ম ল র নত ন সরক র র ব যবস য আম দ র ১৪ ট ক এনস প ক ষমত ইউন ট
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।