ব্যবসায়ীদের দেনদরবারের মুখে সরকার সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে; মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবিও উঠেছে।
 
সচিবালয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের বৈঠকের পর সয়াবিন তেল ও পাম তেলের নতুন দাম ঘোষণা করা হয়। 

বৈঠকের পর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। 

সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা ও পাম তেলের দাম ১২ টাকা বেড়েছে। নতুন দাম অনুসারে, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে খরচ করতে হবে ১৮৯ টাকা, আগে যা ছিল ১৭৫ টাকা। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের নতুন ৯২২ টাকা, আগে যা ছিল ৮৫২ টাকা।

আরো পড়ুন:

ব্যবসা শুরু করতে ব্যর্থ এসকিউ ব্রোকারের বিরুদ্ধে তদন্তে কমিটি

সূচকের পতন, কমেছে শেয়ারদর

বোতলজাত তেলের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম হয়েছে লিটারপ্রতি ১৬৯ টাকা, আগে যা ছিল ১৫৭ টাকা।

ব্যবসায়ীদের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বির্ধত দাম কার্যকর ধরা হয়েছে ১৩ এপ্রিল থেকেই। মঙ্গলবার তা সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছে তারা।

ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর ঢাকার কারওয়ান বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা হলে তারা অস্বস্তি প্রকাশ করেন।

কারওয়ান বাজারে নিজের বাসার জন্য সয়াবিন তেল কিনতে আসা নোমান হাসান রাইজিংবিডি ডকমকে বলেন, “আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সবসময় নিজেদের দিকটা দেখেন। তারা সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বিষয়টা দেখেন না। এক বছরে যদি দুইবার এত বেশি তেলের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ কীভাবে জীবন চালাবে?”

“সরকার ব্যবসায়ীদের কাছে সহায় হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা মানবিক না হলে এই সমস্যার সমাধান বাংলাদেশে কখনো সম্ভব না,” বলেন নোমান হাসান।

কারওয়ানবাজারে সয়াবিন তেল কিনতে আসা আরেক ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী মো.

সানিউল হক সানি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা যারা বেসরকারি চাকরিজীবী রয়েছি তাদের বেতন তো ঠিকমতো বাড়ে না। কিন্তু ঠিকই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। 

“এই যে এখন সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা বেড়েছে, সেটা আমাদের মতো মানুষের জন্য জুলুম ছাড়া আর কিছুই না। এখন তো বাজারে চাইলে এক লিটারে ও ২ লিটারের সয়াবিন তেল পাওয়া যায় না। বিক্রেতারা বলেন, ভাই অন্য কিছু পণ্য নেন। ভোক্তা অধিকার অফিসাররা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তাদের উচিত আরো বেশি তদারকি চালানো,” ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন সানি।

২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছিল সরকার। প্রায় চার মাসের ব্যবধানে আবার দাম বৃদ্ধির খবরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন কারওয়ান বাজারের বাবুল জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী বাবুল শিকদার।

কথা হলে রাইজিংবিডি ডটকমকে বাবুল শিকদার বলেন, “এবার সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা বাড়ানো এ ধরনের জুলুম হয়েছে। কারণ ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি ডিল করতে হয়। এবার দাম বাড়ানোর আগে ডিলাররা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা চাহিদা মতো অর্ডার দিয়ে তেল পাচ্ছি না। তেলের দাম বাড়ানো ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাত নেই।”

“এখন ক্রেতারা এলে নতুন দাম বললে আমরা তাদের কাছ থেকে মন্দ কথা শুনি। সরকার অনেক চেষ্টা করছে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার, কিন্তু বড় বড় কোম্পানিরা মিলে এবার তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য করেছে,” বলেন বাবুল শিকদার।  

সয়াবিন তেল কিনতে হলে বাড়তি অন্য পণ্য কেনা লাগে- ক্রেতাদের এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের আরেকজন মুদি ব্যবসায়ী নাসিম হাওলাদার বলেন, “সয়াবিন থেকে আমাদেরকে ডিলাররা সামান্য লাভ দিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে আমাদের পরিবহন খরচ দিয়ে লাভ করার কোনো সুযোগ নেই। তাই  সয়াবিন তেলে লোকসান দিতে হলে অন্য যে পণ্য রয়েছে, তা থেকে দুই এক টাকা লাভ করে আমাদের পোষাতে হয়।”

তিনি আরো বলেন, “তবে ক্রেতাদের এমন ঢালাও অভিযোগ ঠিক না। সব সময় বিক্রেতারা এ রকম করেন না। যখন সয়াবিন তেলের সাথে অন্য পণ্য ডিলাররা আমাদেরকে ধরিয়ে দেয়, তখন আমরাও ক্রেতাদের অনুরোধ করি যে আর কোনো পণ্য লাগবে কি না, লাগলে নিতে পারেন।”

সয়াবিন তেলের শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার বলেছেন, “চলতি মাসের শুরু থেকে প্রতি লিটারে তেলের ওপর ২০-২১ টাকা করে ভ্যাট দিয়ে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। ঈদের পর এখনো ওইভাবে চাহিদা তৈরি হয়নি। পণ্য সরবরাহ ঠিক আছে।”

বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার দাবি জামায়াতের
বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে ১৪ টাকা এবং শিল্পের গ্যাসে প্রতি ইউনিটে ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক দাবি করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহ্বান রেখেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “গ্রাহক পর্যায়ে সয়াবিন তেলের মূল্য লিটার প্রতি ১৪ টাকা এবং নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেছে, তা অযৌক্তিক। নতুন শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে নতুন শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের মূল্য এখন ৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নতুন শিল্প উদ্যোক্তাদের আশাহত করেছে।”

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পরে দেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস বইছে। দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যেও আশার সঞ্চার হয়েছে। বিগত সরকারের শাসনামলে শিল্পবান্ধব পরিবেশ না থাকায় নতুন শিল্প গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে অনেকেই নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এমতাবস্থায় নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকারের অপরিণামদর্শিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এতে নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবে। তাই নতুন শিল্প বিকাশের স্বার্থে সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত।”

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার  বলেন, “সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৪ টাকা বৃদ্ধির সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে দরিদ্র জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। সয়াবিন তেল সাধারণত দরিদ্র জনগণই রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকে। গ্যাসের এই মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগের কারণ হবে। কাজেই সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরকারকে সরে আসা উচিত।’

“দেশে নতুন শিল্প বিকাশের স্বার্থে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ এবং সয়াবিন তেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৪ টাকা বৃদ্ধির অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য আমরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি,” বলেন তিনি।

মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার দাবি এনসিপির
হঠাৎ ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে দাম জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-িএনসিপি।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাতের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “গণমাধ্যম মারফত আমরা জানতে পেরেছি যে, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও, গত কয়েকদিন ধরে বাজারে চালের দামেও বেশ অস্থিতিশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছে; যা জনদুর্ভোগ তৈরি করছে।”

“লক্ষণীয় যে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিগত রমজান মাস থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও শাক-সবজির দাম স্থিতিশীল থাকায় জনমনে স্বস্তি বিরাজ করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে এমন মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে সৃষ্ট জনদুর্ভোগকে আরো বেশি ত্বরান্বিত করবে বলে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি মনে করে। ফলে আমরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। ফলত, হঠাৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি তাদের দৈনন্দিন জীবনে চাপ তৈরি করছে। আমরা মনে করি, শুধু ব্যবসায়ীদের দাবিতে নয়, বরং ভোক্তা সংগঠন ও শ্রমজীবী নাগরিকের মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণই হবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও ন্যায্য।”

“এমতাবস্থায় জনস্বার্থে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি সরকারকে চাল ও ভোজ্যতেলসহ যাবতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নির্ধারণে ভোক্তাদের অভিমত ও অধিকার-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানায় এবং পাশাপাশি, এই হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি পুনর্বিবেচনা করে চাল ও ভোজ্যতেলের দাম জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতায় আনার জোর দাবি জানাই।”

ঢাকা/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন ত ল ক নত ব যবস য় দ র নত ন শ ল প ভ জ যত ল নত ন দ ম ল র নত ন সরক র র ব যবস য আম দ র ১৪ ট ক এনস প ক ষমত ইউন ট

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ