বর্ষবরণ উৎসবে বাধা, উদীচীর প্রতিবাদ
Published: 16th, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম, বরিশাল, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলা বর্ষবরণ আয়োজনে বিঘ্ন ঘটানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। একই সঙ্গে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেছে সংগঠনটি।
উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বর্ষবরণ উৎসবকে ব্যাহত করার প্রতিবাদ ও জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।
বিবৃতিতে উদীচীর নেতারা বলেন, চট্টগ্রামের ডিসি হিলে অর্ধশতাব্দী ধরে বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করা হয়। এ বছর সেই আয়োজনের অনুমতি দিতে দুই মাস ধরে টালবাহানা করেছিল প্রশাসন। আয়োজনের দুই দিন আগে অনুমতি দিলেও সেখানে কী কী গান–কবিতা পরিবেশিত হবে, সে তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। শুধু তা–ই নয়, ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ অভিযোগ তুলে উদীচীসহ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সবচেয়ে সক্রিয় প্রায় ২০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে মঞ্চে উঠতে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় পয়লা বৈশাখের আগের দিন রীতিমতো মিছিল করে অনুষ্ঠানের মঞ্চ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ষবরণ আয়োজন বন্ধ করতে বাধ্য হন আয়োজকেরা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ বছর বগুড়াতেও বর্ষবরণ আয়োজনে বাধা দেওয়া হয়েছে। উদীচীসহ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘দিন বদলের মঞ্চ’ ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রশাসন বাধা দেয়। পরে অনুমতি দিলেও নানাভাবে আয়োজন সীমিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়। নববর্ষের দিন অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে গান–আবৃত্তি করা নিয়ে নানা ধরনের ফতোয়া দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া বরিশালে উদীচীসহ কয়েকটি সংগঠনের আয়োজনে বৈশাখী মেলাকেও নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়। খোদ রাজধানীতে হুমকির মুখে বাতিল করা হয় নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজিত ‘শেষের কবিতা’ নাটকের প্রদর্শনী।
উদীচীর নেতারা বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অভূতপূর্ব গণ–অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় ঘটিয়েছিলেন ছাত্র-জনতা। আট মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এখনো বাংলা বর্ষবরণ বা বসন্ত উৎসবের মতো অসাম্প্রদায়িক আয়োজন এবং প্রগতিশীল সংস্কৃতিচর্চায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। শিল্পীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এসব প্রতিরোধ করতে না পারার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’