আউটসোর্সিং নীতিমালা জারি: ঈদ-বৈশাখে প্রণোদনা, মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন নারীরা
Published: 15th, April 2025 GMT
আউটসোর্সিং সেবা কর্মীদের জন্য ‘সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০২৫’ জারি করা হয়েছে। সরকারের জারি করা নীতিমালায় বছরে দুটি উৎসবে (ঈদ) এক মাসের সেবামূল্যের অর্ধেক হারে উৎসব প্রণোদনা পাবেন কর্মীরা। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বৈশাখী প্রণোদনা পাবেন মাসিক সেবামূল্যের এক-পঞ্চমাংশ হারে। বছরে ১৫ দিনের ছুটি পাবেন কর্মীরা। নারী কর্মীদের জন্য ৪৫ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং নারীবান্ধব কাজে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা আছে নীতিমালায়। আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) নববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এই নীতিমালা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ।
আরও পড়ুনপল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনে বড় নিয়োগ, আবেদন করেছেন কি, পদ ৩৩৫৮ ঘণ্টা আগেনতুন এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো—আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা এবং একই সঙ্গে সেবা কর্মীদের উৎসাহিত করা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন নীতিমালায় পাঁচটি সাধারণ ক্যাটাগরি এবং তিনটি বিশেষ সেবার মাসিক সেবামূল্য বাড়ানো হয়েছে। প্রতি অর্থবছরে প্রতিটি সেবাকর্মীকে দুটি করে ইউনিফর্ম সরবরাহ করা হবে এবং দায়িত্ব পালনের সময় তা পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে তাদের মৌলিক কাজের বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। সেবাকর্মীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে নীতিমালায়। তাদের জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে।
আরও পড়ুনমাদ্রাসা ও কারিগরির শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা পাবেন অনুদান, আবেদনের সময় আরও ১০ দিন১৪ এপ্রিল ২০২৫সেবামূল্য সরাসরি কর্মীর নিজস্ব ব্যাংক হিসাব অথবা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)-এর মাধ্যমে দেওয়া হবে। এবং মাসিক সেবামূল্য পরিশোধ করা হবে কর্মকালীন মাসের পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহেই। নীতিমালায় বলা হয়েছে, সেবাকর্মীদের সেবামূল্য ও প্রণোদনার পরিমাণ অর্থ বিভাগের সময়োপযোগী নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। নির্ধারিত সেবাঘণ্টাকে সেবা সময় হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তবে সেবা ক্রয়কারীর চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত সেবার প্রয়োজন হলে, অর্থ বিভাগের সম্মতিক্রমে চুক্তিভিত্তিক অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন ইউজিসিতে শূন্য পদে নিয়োগ, ৬ পদে নেবে ২৫ জন৩ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।