Prothomalo:
2025-05-01@09:25:02 GMT

হাঙর কতটা ভয়ানক

Published: 16th, April 2025 GMT

স্টিভেন স্পিলবার্গের বিখ্যাত ‘জস’–এর মতো সিনেমায় হাঙরকে রক্তপিপাসু দানব হিসেবে দেখেছেন অনেকেই। নিজের চোখে না দেখলেও বিভিন্ন সিনেমা ও কল্পকাহিনির কারণে যুগ যুগ ধরে হাঙর সম্পর্কে মানুষের মনে ভীতি জন্মেছে। তবে আসলেই কি হাঙর ভয়ানক?

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেন সার্ভিসের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বাস্তবে হাঙর সিনেমার মতো অতটা ভয়ানক নয়। হাঙর অন্যান্য শিকারি মাছের মতোই নিজের খাদ্যের চাহিদা মেটায়। আকারে বড়, শক্তিশালী চোয়ালের কারণে হাঙর বেশ ভয়ংকর প্রাণী। পৃথিবীতে প্রায় ৪০০টিরও বেশি প্রজাতির হাঙর রয়েছে। যদিও এদের মধ্যে মাত্র কয়েক প্রজাতির মানুষকে আক্রমণের নজির রয়েছে। গ্রেট হোয়াইট, বুল শার্ক ও টাইগার শার্ক মানুষকে আক্রমণ করার জন্য বেশি পরিচিত। সাধারণ পরিসংখ্যান বলছে, হাঙরের আক্রমণের কারণে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা অন্য অনেক প্রাণীর তুলনায় বেশ কম।

আরও পড়ুনহাঙরসহ সামুদ্রিক প্রাণীর সংখ্যা দ্রুত কমছে, কারণ কী২১ ডিসেম্বর ২০২৪

হাঙরের হিংস্রতা মূলত তাদের শিকারের আচরণের ওপর নির্ভরশীল। হাঙর দক্ষ শিকারি ও শিকার ধরার কৌশল প্রজাতিভেদে ভিন্ন হয়। কিছু হাঙর দ্রুতগতিতে আক্রমণ করে। আবার কোনো কোনো প্রজাতি ওত পেতে থাকে। হাঙরের ঘ্রাণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। এরা দূর থেকে অন্য প্রাণীর উপস্থিতি বা রক্তের গন্ধ বুঝতে পারে। যদিও এর মানে এই নয় যে হাঙর রক্ত দেখলেই উন্মত্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাঙরের শিকারের তালিকায় মানুষ নেই। সাধারণভাবে মানুষকে স্বাভাবিক শিকার হিসেবে দেখে না হাঙর। হাঙর অনেক সময় ভুল করে মানুষকে আক্রমণ করে। অনেক সময় হাঙর সার্ফার বা সাঁতার কাটা মানুষকে সিল বা কচ্ছপের মতো শিকার ভেবে ভুল করে আক্রমণ করে। কোনো কারণে হাঙর কোণঠাসা বা ভয় অনুভব করলে আত্মরক্ষার জন্য আক্রমণ করে।

হাঙরের খাদ্যাভ্যাস প্রজাতিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। ছোট হাঙর সাধারণত ছোট মাছ, কাঁকড়া ও বিভিন্ন সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী খায়। বড় হাঙর সিল, ডলফিন, বড় মাছ এমনকি মৃত তিমিও আহার করে। হ্যামারহেড হাঙর সামুদ্রিক ঘাস খায়।

সূত্র: বিবিসি ও ন্যাশনাল ওশেন সার্ভিসেস

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা

দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।

সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।

দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক 

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন  কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন। 

কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।” 

গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।” 

একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”

সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।” 

সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”

পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”

বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।

ঢাকা/মাসুম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ