স্টিভেন স্পিলবার্গের বিখ্যাত ‘জস’–এর মতো সিনেমায় হাঙরকে রক্তপিপাসু দানব হিসেবে দেখেছেন অনেকেই। নিজের চোখে না দেখলেও বিভিন্ন সিনেমা ও কল্পকাহিনির কারণে যুগ যুগ ধরে হাঙর সম্পর্কে মানুষের মনে ভীতি জন্মেছে। তবে আসলেই কি হাঙর ভয়ানক?
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেন সার্ভিসের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বাস্তবে হাঙর সিনেমার মতো অতটা ভয়ানক নয়। হাঙর অন্যান্য শিকারি মাছের মতোই নিজের খাদ্যের চাহিদা মেটায়। আকারে বড়, শক্তিশালী চোয়ালের কারণে হাঙর বেশ ভয়ংকর প্রাণী। পৃথিবীতে প্রায় ৪০০টিরও বেশি প্রজাতির হাঙর রয়েছে। যদিও এদের মধ্যে মাত্র কয়েক প্রজাতির মানুষকে আক্রমণের নজির রয়েছে। গ্রেট হোয়াইট, বুল শার্ক ও টাইগার শার্ক মানুষকে আক্রমণ করার জন্য বেশি পরিচিত। সাধারণ পরিসংখ্যান বলছে, হাঙরের আক্রমণের কারণে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা অন্য অনেক প্রাণীর তুলনায় বেশ কম।
আরও পড়ুনহাঙরসহ সামুদ্রিক প্রাণীর সংখ্যা দ্রুত কমছে, কারণ কী২১ ডিসেম্বর ২০২৪হাঙরের হিংস্রতা মূলত তাদের শিকারের আচরণের ওপর নির্ভরশীল। হাঙর দক্ষ শিকারি ও শিকার ধরার কৌশল প্রজাতিভেদে ভিন্ন হয়। কিছু হাঙর দ্রুতগতিতে আক্রমণ করে। আবার কোনো কোনো প্রজাতি ওত পেতে থাকে। হাঙরের ঘ্রাণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। এরা দূর থেকে অন্য প্রাণীর উপস্থিতি বা রক্তের গন্ধ বুঝতে পারে। যদিও এর মানে এই নয় যে হাঙর রক্ত দেখলেই উন্মত্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাঙরের শিকারের তালিকায় মানুষ নেই। সাধারণভাবে মানুষকে স্বাভাবিক শিকার হিসেবে দেখে না হাঙর। হাঙর অনেক সময় ভুল করে মানুষকে আক্রমণ করে। অনেক সময় হাঙর সার্ফার বা সাঁতার কাটা মানুষকে সিল বা কচ্ছপের মতো শিকার ভেবে ভুল করে আক্রমণ করে। কোনো কারণে হাঙর কোণঠাসা বা ভয় অনুভব করলে আত্মরক্ষার জন্য আক্রমণ করে।
হাঙরের খাদ্যাভ্যাস প্রজাতিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। ছোট হাঙর সাধারণত ছোট মাছ, কাঁকড়া ও বিভিন্ন সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী খায়। বড় হাঙর সিল, ডলফিন, বড় মাছ এমনকি মৃত তিমিও আহার করে। হ্যামারহেড হাঙর সামুদ্রিক ঘাস খায়।
সূত্র: বিবিসি ও ন্যাশনাল ওশেন সার্ভিসেস
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।