ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রংপুরে আধাবেলা ধর্মঘট
Published: 16th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে রংপুর মহানগরে দোকান বন্ধ রেখে আধাবেলা ধর্মঘট পালন করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নগরীর সকল বিপণিবিতান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে নগরীর সুপার মার্কেট চত্বরে সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এতে যোগ দিতে ফিলিস্তিনে গণহত্যা বিরোধী নানা ব্যানার ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে জড়ো হন ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও জেলা-মহানগর দোকান মালিক সমিতির যৌথ উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রংপুর চেম্বারের সভাপতি আকবর আলী। বক্তব্য দেন- মহানগর দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানবীর হোসেন আশরাফীসহ অন্য নেতারা।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
হাসপাতালে পবিপ্রবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন
বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনে শিশু, নারী, সাংবাদিক ও নিরীহ মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করে মানবতার বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম অপরাধ করছে ইসরায়েল। এর বিরুদ্ধে বিশ্ব মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোরালো প্রতিবাদ ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। জাতিসংঘকে বর্বরতা বন্ধে দ্রুত হস্তক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
তারা আরো বলেন, বিশ্ব মানবতার ফেরিওয়ালারা আজ নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যখন ফিলিস্তিনে প্রতিদিনই রক্ত ঝরছে। এই ন্যায়বিচারহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে মানবতা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। তাই বিশ্ব মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান তারা।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিনে শহীদদের জন্য দোয়া করেন এবং ইসরাইলি সব পণ্য বয়কটের ডাক দেন।
ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সমুদ্র বাণিজ্যে অশনিসংকেত
ইরান-ইসরায়েলের সংঘাত তীব্র হতে থাকায় সমুদ্র বাণিজ্যের আকাশে মেঘ জমেছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ তালিকাভুক্ত তেলবাহী ট্যাঙ্কার কোম্পানি ‘ফ্রন্টলাইন’ হরমুজ প্রণালি দিয়ে উপসাগরে নতুন করে জাহাজ পাঠানোর চুক্তি থেকে সরে আসছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় জাহাজ মালিকরা হরমুজ প্রণালি এড়িয়ে চলতে চাইছেন।
আবার বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকাতে গার্মেন্ট পণ্য পাঠাতে জাহাজগুলোকেও ব্যবহার করতে হয় গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথ। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজগুলো রপ্তানি পণ্য কনটেইনার বোঝাই করে এতদিন এই পথে চলাচল করলেও এখন বাধার মুখে পড়ছে তারাও। বাধার মুখোমুখি বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের জাহাজগুলোও। বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তেলের জোগান এবং এক-তৃতীয়াংশ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এই পথ দিয়েই বহন করা হয়। দুবাইয়ের জেবেল আলি বন্দরকেন্দ্রিক কনটেইনার জাহাজ চলাচলেও ব্যবহৃত হয় এই পথ। এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশও মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য পাঠায়।
ফ্রন্টলাইনের প্রধান নির্বাহী লার্স বারস্টাড আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই অঞ্চলে ঢোকার জন্য এখন খুবই কমসংখ্যক মালিক চার্টার নিচ্ছেন, আমরাও না। আমরা নতুন করে উপসাগরে ঢোকার চুক্তি করছি না, এটা এখন আর হচ্ছে না।’ বারস্টাড জানান, ফ্রন্টলাইন কোম্পানির যেসব ট্যাঙ্কার আগে থেকে উপসাগরে অবস্থান করছিল সেগুলো নিরাপত্তা জোরদার করে, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর নিরাপত্তা বহরের সঙ্গে হরমুজ প্রণালি থেকে বের হয়ে আসবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক বোর্ড সদস্য জাফর আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে অনেক জাহাজ এই পথ ধরে ইউরোপ ও আমেরিকাতে যায়। সংঘাতের প্রভাবে এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই যাত্রা। এটির প্রভাব পড়বে চট্টগ্রাম বন্দরে। আর চট্টগ্রাম বন্দরে প্রভাব পড়লে এর ব্যাপকতা ছড়াবে পুরো দেশে।’
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফারোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তা পুরো সমুদ্র বাণিজ্যের জন্য হবে অশনিসংকেত। পণ্য পরিবহন খরচ অনেক গুণ বেড়ে যাবে। বাড়বে বীমার পরিমাণও।’ তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বড় বাজার হলেও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি বাড়ছে। পোশাক রপ্তানির শীর্ষ ১০ নতুন বাজারের দুটি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও সৌদি আরব। গত বছরও এই দুটি দেশে আগের চেয়ে ৪০ শতাংশ পোশাক বেশি রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।
শিপিং মালিকরা খুঁজছেন বিকল্প পথ
হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে বিকল্প পথ হিসেবে লোহিত সাগর ও আরব সাগরের কথা চিন্তা করছেন শিপিং ব্যবসায়ীরা। তখন জাহাজ ভাড়া অনেক বাড়বে। বেড়ে যাবে বীমা খরচও। কারণ লোহিত সাগরপথও ঝুঁকিমুক্ত নয়।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী জানান, ২০২৩ সালের শেষ দিকে লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা শুরু হলে অনেক বড় শিপিং কোম্পানি এশিয়া-ইউরোপের প্রচলিত সুয়েজ খালপথ ছেড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার
উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে বিকল্প পথে যাওয়া শুরু করে। এ জন্য লোহিত সাগর হয়ে মালপত্র পরিবহনের বীমা খরচ তখন ২০ শতাংশ
বেড়ে যায়। হুতি বিদ্রোহীদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, জলদস্যুতা ও অন্যান্য ঝুঁকির কারণে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর জন্য বীমা খরচ তখন এতটাই বাড়ে, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে সেটা আরও বাড়বে।
‘বিপদ’ দেখাচ্ছে অতীত
সমুদ্র বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের ওপর চাপ তৈরি করতে ইরান হরমুজ প্রণালিতে এক ধরনের ‘অঘোষিত অবরোধ’ আরোপ করতে পারে। কারণ ২০২৪ সালের এপ্রিলে উত্তেজনা চলাকালে ইরানের বিপ্লবী গার্ড হরমুজ প্রণালির কাছ থেকে ‘এমএসসি এরিয়াস’ নামে একটি কনটেইনার জাহাজ আটক করে তা ইরানের জলসীমায় নিয়ে যায়। জাহাজটি ছিল ইসরায়েলের ওফার পরিবারের নিয়ন্ত্রিত জোডিয়াক মেরিটাইমের সঙ্গে সংযুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোরটাল শিপিংয়ের মালিকানাধীন।
বাড়বে পণ্য পরিবহন খরচ
ইরান-ইসরায়েলে পাল্টাপাল্টি হামলায় বাংলাদেশের জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে। দেশ দুটির সশস্ত্র হামলার জেরে ইতোমধ্যে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে জাহাজ অনেক দূর ঘুরে বিকল্প পথে আসতে হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই পণ্য পরিবহন খরচ বাড়বে। বাংলাদেশের এই খরচটা বাড়বে ব্যাপকহারে। কারণ আমাদের গার্মেন্ট পণ্য সমুদ্রপথে ইউরোপ ও আমেরিকাতে যায় হরমুজ প্রণালি ধরে।’
তেলের দাম বাড়তে পারে
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়বে দেশেও। লিটার প্রতি দাম কত টাকা পর্যন্ত বাড়ার শঙ্কা রয়েছে তা তিনি এখনই স্পষ্ট করেননি। বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বিবেচনায় এনে দেশে তেলের দাম সমন্বয় করি আমরা। এ জন্য প্রতি মাসে গড় করে মূল্য নির্ধারণ করে থাকি। এখন যে
হারে দাম বাড়ছে তাতে নতুন দর ঠিক করতে হবে। তবে কত টাকা বাড়বে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’ বিশ্ব বাণিজ্যের সর্বশেষ তথ্য নিয়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে। গতকাল পর্যন্ত অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারসের দাম ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বা ৬ দশমিক ২৯ ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম ৭৫ দশমিক ৬৫ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৮ দশমিক ৫০ ডলারে পৌঁছায়। এটি গত ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।