চুয়াডাঙ্গায় সাবেক সমন্বয়ককে মারধরের অভিযোগ
Published: 16th, April 2025 GMT
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবুকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির স্থানীয় এক নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্তের নাম শরিফুল ইসলাম। তিনি গড়াইটুপি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
আজ বুধবার দুপুরে ফেসবুক লাইভে এসে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মেহেদী হাসান খান বাবু। তিনি বলেন, শাহাপুর ক্যাম্পে পুলিশের উপস্থিতিতে আমাকে মারধর করা হয়েছে। গড়াইটুপি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন আমার ওপর হামলা চালায়। ওই সময় আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির লোকজনও উপস্থিত ছিল। আমি কোনো অপরাধ করিনি।
প্রথম লাইভের কিছুক্ষণ পর ফের লাইভে আসেন তিনি। এ সময় বলেন, অনেকেই ফোন করছেন, কিন্তু আমি ধরতে পারছি না। আমি এখনো শাহাপুর ক্যাম্পেই আছি। প্রতিহিংসার কারণে আমার ওপর হামলা হয়েছে। আমি যদি মারা যাই, তাহলে আমার ফেসবুক লাইভে বলা নামগুলোই দায়ী থাকবে। হামলায় গড়াইটুপি ও আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন যুক্ত ছিল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গড়াইটুপি ইউনিয়নের সুজায়েতপুর গ্রামে পাঁচ বিঘার একটি জলাধার নিয়ে মেহেদী হাসান খান বাবুর বাবা মুসা খান ও খালু আবুজার মোল্লার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার মুসা খানের পক্ষে রায় দেয় আদালত। রায় পেয়ে জলাধারের দখল নিতে গেলে প্রতিপক্ষ আবুজার মোল্লা তাতে বাধা দেন।
এই ঘটনায় শাহাপুর ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই মেহেদী হাসান সমঝোতার জন্য বুধবার উভয়পক্ষকে ক্যাম্পে হাজির হতে বলেন। সমঝোতার সময় উভয়পক্ষের কথাবার্তার একপর্যায়ে আবুজার মোল্লার ছেলে ওসমান গনি (২৪), মৃত রইচ উদ্দিন মোল্লার ছেলে আবুজার মোল্লা (৫৭), আবুজার মোল্লার স্ত্রী আকলিমা খাতুন (৪০), মৃত ছাত্তার মন্ডলের ছেলে আব্দুল আলিম (৫৫) ও গড়াইটুপি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামসহ ১০-১৫ সাবেক ওই সমন্বয়ক ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করে।
এ বিষয়ে জানতে শাহাপুর পুলিশ ফাঁড়ির (টুআইসি) উপসহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) মামুন হোসেন বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আমরা বসেছিলাম এবং সেটি মীমাংসাও হয়েছে। বাবু ভাইদের কাগজপত্র সঠিক ছিল। তারা যখন চলে যাচ্ছিলেন, তখন কিছু যুবক হঠাৎ করে তাকে চড় মারেন।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পের আইসি বিষয়টি জীবননগর থানার ওসিকে জানিয়েছেন। আমি নিজে ফোর্স নিয়ে বাবু ভাইকে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছি।
গড়াইটুপি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, শাহপুর পুলিশ ক্যাম্পে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ মীমাংসা চলছিল। সেখানে থাকা অবস্থায় মেহেদী হাসান বিএনপি নিয়ে কটূক্তি করে। ওই সময় বিএনপির লোকজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। তবে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, ঘটনাটি পারিবারিক এবং জমি সংক্রান্ত জের ধরে সংঘটিত হয়েছে। আমার ক্যাম্পের আইসি বিষয়টি সমাধান করে বাবু ভাইকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। এখনও এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে আমরা পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমন বয়ক ম রধর জ বননগর ব এনপ ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।
আরো পড়ুন:
খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’
‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।
মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।
বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’
‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’
ঢাকা/তারা