রাজবাড়ীর পাংশা পৌরসভার মৌকুরি মোল্লাপাড়া গ্রামে না বলে গাছ থেকে আম পাড়ার অপরাধে মো. রাফি সরদার ওরফে রাব্বি (১০) নামের এক শিশুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা মো. রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে আজ বৃহস্পতিবার পাংশা মডেল থানায় ওই মামলা করেন।

রাফি স্থানীয় মৌকুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। শিশুটি বর্তমানে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত ব্যক্তি মো.

শামীম সরদার (৪৫) মৌকুরি মোল্লাপাড়া গ্রামের মৃত হবিবর সরদারের ছেলে।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে রাফিসহ তার বন্ধুরা প্রতিবেশী শামীমের গাছ থেকে কয়েকটি আম পাড়ে। বিষয়টি শামীম দেখে ফেলায় হাতেনাতে রাফিকে ধরে মারধর করেন। এমনকি বাড়ির উঠানে মেহগনিগাছের সঙ্গে গামছা দিয়ে রাফির দুই হাত বেঁধে শামীম নির্যাতন করেন। এ সময় রাফি কান্নাকাটি করতে থাকলে পরিবার ও স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করতে শামীমের বাড়িতে ছুটে আসেন। এ সময় শামীম অবস্থা বেগতিক দেখে দৌড়ে পালিয়ে যান।

রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে তার বন্ধুদের সঙ্গে খেলার ফাঁকে প্রতিবেশী শামীমের গাছ থেকে দুটি আম পাড়ে। এ অপরাধে শামীম আমার ছেলেকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন এবং আমাকে ফোন দিয়ে হুমকি দেন। ভয়ে আমি সেখানে আর যাইনি। তবে পরিবারের অন্য লোকজন ও স্থানীয়রা সেখান থেকে আমার ছেলেকে উদ্ধার করে আনেন। আমার ছেলে অসুস্থ হওয়ায় পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।’

‎‎এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শামীমের বাড়িতে আজ দুপুরে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খোঁজ নিলে জানা যায়, শামীমসহ পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। পলাতক থাকায় কাউকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনও বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. এবাদত হোসেন জানান, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাফি নামের ওই শিশুকে হাসপাতালে আনা হয়। তার বাঁ পায়ে ও পিঠের ডান পাশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ভর্তি রাখা হয়।

‎পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা বুধবার রাতেই লিখিত অভিযোগ পেয়েছিলাম। কিছু সংশোধন থাকায় আজ সকালে অভিযোগ জমা দিলে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। শিশুটি পাংশা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্তকে ধরতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ছ ল পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ