বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, মুহসিন উদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অধ্যাপক, যিনি জুলাই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের একজন। তাঁকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে অব্যাহতি দেওয়া সম্পূর্ণ অনিয়ম ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিজ আল জাহাঙ্গীর বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন আমাদের পক্ষে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ব্যক্তিগত আক্রোশপ্রসূত। তিনি নিজেই পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন, তখন অব্যাহতি দেওয়া যেত। এখন দেওয়া মানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা।’

ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আতিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমাদের শিক্ষককে যদি মূল্যায়ন করা না হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’

প্রসঙ্গত, ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের নির্দেশে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের দোসরসহ নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এর আগে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন। ওই সময় উপাচার্যের বাসভবনে সিন্ডিকেট সভা চলছিল। সভায় উপস্থিত না থেকে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেন এবং উপাচার্য সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ