বজলুর রহমান ওরফে বজলু মেম্বার মারা যান ২০২৩ সালের মার্চে। দীর্ঘ ১৪ বছর পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের (চনপাড়া বস্তি) অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নেন কায়েতপাড়া ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমশের আলী খান। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে যান সমশের। এর পর আত্মগোপন থেকে ফেরেন চনপাড়া বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবার নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেন যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। ইতোমধ্যে দু’পক্ষ একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে; হয়েছে প্রাণহানিও। এতে আবারও আতঙ্কিত বস্তির সাধারণ বাসিন্দারা।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রূপগঞ্জ থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক (সদ্য বহিষ্কৃত) শামীম হোসেন চনপাড়া বস্তির নিয়ন্ত্রণ নেন। তার সহযোগী চনপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মনির দেওয়ান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী, দপ্তর সম্পাদক মো.

বাবু ওরফে দারোয়ান বাবা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইসহাক মাদকসহ বিভিন্ন কারবার নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। অন্যদিকে, বস্তির নিয়ন্ত্রণ পেতে মরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক লিটন হাওলাদার। তার সহযোগী চনপাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ২ নম্বর ওয়ার্ডের রাব্বানি ও শাকিল এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল করিম। করিম আবার লিটনের আপন ভাগনে।

মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য নিয়ে সর্বশেষ গত ১৮ মার্চ রাতে সংঘর্ষ হয় দু’পক্ষের। ভোর পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ, গোলাগুলি এবং বাসাবাড়িতে চলে লুটপাট। গুলিতে ইউনিয়ন যুবদল নেতা মো. বাবু ওরফে দারোয়ান বাবুর ভাই মো. হাসিব নিহত হন। পরে রাব্বানী, শাকিল, করিমসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন তার ভাই যুবদল নেতা দারোয়ান বাবু। তার অভিযোগ, ‘চনপাড়ায় মাদকের অন্তত ২০০ স্পট রয়েছে। ৫ আগস্টের পর শামীম হোসেনসহ যুবদল নেতারা মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক দলের রাব্বানি, শাকিল ও করিম মাদক কারবার করায় শামীমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।’

রূপগঞ্জ থানা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জানা যায়, ৫ আগস্টের পর থেকে যুবদল নেতা শামীম হোসেনের একক নিয়ন্ত্রণ চলছিল চনপাড়ায়। যুবদলের কমিটিতে থাকা রাব্বানি, করিম, শাকিলসহ তাদের লোকজন ছিল শামীমের ডান হাত। তবে মাস তিনেক আগে তারা শামীমকে ছেড়ে স্বেচ্ছাসেবক দলে নাম লেখান। এর পরই শামীম হোসেনের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন রাব্বানি-করিমের গ্রুপ। বস্তি নিয়ন্ত্রণে দু’পক্ষই শক্তি প্রদর্শন করতে থাকে। অবাধে দখল, চাঁদাবাজি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, মাদক কারবারসহ নানা অপরাধ করে আসছে।

স্থানীয়রা জানান, গত সেপ্টেম্বরে ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী মনির হোসেন এবং চনপাড়া ইউনিট স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শফিকুলের মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেন লিটন হাওলাদার ও তার ভাগনে আব্দুল করিম। গত ফেব্রুয়ারিতে স্বামীর অনুপস্থিতিতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক নারীর বাসায় জোর করে ঢুকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে লিটন। তার চিৎকারে লোকজন জড়ো হলে লিটন পালিয়ে যান। আগস্টের শেষ দিকে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের এক নারীর বাসায় ঢুকলে লোকজন ধরে লিটনকে গণধোলাই দেন। ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পলাতক আনিসুর রহমানের দুটি দোকান দখল করে স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্লাব বানিয়েছেন রাব্বানি ও করিম। একই ওয়ার্ডের দুটি সমিতির অফিস দখল করে ব্যবসা করছেন গ্যাস সিলিন্ডারের। চনপাড়ায় প্লট বা ঘর বেচাকেনা হলে লিটনকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। টাকা না দিলে লুটপাট চালানো হয় বাসায়। মার্চের শুরুতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাসুম একই ওয়ার্ডে একটি প্লট কেনেন সাড়ে ৫ লাখ টাকায়। মাসুমের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন লিটন। চাঁদা না দেওয়ায় তার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় লিটনের লোকজন। ভয়ে মাসুম আইনের আশ্রয় নেননি।
অন্যদিকে, নিরীহ মানুষের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা মেরে চাঁদা আদায় করছেন শামীম ও তার অনুসারীরা। আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের ঘরবাড়িতে লুটপাট চালায় তারা। গত সেপ্টেম্বরে চনপাড়ার একটি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় শামীম ও তার লোকজন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের মারধর করে ১ লাখ টাকা চাঁদা নেন।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করেও লিটন হাওলাদার, আব্দুল করিম, রাব্বানি ও শাকিলের বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। শামীম হোসেনের ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়নি।
রূপগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘চনপাড়ার আধিপত্য নিয়ে স্থানীয় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। করিম, রাব্বানি, শাকিলসহ অপরাধ কার্যক্রমে জড়িতদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী সমকালকে বলেন, ‘চনপাড়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একাধিক গ্রুপ সক্রিয়। গুরুত্ব বিবেচনায় চনপাড়ায় মাঝেমধ্যে ব্লক রেইড হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘শামীম, করিম, রাব্বানিসহ অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত র পগঞ জ থ ন য বদল ন ত চনপ ড় য় য বদল র ল টপ ট স ঘর ষ ল কজন আওয় ম আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ