আন্তর্জাতিক বাজারের মতো দেশেও সোনার দাম যেন এখন লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটছে তো ছুটছেই। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মূল্যবান এ ধাতুর দাম। এর কারণ হিসেবে দেশীয় ব্যবসায়ীরা বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন।
সে ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার দেশের বাজারে আরেক দফা সোনার দাম বেড়েছে। এবারে ভরিপ্রতি দাম বেড়েছে ২ হাজার ৬২৪ টাকা। তাতে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৩ টাকা। দেশের বাজারে এটিই এখন পর্যন্ত সোনার সর্বোচ্চ দাম। অর্থাৎ দেশের বাজারে আবার নতুন রেকর্ড হয়েছে সোনার দামে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) আজ রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন করে সোনার দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছে। বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আবার দাম সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন দাম আগামীকাল রোববার থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে সর্বশেষ গত বুধবার সোনার দাম ভরিপ্রতি ৩ হাজার ৩৩ টাকা বাড়িয়েছিল বাজুস। তাতে প্রতি ভরি সোনার দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০৯ টাকা। আজ পর্যন্ত দেশের বাজারে এটিই ছিল সোনার সর্বোচ্চ দাম।
বাজুসের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে আগামীকাল রোববার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৩ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৬০ হাজার ২০৫ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০৯ টাকায় বিক্রি হবে। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৯১ টাকায়।
এদিকে আজ শনিবার পর্যন্ত প্রতি ভরি হলমার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০৯ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৭৪ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনা ১ লাখ ১১ হাজার ৬৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সেই হিসাবে আগামীকাল রোববার থেকে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনায় ২ হাজার ৬২৪ টাকা, ২১ ক্যারেটে ২ হাজার ৫০৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ২ হাজার ১৩৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনায় ১ হাজার ৮৩১ টাকা দাম বাড়বে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস জানায়, সোনা ও রুপার বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও সমিতির নির্ধারিত ৬ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি যুক্ত করতে হবে। গয়নার নকশা ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ জন্য বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে। আর বৈশ্বিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বাজারেও সোনার দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে। এটি করা না হলে বাংলাদেশ থেকে সোনা পাচার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানান তাঁরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২২ ক য র ট
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।