জায়নবাদ যেভাবে ইসরায়েলকে দুই ভাগ করে ফেলছে
Published: 20th, April 2025 GMT
এ মাসের শুরুতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন ওয়াশিংটন সফর থেকে ফিরলেন, তখন তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ ইরানে আক্রমণ চালানোর জন্য প্রচারণা শুরু করেন।
বেনি গ্যান্টজের এই প্রচারণা এমন এক সময়ে এল, যখন প্রলম্বিত গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলে সামাজিক অস্তিরতা বেড়েই চলেছে।
যদিও সংসদীয় বিরোধী দল নেতানিয়াহুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখেছে। যুদ্ধে ‘সম্পূর্ণ বিজয়ের’ দাবি যে বিভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়, সেটা তাঁরা স্বীকার করছেন না। এরপরও ইসরায়েল যদি ইরানে আক্রমণ চালিয়ে বসে, তাহলে পুরো অঞ্চলই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে যাবে। একই সঙ্গে সিরিয়ায় সামরিক অভিযান ইসরায়েলের কৌশলগত বিভ্রমকে আরও গভীর করেছে। ইসরায়েলকে আরেকটি কানাগলির মধ্যে আটকে দিচ্ছে।
এই আগ্রাসী পদক্ষেপ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সক্ষমতার সীমাবদ্ধতাকে সামনে আনছে। দৃশ্যমান বাস্তবতার আড়ালে ইসরায়েলি সমাজে গভীর দ্বন্দ্ব চলছে। আর সেটা হচ্ছে, ‘তেল আবিবকেন্দ্রিক রাষ্ট্র’ এবং ‘তথাকথিত জুডিয়া ও সামারিয়াকেন্দ্রিক রাষ্ট্র’–এর (অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েল এ নামে ডাকে) মধ্যকার পরিচয়গত সংঘাত।
ইসরায়েলি সমাজের ভেতরকার এই বিভাজন ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। সম্প্রতি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নজিরবিহীনভাবে সরকারের শ্রেণিবদ্ধ তথ্য তিনি একজন মন্ত্রী ও সাংবাদিকদের কাছে ফাঁস করেছিলেন।
এর চেয়ে গুরুতর ঘটনা হচ্ছে, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এ সপ্তাহে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান। এর কারণ হলো, সেই সভায় শিন বেতের প্রধান রোনেন বারের উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
একই সঙ্গে আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিরাপত্তা–সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস এবং পুলিশের মধ্য কাহানিস্ট (ইসরায়েলের একজন রাব্বির প্রচারিত রাজনৈতিক মতাদর্শ) কর্মকাণ্ডের অনুপ্রবেশের ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে শিন বেত।
ডানপন্থীদের মধ্যেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রাক্তন মিত্র, যেমন মোসে ইয়ালন, ডান মেরিডার ও ডান হ্যালুটজ (তাঁরা সবাই তাঁদের কট্টর দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত) সবাই নিজেদের অবস্থান পাল্টাছেন। নিষ্ক্রিয় বিরোধী সংসদ সদস্যদের মতো নন তাঁরা। তাঁরা বলছেন যে হুমকি কেবল যুদ্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, নেতানিয়াহু সমাজকে বড় যে রূপান্তরের মুখে ঠেলে দিয়েছেন, সেটাও একটা বড় হুমকি।ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে বিভাজন স্পস্ট। পুলিশ এখন একজন ডানপন্থী ত্রাতাবাদী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রীর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি পশ্চিম তীরে সেটলারদের সহিংসতায় লাগাম টানতে রাজি নন।
এর বিপরীতে শিন বেত রাষ্ট্রযন্ত্র ও নেতানিয়াহুর বিরোধী পক্ষের সঙ্গে যুক্ত। আর এই বিভাজন সংবাদমাধ্যমেও জগতেও দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
চূড়ান্ত বিচারে আজ জায়নবাদ পরস্পরবিরোধী নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দুটি রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এখন সেটা রাষ্ট্রের মধ্যেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিচ্ছে।
ডানপন্থীদের মধ্যেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রাক্তন মিত্র, যেমন মোসে ইয়ালন, ডান মেরিডার ও ডান হ্যালুটজ (তাঁরা সবাই তাঁদের কট্টর দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত) সবাই নিজেদের অবস্থান পাল্টাছেন। নিষ্ক্রিয় বিরোধী সংসদ সদস্যদের মতো নন তাঁরা। তাঁরা বলছেন যে হুমকি কেবল যুদ্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, নেতানিয়াহু সমাজকে বড় যে রূপান্তরের মুখে ঠেলে দিয়েছেন, সেটাও একটা বড় হুমকি।
আরও পড়ুনহয় ফ্যাসিবাদ নয়তো জায়নবাদকে বেছে নিতে হবে০৫ নভেম্বর ২০২৪মোসে ইয়ালন সেনাপ্রধান থাকাকালে অধিকৃত পশ্চিম তীরে মারাত্মক অভিযান চালিয়েছিলেন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার তিনি তাঁর অনুসারীদের হতাশ করেছেন। সাক্ষাৎকারে ইয়ালন বলেছেন, তিনি আশা করেন যে ইসরায়েল গাজায় ‘শিশু হত্যা করার জন্য সেনাবাহিনী যেন না পাঠায়’। তিনি স্বীকার করেন যে উত্তর গাজায় ইসরায়েল জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে।
সাবেক বিচারপতি মেরিডর রাজনীতিতে বর্ণবাদের উত্থান নিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে বর্ণবাদী রাজনৈতিক মঞ্চের কারণে একবার রাব্বি মেইর কাহানের দলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি পশ্চিম তীরে সেটলার কর্তৃক হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন যে জনমিতিক যে বাস্তবতা, তার কারণে গাজা ও পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করা অসম্ভব।
ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর সাবেক কমান্ডার হ্যালুটজও প্রকাশ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন। তিনি সতর্ক করেন যে এই যুদ্ধ কেবল ঘৃণাকেই গভীর করবে এবং শত্রুকে শক্তিশালী করবে।
হারেৎজে দেওয়া সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে হ্যালুটজ উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে ভয়ে তাঁর সন্তান ও নাতি–নাতনিদের সবাই ইসরায়েল ছেড়ে চলে যেতে পারেন। তিনি বলেন যে নেতানিয়াহুর সামাজিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্প তেল আবিবের দখলদারত্ব ও উদার জীবনের মধ্যে যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য, সেটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে।
এই বক্তব্যগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে ইসরায়েলি সমাজের বামপন্থীরা তো বটেই, জায়নবাদী ডানপন্থীরাও যুদ্ধ অব্যাহত করতে চাইছে না। এই অংশ এখন সাংস্কৃতিকভাবে আধিপত্য করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ডানপন্থীরা যখন প্রকৃত বিকল্প প্রস্তাব করতে পারছে না, তখন মেসায়নিক ডানপন্থীরা দীর্ঘস্থায়ী মতাদর্শিক লড়াইয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে দিয়েছে, যেটা একসময় ইসরায়েলের পরিচয়কে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।
গাজা যুদ্ধে ইসরায়েল যদি কোনো কিছুতে সফলতা পায় সেটা হলো, গণহত্যামূলক সহিংসতা চালানোর পরও তাদের সমাজের মধ্যে একটা ‘স্বাভাবিকতা’ বজায় রাখা।
ফিলিস্তিন ও লেবাননে তারা হাজার হাজার মানুষকে তারা হত্যা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি জনজীবনে কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি।
আরও পড়ুনইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা: অপরাধের শত বছর, অন্যায়ের ৮০, পাপের ৬৯ ১০ অক্টোবর ২০২৩হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগ, দেশে দেশে প্রতিবাদ ও অর্থনৈতিক বর্জনের পরও ইসরায়েলি সমাজ নির্লিপ্ত।
‘আমরা কিছু জানি না’, এই দাবি আর বেশি দিন টিকে থাকবে না। হাজার হাজার সেনা যুদ্ধে তাঁদের ভূমিকার ভিডিও চিত্র ধারণ করেছেন এবং সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। সেটা তারা জানেন। সবাই সেটা জানছেন। ভয়টা আসে অজ্ঞনতা থেকে নয়, ভয়টা আসে নির্লিপ্ততা থেকে। একটি সমাজের সত্যিকারের বিপদ নিহিত থাকে প্রতিদিনকার স্বচ্ছন্দ্য বজায় রেখে গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা এবং শিশু হত্যার ন্যায্যতা উৎপাদন এবং প্রশ্ন না করার মধ্যে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দখলকৃত পশ্চিম তীরের বিশৃঙ্খলা ইসরায়েলি নাগরিক জীবনকে প্রভাবিত করছে। সাংস্কৃতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জাতীয় পরিচয়কে নতুনভাবে বিন্যস্ত করছে।
নেতানিয়াহুর প্রাক্তন মিত্রদের সবাই যে উদ্বেগটি জানিয়েছেন সেটা হলো, তেল আবিবের মধ্যবিত্ত শ্রেণি ইসরায়েল ছেড়ে চলে যেতে পারেন। সেটা ঘটলে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে যেমন বিপর্যয় নেমে আসবে আবার বাইরের দেশে লিবারেল ভাবমূর্তিও নষ্ট্ হবে।
আবেদ আবু শাহদেহ জাফার একজন রাজনৈতিক কর্মী
মিডলইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র র জন ত ক ড নপন থ জ য়নব দ মন ত র র জন য কর ছ ন কর ন য
এছাড়াও পড়ুন:
যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো: লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় নবম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এফ আর খান। আলোচনার বিষয় ছিল ‘রিয়েল এস্টেটে সততা, বিশ্বাস, পরিবার ও মানবিক মূল্যবোধ।’
‘কাজের ক্ষেত্রে প্রফেশনাল আর সৎ থাকতে হবে। যদি মনে করেন আপনি কোনো কাজে ভালো, তাহলে চেষ্টা কখনো বিফলে যাবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে এ পরামর্শ দেন বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এফ আর খান।
পডকাস্ট শো: লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচে অতিথি হিসেবে এসে তরুণদের এই পরামর্শ দেন তিনি। পডকাস্ট শোর এ পর্বটি গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রচারিত হয়।
পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট সেক্টর নিয়ে আজ থেকে চার দশক আগে আপনার ধারণা কী ছিল?
উত্তরে এফ আর খান বলেন, ‘১৯৭৯ সালে বুয়েট থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর আমি বুয়েটেই প্রথম কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করি। সে সময় ঢাকায় বেশ কয়েকটি সুপরিচিত ভবনের নকশা করার সুযোগ পাই। কিছুদিন পর আমি মাস্টার্স করার কথা ভাবি, কারণ বুঝেছিলাম—আরেকটি উচ্চতর ডিগ্রি ছাড়া পেশাগতভাবে নিজেকে আরও এগিয়ে নেওয়া কঠিন। সেই সময় স্কলারশিপের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছিল, তাই এর মধ্যেই আইবিএতে ভর্তি হই। সেখানে ম্যানেজমেন্ট ও বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দারুণ এক্সপোজার পাই। এদিকে কিছুদিন পরই বিদেশে পড়ার স্কলারশিপও পেয়ে যাই। দেশে ফিরে এসে আমি ইস্টার্ন হাউজিংয়ে যোগ দিই।’
এফ আর খান আরও বলেন, ‘ইস্টার্ন হাউজিংয়ে যোগ দিয়েই বুঝলাম, আরে, এটা তো দারুণ! এখানে নিজেই নকশা করতে পারি একজন স্ট্রাকচারাল ডিজাইনার হিসেবে, নিজেই সেটি নির্মাণ করতে পারি আবার বিক্রিও করতে পারি। শুধু তা–ই নয়, গ্রাহকের জন্য সার্ভিস এবং বিক্রয়–পরবর্তী সেবা দেওয়ারও সুযোগ আছে। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটিই একধরনের ইকোসিস্টেম, যেখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে।’
প্রসঙ্গক্রমে বিটিআইয়ের যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে এফ আর খান বলেন, ‘আমি এবং আমার দুজন সহকর্মী মিলে বিটিআই প্রতিষ্ঠা করি। তাঁদের মধ্যে একজন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। তিনি বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন তিনি পুরো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। আরেকজন সহকর্মী ছিলেন, যিনি আইবিএ থেকে পড়াশোনা করেন, তিনি মার্কেটিং দেখতেন। আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দায়িত্ব নিই। এভাবেই আমরা ১৯৮৫ সালে বিটিআই শুরু করি।’
এই দীর্ঘ যাত্রায় সবচেয়ে বড় শেখাটা কী ছিল? জানতে চাইলে এফ আর খান বলেন, সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই সফলতা আসে। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের বড় শিক্ষা এটিই—যদি তুমি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে।’
এরপর সঞ্চালক জানতে চান, আপনি বাংলাদেশের ফ্ল্যাট মালিকানা আইন ও মান নিয়ন্ত্রণে যে কাজ করেছেন, সেটার পেছনে অনুপ্রেরণা কী ছিল?
উত্তরে এফ আর খান বলেন, ‘জাপানে পড়তে গিয়ে আমি দেখেছি, ওরা সম্পূর্ণ কমপ্লায়েন্স বেজড সিস্টেমে চলে। এই মানসিকতাই আমাকে অনুপ্রাণিত করে। দেশে ফিরে দেখি মালিকানা আইন তখনো অস্পষ্ট। আমরা পার্লামেন্টে গিয়ে আইন পাস করাই, যাতে অ্যাপার্টমেন্ট মালিকেরাও জমির আনুপাতিক মালিক হন। পরবর্তী সময়ে ব্যাংক লোন, ইনভেস্টমেন্ট, শেয়ার বণ্টন—সবকিছু আমরা আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে সক্ষম হই।’
আপনি নীতিনিষ্ঠ ব্যবসা নিয়ে সব সময় কথা বলেন। এই নীতি রক্ষা করে ব্যবসা চালানো কতটা কঠিন? জানতে চাইলে এফ আর খান বলেন, এটি কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। অনেক সময় চাপে পড়তে হয়েছে; কিন্তু কখনো শর্টকাট নেননি তিনি। তাঁর মতে, সঠিক পথে চললে লাভ একটু দেরিতে আসে কিন্তু স্থায়ী হয়।
আপনার দাদা এবং আপনার পরিবারের মূল্যবোধ আপনাকে কতটা প্রভাবিত করেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে এফ আর খান বলেন, ‘অত্যন্ত গভীরভাবে। আমার দাদা ছিলেন একজন গণিতজ্ঞ, খুব নীতিমান মানুষ। ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে শিখেছি, মানুষকে কীভাবে সম্মান দিতে হয়। এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিটা পরে জাপানে পড়তে গিয়ে আরও গভীর হয়েছে। এই মানসিকতাই আমার ব্যবসার ডিএনএতে আছে। আমার চাচা প্রয়াত ড. ফজলুর রহমান খান, বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনিও আমার জীবনে অসাধারণ প্রভাব ফেলেছেন। উনিই আমার নাম রেখেছিলেন। উনি ছিলেন আমার অনুপ্রেরণা। তাঁর কাজ, তাঁর বিনয় আর সৃষ্টিশীলতা আমাকে শিখিয়েছে যে প্রকৌশল মানে কেবল কাঠামো নয়—এটা মূল্যবোধ ও মানবিকতার মেলবন্ধন।’
এই সেক্টরকে অনেকে শুধু মুনাফার ক্ষেত্র হিসেবে দেখে। আপনি কীভাবে ভারসাম্য রাখেন নৈতিকতা ও ব্যবসার মধ্যে? সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে এফ আর খান বলেন, ‘নীতির সঙ্গে ব্যবসা করলে একটি দীর্ঘমেয়াদি আস্থা তৈরি হয়। গ্রাহক যদি বুঝতে পারেন আপনি সৎ, তাহলে তাঁরা বারবার ফিরে আসবেন। আমরা বিটিআইতে এই বিশ্বাসেই কাজ করি।’
সঞ্চালক এ পর্যায়ে বলেন, আজকাল স্মার্ট হোম, টেকনোলজি—এসব নিয়ে আলোচনা হয়। আপনি মানবিক সংবেদনশীলতার কথা বলেন। এই ভারসাম্য কীভাবে দেখেন?
উত্তরে এফ আর খান বলেন, প্রযুক্তি মানুষের জন্য, মানুষ প্রযুক্তির জন্য নয়। আর নিয়ম ও আইনকানুন—সবই তৈরি হয় সমাজ ও মানুষের উন্নতির জন্য। তাই নিয়ম মেনে চললে কিন্তু মানবিকতার জায়গাটা কখনো হারায় না। ক্লায়েন্টের প্রতি সহানুভূতি রাখতে হবে। প্রয়োজনে কঠোরতা থেকে নমনীয়তায় যেতে হবে—এটাই মানবিক দৃষ্টিকোণ।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আপনার জীবনে কোনো অপূর্ণ ইচ্ছা আছে কি না?
এ বিষয়ে এফ আর খান বলেন, ‘অপূর্ণ ইচ্ছা বলতে চাই না। কারণ, এখনো চেষ্টা করছি এটি নিয়ে এবং আমার বিশ্বাস এটি পূর্ণ হবে। তা হলো অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং—সাধারণ মানুষের জন্য বাসস্থান। শুনতে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মনে হলেও এর পেছনে কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নেই বললে ভুল হবে। তবে আমি আমার টেকনিক্যাল এবং প্রফেশনাল জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আমাদের কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’