নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জামালপুর জেলার আহ্বায়ক মীর ইছহাক হোসেন। যুবলীগের স্থানীয় এক নেতার সঙ্গে পারিবারিক ও রাজনৈতিক বিরোধের জেরে গতকাল সোমবার রাতে ফেসবুক লাইভ করে তিনি নিরাপত্তা চান।

যুবলীগের ওই নেতার নাম বদরুল হাসান। তিনি সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চান্দের হাওড়া গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে। বদরুল উপজেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক এবং মেষ্টা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছে। ছাত্রনেতা মীর ইছহাক হোসেনের দূরসম্পর্কে চাচাতো ভাই তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। গতকাল বিকেলে উভয় পরিবারের মধ্যে একটি সড়কের মাটি কাটা নিয়ে ঝগড়া হয়। এর জেরে গতকাল রাতে প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে ইছহাক ফেসবুক লাইভ করেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো.

আতিক বলেন, ‘লাইভটি দেখার পরই আমরা ওই এলাকায় গিয়েছিলাম। যাঁদের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রনেতার অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে রাজনৈতিক ও জমিজমা নিয়ে সমস্যা আছে। লাইভে বলা সব বিষয় খতিয়ে দেখছি। তাঁকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে, কিন্তু তিনি এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি।’

ইছাহাকের ফেসবুক লাইভের পাঁচ মিনিটের ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ রক্তাক্ত আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে আমরা পতন করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ৫ আগস্টের আট মাস পর আসামিরা আমার বাড়িতে রাতের আঁধারে হামলা করতে আসছে।’ লাইভের এক পর্যায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার পুলিশ প্রশাসন কী করে, প্রশাসন আমার ও জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জামালপুর জেলার সর্বোচ্চ পদে থাকা সত্ত্বেও আমার বাড়িতে যদি হামলা চালানো হয়। আর পুলিশ প্রশাসনকে জানানোর পরও যদি তাদের টনক না নড়ে, তাহলে এই স্বাধীনতার কোনো দরকার নেই।’

এদিকে আত্মগোপনে থাকা যুবলীগের নেতা বদরুল হাসানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে বদরুল হাসান বলেন, ‘মীর ইছহাক হোসেন আমার চাচাতো ভাই। তিনি আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখবেন, আমরা সন্ত্রাসী রাজনীতি বা কারও সঙ্গে ঝগড়া করেছি কি না? মীর ইছহাক হোসেনের প্রভাবে আমার এবং এলাকার কয়েক হাজার পরিবার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দিশাহারা। কিন্তু কেউ সাহস করে বলতে পারছেন না। কারণ, তিনি বৈষম্যের প্রভাব খাটান।’ এ বিষয়ে বদরুল হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে মীর ইছহাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বদরুল হাসানের আত্মীয়স্বজনেরা আমার বাড়িতে গিয়ে মারামারি করার জন্য হুমকি ও হামলা করার চেষ্টা করেছেন। ৫ আগস্টের পর তাঁর বিরুদ্ধে চার–পাঁচটি মামলা হয়েছে। আমি পুলিশ সুপারকে অনেকবার জানিয়েছি, তাঁকে ধরেন। তারপরও পুলিশ সুপার বিষয়টি কানেই নেননি।’

মাটিকাটা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ নিয়ে জানতে চাইলে মীর ইছহাক বলেন, ‘মাটিকাটা নয়, ঘটনাটি আপনি (প্রতিবেদক) শোনেন, ওদের (বদরুল) জমি থেকে রাস্তার জন্য মাটি কাটবে, সেটা তো আমি জানি না। ওই রাস্তার কাজের সঙ্গেও আমি নাই। আমি তো সেখানে বসেও থাকি নাই যে, মাটি কাটতে হবে। বিষয়টি হলো, তাঁরা ভাবতেছে, ওই রাস্তার মাটি আমিই কাটাচ্ছি, রাস্তার মাটি নিচ্ছে সরকারিভাবে। তাঁদের ধারণা, জমি থেকে মাটি ও মামলাগুলো আমিই করিয়েছি।’

মাটিকাটা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্য গতকাল ঝগড়া হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে মীর ইছহাক বলেন, ‘আমার পরিবার বাড়িতেই ছিল। ওরাই আমাদের বাড়িতে এসে ঝগড়া করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক বিষয়, ৫ আগস্টের আগেই আমাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে তাঁরা লাঠি নিয়ে বাড়িতে মারতে আসছিল। সে তো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। দল নিয়েই তাঁদের সঙ্গে ঝগড়ার শুরু। এ ঘটনায় আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বদর ল হ স ন ৫ আগস ট র র জন ত ক য বল গ র পর ব র র কর ছ ন গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ