নিরাপত্তা চেয়ে জামালপুরে বৈষম্যবিরোধী নেতার ফেসবুক লাইভ, নেপথ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব
Published: 22nd, April 2025 GMT
নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জামালপুর জেলার আহ্বায়ক মীর ইছহাক হোসেন। যুবলীগের স্থানীয় এক নেতার সঙ্গে পারিবারিক ও রাজনৈতিক বিরোধের জেরে গতকাল সোমবার রাতে ফেসবুক লাইভ করে তিনি নিরাপত্তা চান।
যুবলীগের ওই নেতার নাম বদরুল হাসান। তিনি সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চান্দের হাওড়া গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে। বদরুল উপজেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক এবং মেষ্টা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছে। ছাত্রনেতা মীর ইছহাক হোসেনের দূরসম্পর্কে চাচাতো ভাই তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। গতকাল বিকেলে উভয় পরিবারের মধ্যে একটি সড়কের মাটি কাটা নিয়ে ঝগড়া হয়। এর জেরে গতকাল রাতে প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে ইছহাক ফেসবুক লাইভ করেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো.
ইছাহাকের ফেসবুক লাইভের পাঁচ মিনিটের ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ রক্তাক্ত আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে আমরা পতন করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ৫ আগস্টের আট মাস পর আসামিরা আমার বাড়িতে রাতের আঁধারে হামলা করতে আসছে।’ লাইভের এক পর্যায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার পুলিশ প্রশাসন কী করে, প্রশাসন আমার ও জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জামালপুর জেলার সর্বোচ্চ পদে থাকা সত্ত্বেও আমার বাড়িতে যদি হামলা চালানো হয়। আর পুলিশ প্রশাসনকে জানানোর পরও যদি তাদের টনক না নড়ে, তাহলে এই স্বাধীনতার কোনো দরকার নেই।’
এদিকে আত্মগোপনে থাকা যুবলীগের নেতা বদরুল হাসানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে বদরুল হাসান বলেন, ‘মীর ইছহাক হোসেন আমার চাচাতো ভাই। তিনি আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখবেন, আমরা সন্ত্রাসী রাজনীতি বা কারও সঙ্গে ঝগড়া করেছি কি না? মীর ইছহাক হোসেনের প্রভাবে আমার এবং এলাকার কয়েক হাজার পরিবার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দিশাহারা। কিন্তু কেউ সাহস করে বলতে পারছেন না। কারণ, তিনি বৈষম্যের প্রভাব খাটান।’ এ বিষয়ে বদরুল হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে মীর ইছহাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বদরুল হাসানের আত্মীয়স্বজনেরা আমার বাড়িতে গিয়ে মারামারি করার জন্য হুমকি ও হামলা করার চেষ্টা করেছেন। ৫ আগস্টের পর তাঁর বিরুদ্ধে চার–পাঁচটি মামলা হয়েছে। আমি পুলিশ সুপারকে অনেকবার জানিয়েছি, তাঁকে ধরেন। তারপরও পুলিশ সুপার বিষয়টি কানেই নেননি।’
মাটিকাটা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ নিয়ে জানতে চাইলে মীর ইছহাক বলেন, ‘মাটিকাটা নয়, ঘটনাটি আপনি (প্রতিবেদক) শোনেন, ওদের (বদরুল) জমি থেকে রাস্তার জন্য মাটি কাটবে, সেটা তো আমি জানি না। ওই রাস্তার কাজের সঙ্গেও আমি নাই। আমি তো সেখানে বসেও থাকি নাই যে, মাটি কাটতে হবে। বিষয়টি হলো, তাঁরা ভাবতেছে, ওই রাস্তার মাটি আমিই কাটাচ্ছি, রাস্তার মাটি নিচ্ছে সরকারিভাবে। তাঁদের ধারণা, জমি থেকে মাটি ও মামলাগুলো আমিই করিয়েছি।’
মাটিকাটা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্য গতকাল ঝগড়া হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে মীর ইছহাক বলেন, ‘আমার পরিবার বাড়িতেই ছিল। ওরাই আমাদের বাড়িতে এসে ঝগড়া করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক বিষয়, ৫ আগস্টের আগেই আমাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে তাঁরা লাঠি নিয়ে বাড়িতে মারতে আসছিল। সে তো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। দল নিয়েই তাঁদের সঙ্গে ঝগড়ার শুরু। এ ঘটনায় আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বদর ল হ স ন ৫ আগস ট র র জন ত ক য বল গ র পর ব র র কর ছ ন গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিপির উদ্বেগ আদালত অবমাননার শামিল: ইশরাক
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদ নিয়ে ইশরাক হোসেনের মামলা, রায় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তৎপরতা নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টিকে আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেছেন, এনসিপি আইনের ব্যাখ্যা এবং আইন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। একই সঙ্গে বিজ্ঞ আদালতের আদেশকে অবমাননা করেছে।
বুধবার রাতে এক প্রতিবাদলিপিতে ইশরাক হোসেনের পক্ষে তাঁর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম এ কথা বলেছেন। এর আগে গতকাল বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল এনসিপি।
দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হওয়া নিয়ে এনসিপির উদ্বেগের বিষয়টি উল্লেখ করে ইশরাক হোসেনের পক্ষে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে তাঁর আইনজীবী বলেন, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কারণ নিয়ে এনসিপির বক্তব্য একেবারেই শিশুসুলভ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেকোনো মামলায় দ্রুত নিষ্পত্তির বিজ্ঞ আদালতের একটি সহজাত ক্ষমতা। তা ছাড়া ২০২০ সালে দায়ের করা মামলাটি ২০২৫ সালে নিষ্পত্তি হয়েছে। এটি দীর্ঘ পাঁচ বছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, যা মোটেও সংক্ষিপ্ত সময় নয়; বরং মোকদ্দমাটি আরও আগেই নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন ছিল।
নির্বাচনী মামলার নিষ্পত্তি সংক্ষিপ্ত সময়ে হওয়া উচিত উল্লেখ করে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, এনসিপির এ জাতীয় বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। এ ছাড়া এ-সংক্রান্ত যে বক্তব্য দিয়েছে, তার সম্পূর্ণ আইনি অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। মামলার তদবিরকারক বাদীর ইচ্ছা অনুযায়ী যে কেউ হতে পারে বিধায় বিজ্ঞ আদালত হলফনামা গ্রহণ করেছেন, যা সম্পূর্ণ আইন মেনেই করা হয়েছে। এ ছাড়া আদালত কোনো প্রকার বিচার-বিশ্লেষণ করেননি বলে যে বক্তব্য এনসিপি দিয়েছে, তা এককথায় তাদের জ্ঞানের স্বল্পতারই বহিঃপ্রকাশ এবং আদালত অবমাননার শামিল।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, ‘আদালত যথাযথ আইন মেনেই রায় প্রদান করেন। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ন্যায়বিচার হয়নি বলে মনে করে, তাহলে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে এবং তার বক্তব্য ওই উচ্চ আদালতে রাখারও সুযোগ আছে। এভাবে প্রেসনোট দিয়ে বক্তব্য প্রদান দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও বিজ্ঞ আদালতকে অবমাননা ছাড়া কিছুই নয়।’
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল করে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বিএনপি নেতার ইশরাক হোসেনকে গত ২৭ মার্চ মেয়র ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন আদালত। এর এক মাস পর আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গেজেট প্রকাশের পর এটি বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই মন্ত্রণালয় থেকে শপথ গ্রহণের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা। তবে কবে নাগাদ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে, সে বিষয়টি নিয়ে এখন ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচনের হিসাব অনুযায়ী আগামী ১৫ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।