স্বামীর লাশের পাশে বসে আছেন নববধূ। হাতে শাখাপলা। বিয়ে হয়েছিলো মাত্র ৭ দিন আগে। নবদম্পতি কাশ্মীর গিয়েছিলেন হানিমুনে। কিন্তু নতুন জীবন শুরুর আগেই শেষ। বন্দুকধারীদের হামলায় আগামীর স্বপ্নগুলো ভেসে গেছে রক্তের রঙে।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর অফিসার লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল। বিনয়ের লাশের পাশে নিস্তব্ধ হয়ে স্ত্রীর বসে থাকার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সে ছবি শেয়ার করেছেন অনেকে। লিখেছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো জাত-ধর্ম হয় না।

ওই ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে কল্লোল মোস্তফা নামে একজন লিখেছেন, "এমন নৃশংস হত্যাকারীদের স্বাধীনতার যোদ্ধা বলে না। বলে জঙ্গী। এমন হত্যাকে স্বাধীনতার লড়াই বলে না। বলে মানবতাবিরোধী গণহত্যা। সাধারণ মানুষদের হত্যা করে জঙ্গিরা স্বাধীনতাকামী হাজার-হাজার শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করলো। সেই সাথে যুগ যুগ ধরে চলা কাশ্মীরের মুক্তির লড়াইকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে দিলো। সাধারণ মানুষদের হত্যা করে স্বাধীনতা আসে না। স্বাধীনতা দূর-অস্ত হয়ে যায়।”

বুধবার (২৩ এপ্রিল) এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিনয় নারওয়াল হরিয়ানার কারনালের বাসিন্দা। তিনি গত ১৬ এপ্রিল বিয়ে করেন। ১৯ এপ্রিল তার বিবাহের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। সদ্যবিবাহিত তরুণ এই অফিসার কাশ্মীরে গিয়েছিলেন হানিমুনে। পহেলগামের সন্ত্রাসী হামলায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হন তিনি।

প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, বিনয় নারওয়াল মাত্র দুই বছর আগে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। সন্ত্রাসী হামলায় তার মৃত্যুতে পরিবার, সম্প্রদায় এবং প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশী এবং স্থানীয়রা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার এক প্রতিবেশী নরেশ বনসাল বলেন, “কদিন আগে তার বিয়ে হলো। সবাই খুব খুশি ছিল। হঠাৎ আমরা খবর পেলাম যে, বন্দুকধারীরা তাকে হত্যা করেছে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে।”

এদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভয়াবহ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। এটি পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা বা এলইটি গোষ্ঠীর একটি ছায়া সংগঠন।

টিআরএফের উত্থান হয় ২০১৯ সালে। ওই বছরই বিজেপি সরকার সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে। যার ফলে জম্মু ও কাশ্মিরের ‘বিশেষ মর্যাদা’-র অবলুপ্তি হয়। এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে লস্কর-ই-তৈয়বার একটি ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। সেই সংগঠনেরই পাঁচ-ছ’জন মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়।

হামলার ঘটনার পর পহেলগাঁও উপত্যকায় নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরের অন্যান্য জায়গাও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার রাতেই কাশ্মিরে পৌঁছেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সৌদি আরব সফরসূচি কাঁটছাঁট করে বুধবার সকালে দিল্লি ফিরে এসেছেন। বিমানবন্দরেরই তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। দিল্লিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করবেন মোদি। তবে এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে নিরাপত্তাবাহিনী।

ঢাকা/ইভা

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ধ নত স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামের কাছে এক প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর শহরটিতে এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অবশ্য সেখানে অল্প অল্প করে পর্যটক ফিরতে শুরু করেছেন।

গত সপ্তাহে শহরের প্রধান মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, খালি হয়ে গিয়েছিল হোটেলগুলো। এখন সেখানে আবার অল্প অল্প করে প্রাণ ফিরছে।

গত মঙ্গলবার পেহেলগাম থেকে তিন মাইল (৫ কিলোমিটার) দূরে পাহাড়চূড়ার উপত্যকা বৈসারানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের ওপর গুলি চালায় একদল বন্দুকধারী। এই বৈসারানকে অনেক সময় ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়।

বৈসারানের হামলাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এবং ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কাশ্মীরের দুই অংশ দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তরে পুরো অঞ্চলকে দুই দেশই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।

দিল্লি এ হামলার কোনো সামরিক জবাব দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।

১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।

পেহেলগামের মতো এলাকার অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। হামলার জেরে সেখানে বহু মানুষের জীবিকা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনকাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড়, ভাঙা হচ্ছে বাড়ি: ‘আমার ভাই জড়িত থাকলেও পরিবারের অপরাধ কী’১৮ ঘণ্টা আগেহামলার পরদিন (২৩ এপ্রিল) ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেহেলগামের বৈসারান এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাপ্তাই হ্রদের ‘দ্বীপে’ রিসোর্ট-কটেজ, টানছে পর্যটক
  • ভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট
  • হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা
  • কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো গোলাগুলি