কাশ্মিরে হামলা: যে ছবি হৃদয় নাড়িয়েছে
Published: 23rd, April 2025 GMT
স্বামীর লাশের পাশে বসে আছেন নববধূ। হাতে শাখাপলা। বিয়ে হয়েছিলো মাত্র ৭ দিন আগে। নবদম্পতি কাশ্মীর গিয়েছিলেন হানিমুনে। কিন্তু নতুন জীবন শুরুর আগেই শেষ। বন্দুকধারীদের হামলায় আগামীর স্বপ্নগুলো ভেসে গেছে রক্তের রঙে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর অফিসার লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল। বিনয়ের লাশের পাশে নিস্তব্ধ হয়ে স্ত্রীর বসে থাকার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সে ছবি শেয়ার করেছেন অনেকে। লিখেছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো জাত-ধর্ম হয় না।
ওই ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে কল্লোল মোস্তফা নামে একজন লিখেছেন, "এমন নৃশংস হত্যাকারীদের স্বাধীনতার যোদ্ধা বলে না। বলে জঙ্গী। এমন হত্যাকে স্বাধীনতার লড়াই বলে না। বলে মানবতাবিরোধী গণহত্যা। সাধারণ মানুষদের হত্যা করে জঙ্গিরা স্বাধীনতাকামী হাজার-হাজার শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করলো। সেই সাথে যুগ যুগ ধরে চলা কাশ্মীরের মুক্তির লড়াইকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে দিলো। সাধারণ মানুষদের হত্যা করে স্বাধীনতা আসে না। স্বাধীনতা দূর-অস্ত হয়ে যায়।”
বুধবার (২৩ এপ্রিল) এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিনয় নারওয়াল হরিয়ানার কারনালের বাসিন্দা। তিনি গত ১৬ এপ্রিল বিয়ে করেন। ১৯ এপ্রিল তার বিবাহের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। সদ্যবিবাহিত তরুণ এই অফিসার কাশ্মীরে গিয়েছিলেন হানিমুনে। পহেলগামের সন্ত্রাসী হামলায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হন তিনি।
প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, বিনয় নারওয়াল মাত্র দুই বছর আগে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। সন্ত্রাসী হামলায় তার মৃত্যুতে পরিবার, সম্প্রদায় এবং প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশী এবং স্থানীয়রা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার এক প্রতিবেশী নরেশ বনসাল বলেন, “কদিন আগে তার বিয়ে হলো। সবাই খুব খুশি ছিল। হঠাৎ আমরা খবর পেলাম যে, বন্দুকধারীরা তাকে হত্যা করেছে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে।”
এদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভয়াবহ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। এটি পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা বা এলইটি গোষ্ঠীর একটি ছায়া সংগঠন।
টিআরএফের উত্থান হয় ২০১৯ সালে। ওই বছরই বিজেপি সরকার সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে। যার ফলে জম্মু ও কাশ্মিরের ‘বিশেষ মর্যাদা’-র অবলুপ্তি হয়। এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে লস্কর-ই-তৈয়বার একটি ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। সেই সংগঠনেরই পাঁচ-ছ’জন মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়।
হামলার ঘটনার পর পহেলগাঁও উপত্যকায় নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরের অন্যান্য জায়গাও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার রাতেই কাশ্মিরে পৌঁছেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সৌদি আরব সফরসূচি কাঁটছাঁট করে বুধবার সকালে দিল্লি ফিরে এসেছেন। বিমানবন্দরেরই তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। দিল্লিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করবেন মোদি। তবে এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে নিরাপত্তাবাহিনী।
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ধ নত স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার
বান্দরবানের আলীকদমে পর্যটক ভ্রমণ পরিচালনাকারী পর্যটন সংস্থা ট্যুর এক্সপার্টের প্রধান বর্ষা ইসলাম ওরফে বৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পর্যটকদের নিয়ে ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড় ভ্রমণ শেষে আলীকদমে ফিরে আসার পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আলীকদম থানার পুলিশ তাঁকে আটক করে। এরপর পাহাড়ি ঢলে নিহত স্মৃতি আক্তারের বাবা হাবিবুর রহমানের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আজ শনিবার সকালে হাবিবুর রহমান স্মৃতি আক্তারের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় বেশ কয়েকজনকে আসামি করে আলীকদম থানায় মামলা করেন। মামলায় নিয়মকানুন অনুসরণ না করে ঝুঁকিপূর্ণ দুর্গম এলাকায় ভ্রমণ আয়োজনের অভিযোগ আনা হয়েছে বর্ষা ইসলামের বিরুদ্ধে।
গত বুধবার আলীকদমের দুর্গম ক্রিস্টং পাহাড় এলাকায় ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে একটি পাহাড়ি ঝরনায় তিনজন পর্যটক ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার জুবাইরুল ইসলাম ও শুক্রবার স্মৃতি আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। হাসান চৌধুরী নামে একজন পর্যটক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এর আগে গত ৮ জুন ট্যুর এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনায় দুই দলে ভাগ হয়ে ৩৩ জন পর্যটক আলীকদমের দুর্গম ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পর্যটকদের প্রথম দলটি ফিরে আসার পথে স্মৃতিসহ তিনজন শামুক তৈরির ঝরনায় পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন।
নিহত স্মৃতি আক্তারের বাবা হাবিবুর রহমান মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, বর্ষা ইসলামের পরিচালিত ট্যুর এক্সপার্ট প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড়ে ভ্রমণের ওপর আকর্ষণীয় পোস্ট করেন। ওই পোস্ট দেখে তাঁর মেয়ে স্মৃতি আক্তার আলীকদম যান। বৈরী আবহাওয়ায় ঝুঁকির বিষয়টি না জানিয়ে বিপজ্জনক জায়গায় পর্যটকদের নিয়ে গিয়ে বর্ষা ইসলাম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তা ছাড়া স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড পর্যাপ্ত সংখ্যায় সঙ্গে নিয়ে যাননি তাঁরা। স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড ছাড়া পাহাড়ি পরিবেশে তাঁর অনভিজ্ঞ মেয়ে স্মৃতি আক্তারসহ পর্যটকেরা আলীকদমের দিকে ফিরছিলেন। শামুকঝিরি ঝরনা এলাকায় এসে প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে স্মৃতি আক্তার ও সঙ্গে থাকা হাসান চৌধুরী এবং জুবাইরুল ইসলাম ভেসে যান। ট্যুর এক্সপার্টের প্রধান বর্ষা ইসলাম ও তাঁর সহযোগীদের অবহেলা, দায়িত্বহীন ও অদক্ষতায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল্লাহ আল মুমিন জানিয়েছেন, কোনো পর্যটক উপজেলা সদরের বাইরে ভ্রমণে গেলে উপজেলা পর্যটন সেবাকেন্দ্রে নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। প্রতি ১০ জনের জন্য একজন করে নিবন্ধিত ট্যুরিস্ট গাইড নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু ট্যুর এক্সপার্টের বর্ষা ইসলাম ১২ জন পর্যটকের নাম ও ঠিকানা দিয়ে ৩৩ পর্যটকের জন্য মাত্র একজন ট্যুরিস্ট গাইড নিয়েছিলেন সঙ্গে। ১২ জন ট্যুরিস্ট একজন গাইড নিয়ে আরও দূরে ভ্রমণে গেছেন। ২২ জন পর্যটককে কোনো গাইড ছাড়া ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ জন্য দুর্ঘটনায় পড়ে তিন পর্যটক নিখোঁজ হয়েছেন। এখনো একজনের কোনো হদিস মিলছে না।
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর্জা জহির উদ্দিন জানিয়েছেন, বর্ষা ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্যুর এক্সপার্ট গ্রুপের অন্য ব্যক্তিদেরও অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার বর্ষা ইসলামকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।