বিয়ে বিচ্ছেদ বেড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায়
Published: 23rd, April 2025 GMT
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার অনামিকা আক্তার (ছদ্মনাম) তিন বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন ব্যবসায়ী শামীম রহমানকে (ছদ্মনাম)। বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাদের কোলে আসে ছেলে সন্তান। সবকিছু মিলে ভালোই যাচ্ছিল দিন। কিন্তু হঠাৎ সংসারে দেখা দেয় অশান্তি। নতুন সম্পর্কে জড়ান শামীম। এর জেরে গত বছরের শেষ দিকে শামীম-অনামিকার আনুষ্ঠানিক বিয়ে বিচ্ছেদ হয়।
পুরান ঢাকার লালবাগের পারভেজ আলম (ছদ্মনাম) উন্নত জীবনের আশায় ২০২২ সালে ইউরোপে পাড়ি জমান। সেখান থেকে স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন নিয়মিত। প্রায়ই ভিডিও কলে কথা হতো। গত বছরের মাঝামাঝি পারভেজ জানতে পারেন তার স্ত্রী প্রিয়া খানম (ছদ্মনাম) আরেকজনের প্রেমে পড়েছেন। এ নিয়ে পরিবারে দেখা দেয় অশান্তি। অবশেষে গত অক্টোবরে দেশে ফিরে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেন পারভেজ।
দুটি বিচ্ছেদের ঘটনাই নথিভুক্ত হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের (ডিএসসিসি) রাজস্ব বিভাগে। এই বিভাগের তথ্য বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বিয়ে বিচ্ছেদ বাড়ছে। স্বামীর চেয়ে স্ত্রীরাই বিচ্ছেদ নিচ্ছেন বেশি, প্রায় আড়াইগুণ।
ডিএসসিসি রাজস্ব বিভাগের ‘লিপিবদ্ধকৃত বিয়ে ও তালাক নোটিশের হিসাব’ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এই সিটি করপোরেশন এলাকায় বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের ঘটনা ঘটেছে ৭ হাজার ৯১৩টি। এর মধ্যে স্বামীর আবেদনে বিচ্ছেদ হয়েছে ২ হাজার ১৪৯টি। বাকি ৫ হাজার ৭৬৪টি (আড়াইগুণের বেশি) বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে স্ত্রীর আবেদনে।
পরিসংখ্যান কি বলছে
২০২৩ সালে ডিএসসিসিতে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা নথিভুক্ত হয় ৭ হাজার ৩০৬টি। এর মধ্যে স্বামীর আবেদন ছিল ২ হাজার ২০টি এবং স্ত্রীর আবেদন ৫ হাজার ২৮৬টি। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে মোট বিচ্ছেদের ঘটনা আরও বেশি ছিল। ওই বছর ৭ হাজার ৬৯৮টি বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগে নথিভুক্ত হয়। এর মধ্যে স্বামীর আবেদন ছিল ২ হাজার ৩১৫টি এবং স্ত্রীর ৫ হাজার ৩৮৩টি।
২০২১ সালে ডিএসসিসিতে বিয়ে বিচ্ছেদ নথিভুক্ত হয় ৭ হাজার ২৪৫টি। এর মধ্যে স্বামীর আবেদন ২ হাজার ৬২টি এবং স্ত্রীর ৫ হাজার ১৮৩টি। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ওই এলাকায় ৬ হাজার ৩৪৫টি বিয়ে বিচ্ছেদের কথা ডিএসসিসির নথিতে পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোট-বড় নানা কারণে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এসব কারণের মধ্যে অন্যতম হলো প্রেম এবং মাদকাসক্তি। এছাড়া, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সময় না দেওয়া, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌতুক দাবি, শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি কারণে বিচ্ছেদ হচ্ছে।
ডিএসসিসি রাজস্ব বিভাগের গবেষণা কর্মকর্তা মো.
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শিপ্রা সরকার সমকালকে বলেন, ‘নারী শিক্ষা অর্জন করে অর্থনৈতিকভাবে এখন স্বচ্ছল। সিদ্ধান্ত নিতে কারও ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। এক সময় পরনির্ভরতার কারণে অন্যায়, অবিচার, নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করলেও এখন সেই পরিস্থিতি নেই। ফলে স্ত্রীর প্রতি অন্যায়-অবিচার হলে তারা আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’
তিনিও মনে করেন, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক বিচ্ছেদের একটি অন্যতম কারণ।
সীমাহীন প্রত্যাশা এবং একে-অপরের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ কমে যাওয়ায় বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী দুজনই ভাবেন, আমিই সঠিক, আমিই সুপিরিয়র। ফলে একে অপরকে গুরুত্ব দেন না, সংসারে অশান্তি লেগে থাকে।’
এই সমাজবিজ্ঞানীর মতে, আগে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল, সেটি এখন লক্ষ্য করা যায় না। আর বিশ্বাস-শ্রদ্ধা না থাকলে সম্পর্ক বেশিদিন টেকে না, বাস্তবে সেটাই ঘটছে।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে চিড় ধরলে সংসার রক্ষার উপায় তা হলে কি? শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্মীয় অনুশাসন ও বাঙালি সংস্কৃতির পারিবারিক বন্ধনে গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্পর্ক যে ক্ষণস্থায়ী, সেটি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড এনস স ব চ ছ দ র ঘটন ড এসস স এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’, শিক্ষার্থীরা পাবেন ২ ক্যাটাগরিতে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি ২০২৫’ নামের একটি শিক্ষাবৃত্তি। এর আওতায় আর্থিকভাবে অসচ্ছল, প্রান্তিক ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা আর্থিক সহায়তা পাবেন। এ বৃত্তির আবেদন শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অফিস আদেশে, বৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠাতে কলেজগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাবৃত্তির জন্য প্রাথমিকভাবে দুই ধরনের শিক্ষার্থীকে বিবেচনায় নেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে প্রথম ক্যাটাগরিতে পড়বেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী এবং দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে পড়বেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল, প্রান্তিক, সুবিধাবঞ্চিত অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এই বৃত্তি পেতে আবেদন করতে হবে কলেজের মাধ্যমে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পোর্টালে লগইন করে ‘শিক্ষাবৃত্তি তথ্যছক’ অপশনে গিয়ে তথ্য আপলোড করতে হবে।
আরও পড়ুনএকাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে আবেদন শুরু, ফি-মেধা কোটা-ভর্তির যোগ্যতা-গ্রুপ নির্বাচন যেভাবে১ ঘণ্টা আগেশিক্ষাবৃত্তির জন্য স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান), মাস্টার্স প্রিলিমিনারি ও স্নাতকোত্তর কোর্সে অধ্যয়নরত যেসব নিয়মিত শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারবেন, তাঁদের তালিকা নির্ধারণ করে দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষ ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতক (পাস) তৃতীয় বর্ষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ (তৃতীয় বর্ষের ফলাফলের ভিত্তিতে), মাস্টার্স প্রিলিমিনারি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে (অনার্সের ফলাফলের ভিত্তিতে) শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
আরও পড়ুনকমনওয়েলথ ফেলোশিপে আবেদনের সুযোগ, মাসে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সঙ্গে নানা সুবিধা৪ ঘণ্টা আগেবিশ্ববিদ্যালয় জানায়, শিক্ষার্থীদের মনোনয়ন ও যাচাই-বাছাই কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও শিক্ষাবৃত্তির নিয়মাবলি ওয়েবসাইটের কলেজ পোর্টালের ‘শিক্ষাবৃত্তি’ অপশনে পাওয়া যাবে।
এর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ১ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হচ্ছে ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২২ ঘণ্টা আগে