রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার অনামিকা আক্তার (ছদ্মনাম) তিন বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন ব্যবসায়ী শামীম রহমানকে (ছদ্মনাম)। বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাদের কোলে আসে ছেলে সন্তান। সবকিছু মিলে ভালোই যাচ্ছিল দিন। কিন্তু হঠাৎ সংসারে দেখা দেয় অশান্তি। নতুন সম্পর্কে জড়ান শামীম। এর জেরে গত বছরের শেষ দিকে শামীম-অনামিকার আনুষ্ঠানিক বিয়ে বিচ্ছেদ হয়।

পুরান ঢাকার লালবাগের পারভেজ আলম (ছদ্মনাম) উন্নত জীবনের আশায় ২০২২ সালে ইউরোপে পাড়ি জমান। সেখান থেকে স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন নিয়মিত। প্রায়ই ভিডিও কলে কথা হতো। গত বছরের মাঝামাঝি পারভেজ জানতে পারেন তার স্ত্রী প্রিয়া খানম (ছদ্মনাম) আরেকজনের প্রেমে পড়েছেন। এ নিয়ে পরিবারে দেখা দেয় অশান্তি। অবশেষে গত অক্টোবরে দেশে ফিরে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেন পারভেজ।  

দুটি বিচ্ছেদের ঘটনাই নথিভুক্ত হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের (ডিএসসিসি) রাজস্ব বিভাগে। এই বিভাগের তথ্য বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বিয়ে বিচ্ছেদ বাড়ছে। স্বামীর চেয়ে স্ত্রীরাই বিচ্ছেদ নিচ্ছেন বেশি, প্রায় আড়াইগুণ।

ডিএসসিসি রাজস্ব বিভাগের ‘লিপিবদ্ধকৃত বিয়ে ও তালাক নোটিশের হিসাব’ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এই সিটি করপোরেশন এলাকায় বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের ঘটনা ঘটেছে ৭ হাজার ৯১৩টি। এর মধ্যে স্বামীর আবেদনে বিচ্ছেদ হয়েছে ২ হাজার ১৪৯টি। বাকি ৫ হাজার ৭৬৪টি (আড়াইগুণের বেশি) বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে স্ত্রীর আবেদনে।

পরিসংখ্যান কি বলছে 

২০২৩ সালে ডিএসসিসিতে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা নথিভুক্ত হয় ৭ হাজার ৩০৬টি। এর মধ্যে স্বামীর আবেদন ছিল ২ হাজার ২০টি এবং স্ত্রীর আবেদন ৫ হাজার ২৮৬টি। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে মোট বিচ্ছেদের ঘটনা আরও বেশি ছিল। ওই বছর ৭ হাজার ৬৯৮টি বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগে নথিভুক্ত হয়। এর মধ্যে স্বামীর আবেদন ছিল ২ হাজার ৩১৫টি এবং স্ত্রীর ৫ হাজার ৩৮৩টি। 

২০২১ সালে ডিএসসিসিতে বিয়ে বিচ্ছেদ নথিভুক্ত হয় ৭ হাজার ২৪৫টি। এর মধ্যে স্বামীর আবেদন ২ হাজার ৬২টি এবং স্ত্রীর ৫ হাজার ১৮৩টি। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ওই এলাকায় ৬ হাজার ৩৪৫টি বিয়ে বিচ্ছেদের কথা ডিএসসিসির নথিতে পাওয়া যায়।

 

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোট-বড় নানা কারণে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এসব কারণের মধ্যে অন্যতম হলো প্রেম এবং মাদকাসক্তি। এছাড়া, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সময় না দেওয়া, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌতুক দাবি, শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি কারণে বিচ্ছেদ হচ্ছে। 

ডিএসসিসি রাজস্ব বিভাগের গবেষণা কর্মকর্তা মো.

আসাদুজ্জামান সমকালকে বলেন, ‘বিয়ে বিচ্ছেদের অধিকাংশের ঘটনার নেপথ্যের কারণ অনৈতিক সম্পর্ক বা পরকীয়া। আগে বিচ্ছেদের ঘটনা বেশি ঘটতো স্ত্রীকে নির্যাতন ও যৌতুকের কারণে। আর এখন বেশিরভাগ আবেদনে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন, ভুল বোঝাবুঝি, পারিবারিক কলহ ইত্যাদি উল্লেখ থাকছে।’ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে মেনে নেওয়ার প্রবণতা দিনদিন কমছে বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শিপ্রা সরকার সমকালকে বলেন, ‘নারী শিক্ষা অর্জন করে অর্থনৈতিকভাবে এখন স্বচ্ছল। সিদ্ধান্ত নিতে কারও ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। এক সময় পরনির্ভরতার কারণে অন্যায়, অবিচার, নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করলেও এখন সেই পরিস্থিতি নেই। ফলে স্ত্রীর প্রতি অন্যায়-অবিচার হলে তারা আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’ 

তিনিও মনে করেন, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক বিচ্ছেদের একটি অন্যতম কারণ।

সীমাহীন প্রত্যাশা এবং একে-অপরের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ কমে যাওয়ায় বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী দুজনই ভাবেন, আমিই সঠিক, আমিই সুপিরিয়র। ফলে একে অপরকে গুরুত্ব দেন না, সংসারে অশান্তি লেগে থাকে।’ 

এই সমাজবিজ্ঞানীর মতে, আগে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল, সেটি এখন লক্ষ্য করা যায় না। আর বিশ্বাস-শ্রদ্ধা না থাকলে সম্পর্ক বেশিদিন টেকে না, বাস্তবে সেটাই ঘটছে।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে চিড় ধরলে সংসার রক্ষার উপায় তা হলে কি? শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্মীয় অনুশাসন ও বাঙালি সংস্কৃতির পারিবারিক বন্ধনে গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্পর্ক যে ক্ষণস্থায়ী, সেটি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড এনস স ব চ ছ দ র ঘটন ড এসস স এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

চুইঝাল চাষে সাফল্য পেয়ে প্রবাসফেরত শাহ আলম বললেন, ‘আর বিদেশে যাব না’

সিরাজগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চুইঝাল চাষ করে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন বিদেশফেরত এক ব্যক্তি। জেলায় মসলাজাতীয় ফসল চুইঝালের সফল বাণিজ্যিক চাষ এটিই প্রথম। এই সফলতায় বর্তমানে এলাকার কৃষক, তরুণ ও যুবকেরা চুইঝাল চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ওই ব্যক্তির নাম শাহ আলম (৪৫)। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের শুকুর আলীর বড় ছেলে। প্রায় এক যুগ সৌদি আরবে প্রবাসজীবন কাটিয়ে গ্রামে ফিরে ২০২২ সালে সিরাজগঞ্জে চুইঝাল চাষের উদ্যোগ নেন তিনি।

সম্প্রতি এক দুপুরে শাহ আলমের চুইঝালের খেতে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে ফসল উত্তোলন করা হচ্ছে। বেশ কিছু স্থানে সমূলে চুইঝাল গাছগুলো তুলে বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারেরা গিয়ে এসব চুইঝাল কিনে নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, ‘বিদেশে থাকা অবস্থাতেই ইউটিউবে খুলনা এলাকায় চুইঝাল চাষে কৃষকদের সফলতা দেখে আমার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে খুলনা এলাকায় চুইঝালের চারা উৎপাদকারী একটি নার্সারির মালিকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি আমাকে বেশ উদ্বুদ্ধ করেছেন। এরপর দেশে ফিরে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সমন্বিত কৃষি ইউনিটের (কৃষি খাত) আওতায় উচ্চমূল্যের মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন প্রদর্শনী বাস্তবায়নকারী স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এনডিপি) সহায়তায় চুইঝালের চাষ শুরু করি। ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট বাড়ির পাশে ৩৩ শতক জমি ৩ বছরের জন্য ৬০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে এগুলোর চাষ শুরু করা হয়।’

শাহ আলমের দাবি, চুইঝাল চাষ শুরু থেকে এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। অন্যদিকে চলতি বছর দুই ধাপে ৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকার চুইঝাল বিক্রি করেছেন।

সিরাজগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চুইঝাল চাষ করে সফল হওয়ার দাবি করেছেন প্রবাসফেরত শাহ আলম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চুইঝাল চাষে সাফল্য পেয়ে প্রবাসফেরত শাহ আলম বললেন, ‘আর বিদেশে যাব না’