১৫ বিচারকের তথ্য চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে দুদকের চিঠি
Published: 23rd, April 2025 GMT
বিচার বিভাগের ১৫ বিচারকের সম্পদের বিবরণ ও ব্যক্তিগত নথির তথ্য চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিটি মঙ্গলবার সচিবের দপ্তরে পাঠানো হয়। দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়, আইন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা, ঢাকার সাবেক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) রেজাউল করিম চৌধুরী ও সাবেক অতিরিক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ঘুষ গ্রহণ, অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযোগটির সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আরও ১৫ জন বিচারকের সম্পদ বিবরণী ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। ওই ১৫ জনের সর্বশেষ দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী, ব্যক্তিগত নথির ফটোকপি ও ব্যক্তিগত ডাটাশিটের সত্যায়িত ফটোকপি ২৯ এপ্রিলের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ মাল মামুনের সমন্বয়ে গঠিত টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে।
দুদকের চিঠিতে যে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে সাবেক যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহাসহ ওই তিনজনের নামও রয়েছে। চিঠিতে ১৫ জনের নাম পদবী উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা, ঢাকার সাবেক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) রেজাউল করিম চৌধুর, সাবেক অতিরিক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্ঘাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শেখ গোলাম মাহবুব, কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্ঘাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাহবুবুর রহমান সরকার, সিলেটের সাবেক জেলা জজ মনির কামাল, সাবেক ঢাকা মহানগর আদালতের সাবেক অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন, মাগুরার সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ মুশফিকুর ইসলাম, গাজীপুরের সাবেক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাইসারুল ইসলাম, নরসিংদীর সবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোল্লা সাইফুল আলম, ময়মনসিংহের সাবেক বিশেষ জজ ফারহানা ফেরদৌস, শেরপুরের নারী ও শিশু নির্ঘাতন ট্রাইব্যুনালের সাবেক জজ কামরুন নাহার রুমি, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ শওকত হোসেন, সিরাজগঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ এরফান উল্লাহ ও হাবিগঞ্জ জেলা জজ সাইফুল আলম চৌধুরী।  
  
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ স এমএম ১৫ জন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরের এমএম কলেজের ক্লাবগুলো যেভাবে শিক্ষার্থীদের তৈরি করছে
মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না রোকেয়া তাসমিমের। কলেজের ইতিহাস ক্লাবে যদি যুক্ত না হতেন, রোকেয়ার হয়তো জানাই হতো না, চমৎকার উপস্থাপনাও তিনি করতে জানেন। রোকেয়া পড়েন যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের ইতিহাস বিভাগে। দ্বিতীয় বর্ষে।
রোকেয়া তাসমিমের মতো এমন আরও অনেক শিক্ষার্থীই নিজেকে ‘আবিষ্কারের’ সুযোগ পাচ্ছেন ক্লাব কার্যক্রমের মাধ্যমে। কলেজের ১৯টি বিভাগের মধ্যে অন্তত ৯টি বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই নিজস্ব ক্লাব আছে। বিভাগের শিক্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতায় শুধু যে ক্লাসরুমের বাইরেও বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখার চর্চা হচ্ছে, তা নয়, এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অর্জন করছেন নেতৃত্বের গুণ।
ইতিহাসের ইতিবাচক শক্তিগত ১৫ অক্টোবর ঢুঁ মেরেছিলাম এমএম কলেজের ইতিহাস বিভাগে। দেখা গেল একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী বিভাগের সেমিনার রুমে বসে আড্ডায় মেতেছেন। একফাঁকে বিভাগের শিক্ষার্থী ও ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় আবৃত্তি করে শোনালেন নিজের লেখা রুবাই (চার পঙ্ক্তির কবিতা)। একটি করে রুবাই শেষ হচ্ছিল, আর তাঁর সহপাঠীরা বলে উঠছিলেন, ‘সাধু সাধু’! এরপর দ্বিতীয় বর্ষের রোকেয়া তাসমিম শোনালেন গান। তালিও পেলেন তুমুল।
আরও পড়ুনঘরে শান্তি বজায় রাখতে কথাবার্তায় সংযত থাকতে হবে কোন রাশির জাতককে০১ নভেম্বর ২০২৫বিভাগের শিক্ষার্থী লিমা খাতুন বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের মাধ্যমেই প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি হয়েছে। নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা বেড়েছে। ক্লাবের উদ্যোগে কখনো আমরা বেরিয়ে পড়েছি রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী সুন্দরবনের ধুমঘাটে। আবার কখনো ভরত রাজার দেউল পরিদর্শনে। সেখান থেকে ফিরে ইতিহাসের খোঁজে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আমাদের মধ্যে গবেষণামুখী হওয়ার উৎসাহ বেড়েছে। সেমিনার পেপার তৈরির মতো জটিল বিষয় আমরা রপ্ত করেছি। ক্লাব আছে বলেই প্রতিদিন একধরনের রোমাঞ্চ নিয়ে ক্যাম্পাসে আসি, পাঠ গ্রহণ করছি।’
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, এই কলেজের ১৯টি বিভাগের মধ্যে শুরুতে ইতিহাস বিভাগই ক্লাব চালু করেছিল—২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর। ক্লাবের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ভ্রমণ, ‘রিসার্চ মেথডোলজি’ শিরোনামে দিনব্যাপী কর্মশালা, ইফতার পার্টি, টি পার্টি ও পিঠা উৎসবের মতো নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। দুর্গত মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘এই ক্লাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে কাজ করছে। পড়ালেখায় আনন্দ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গবেষণামুখী হয়েছে। সেমিনার, ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণসহ অনুষ্ঠান আয়োজনে কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়, তা-ও তারা শিখেছে। জড়তা কাটিয়ে কথা বলার দক্ষতা অর্জন করেছে।’
গণিতের গতিস্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতভীতি দূর করতে দুর্বার গতিতে কাজ করে যাচ্ছে এমএম কলেজের গণিত ক্লাব। ক্লাবের উদ্যোগে ইতিমধ্যে যশোর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে অলিম্পিয়াড। অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া সেরা ১০ জন সনদ পেয়েছেন। তিনজন জিতেছেন পুরস্কার।
গণিত ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গণিতভীতি দূর করতেই আমরা কাজ করি।’ ক্লাবের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গণিতের জটিল সমস্যা তুলে দিয়ে আবার সেটির সমাধানও দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া পিঠা উৎসব, বার্ষিক বনভোজন ও মাসিক বৈঠকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করা হয়।
শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভাগের ক্লাবগুলো অবদান রাখছে। এ ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বরাবরই কলেজ কর্তৃপক্ষ উৎসাহ দিয়েছে। প্রতিটি বিভাগ যেন সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্লাব গড়ে তোলে, সে বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আছে।এস এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজফিন্যান্স ক্লাবের উদ্যোগে ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট