জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। দলের হারের দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তৃতীয় দিন ৬০ রানে অপরাজিত থেকে দিন শুরু করেন তিনি। চতুর্থ দিনের প্রথম বলে শট খেলতে গিয়ে আউট হন। ওই আউটের কারণে মোমেন্টাম হারিয়ে দল ম্যাচ হেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন চারে ব্যাট করা শান্ত।

ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, ‘আমার কাছে যদি জানতে চান। বলবো- ক্যাপ্টেন হিসেবে  পুরো ম্যাচটা আমি একা হারায় দিছি। সত্যি কথা। কারণ আমার ওই আউটে পুরো খেলা নষ্ট হয়ে গেছে। ওই খানে ৫০ রানের জুটি হলে ২২০ রানের লিড নিতে পারলে আমরা ভালো অবস্থানে থাকতাম। দলের দিকে যেতে চাই না, হারের পুরো দায়ভার আমি নিতে চাই। কারণ খুব বাজে সময় আমি আউট হয়েছি।’

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেরে হতাশ বলে জানিয়েছেন শান্ত। তবে অতিরিক্ত হতাশ না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মিরাজ ও তাইজুল অল্প রানের পুঁজিতেও দুর্দান্ত লড়াই করেছেন বলেও জানান শান্ত, ‘পুরো ম্যাচ বিশ্লেষণ করলে বলবো, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলিনি। ভালো খেলিনি তাই হেরেছি। আমার আউটের কারণে মোমেন্টাম তারা পেয়ে যাওয়ায় হেরে গেছি। মিরাজ ও তাইজুল ভাই ভালো ট্রাই করেছি। অসম্ভব ভালো বোলিং করেছে। কিন্তু বোর্ডে পর্যাপ্ত রান ছিল না।’

বল হাতে শুরু থেকে ভালো করছিলেন জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেজিং মুজুরাবানি। উচ্চতা কাজে লাগিয়ে শট লেন্থের বলে সুবিধা আদায় করে নিচ্ছিলেন। তার বিপক্ষে ক্রিজে এসেই শট খেলার সিদ্ধান্তকে ভুল বলেই স্বীকার করেছেন শান্ত, ‘আমি সাধারণত রানের জন্য চিন্তা করি। যেটা আউট হয়েছি, আমি সময় নিতে পারতাম। ওই জায়গায় আরেকটু সময় নিলে ভালো হতো। এই শটগুলো আমি খেলি, এটাও সত্য। যে পরিস্থিতি ছিল আমি শটটা না খেললেও পারতাম।’

শান্ত জানিয়েছেন, সিলেটের উইকেট স্পোর্টিং ছিল। যেখানে ব্যাটারদের পাশাপাশি বোলারদের জন্যও সুবিধা ছিল। জিম্বাবুয়ের কাছে হারায় চট্টগ্রামে ঘরের সুবিধা নিয়ে স্পিন বান্ধব উইকেটে খেলতে চান না তারা, ‘আমার মনে হয়, স্পোর্টিং উইকেটে খেলানো উচিত। সামনের ম্যাচেও এমন উইকেট হওয়া উচিত। হেরে গেছি বলে অনেক বাজে উইকেটে খেলে হোম অ্যাডভানটেজ নেব না। এগুলো অনেক সময় নির্ভর করে কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলছি। এখন যে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলছি যেমন উইকেট ছিল ওমনই হলে ভালো।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত

লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। 

রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা। 

জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা। 

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন। 

আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। 

বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো। 

আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।

ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। 

আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’  

উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।

ঢাকা/লিটন/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ