১. শোগোনাই
জাপানি শব্দ ‘শোগোনাই’–এর অর্থ ‘কিছুই করার নেই’। এতে যা কিছু আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটা সহজে মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর যা কিছু আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে, সেসবে ‘ফোকাস’ করতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে।
২. ওয়াবি-সাবিএর অর্থ ‘পারফেক্ট’ বলে কিছু হয় না। এর মাধ্যমে পারফেকশন না খুঁজে বরং হৃদয় খুলে ‘ইম্পারফেকশন’–এর সৌন্দর্য উদ্যাপন করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুননিজের খুঁতগুলো যে কারণে এবং যেভাবে মেনে নেবেন২১ এপ্রিল ২০২৫৩.কাইজেন
এর অর্থ ছোট ছোট উন্নতিতে নজর দেওয়া। একবারে অনেক বড় পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ না করে বরং একটু একটু করে সামনে এগোনো। প্রতিদিন আগের দিনের চেয়ে ১ শতাংশ ‘বেটার’ হওয়ার চেষ্টা করা। কেননা কেবল এভাবে একটু একটু করে নিয়মিতভাবে এগোনোর ফলে আপনি যা কিছু অর্জন করবেন, তা হবে টেকসই।
৪. শিনরিন-ইয়োকু‘শিনরিন’ শব্দের অর্থ বন বা জঙ্গল। আর ‘ইয়োকু’ অর্থ গোসল। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ফরেস্ট বাথিং’। বনে গোসল? আদতে এর মাধ্যমে বেশি বেশি জঙ্গলে ঘোরা বা প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোর কথা বলা হয়েছে। মানসিক চাপ থেকে মুক্তির জন্য, স্ট্রেস হরমোন কমাতে প্রকৃতির জাদুকরী ভূমিকার কথা বলা হয়েছে। মন শান্ত করতে ও পরিষ্কারভাবে চিন্তা করার জন্যও প্রাকৃতিক সবুজ বা গাছপালার কোনো বিকল্প নেই। আদতে গোসলে যেমন শরীরের ময়লা পরিষ্কার হয়, তেমনি মনে জমে থাকা সব ক্লান্তি, অবসাদ, ভার, জটিলতা, দুশ্চিন্তা দূর করতে প্রয়োজন হয় মনের গোসল। আর মনের গোসলের জন্যই আপনাকে নিয়মিত জঙ্গলে যেতে বা প্রকৃতির সান্নিধ্যে যেতে বলা হচ্ছে।
আরও পড়ুনচৌকস হওয়ার ৫ জাপানি টেকনিক০৭ এপ্রিল ২০২৫৫. ইকিগাইএর সম্পর্কে হয়তো জানেন। ইকিগাই বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয়। এর অর্থ প্রতিদিন আপনি একটা উদ্দেশ্য নিয়ে ঘুম থেকে উঠবেন। ইকিগাইয়ের মূলকথা চারটি—
ঘুম থেকে উঠে এমন কিছু করুন, যেটা আপনি ভালোবাসেন।
ঘুম থেকে উঠে এমন কিছু করুন, যেটাতে আপনি দক্ষ।
ঘুম থেকে উঠে এমন কিছু করুন, যেটা বিশ্বের জন্য বা মানুষ, প্রাণ ও প্রকৃতির কল্যাণে দরকার।
ঘুম থেকে উঠে এমন কিছু করুন, যার মাধ্যমে আপনি যথেষ্ট উপার্জন করতে পারেন।
সূত্র: বিজনেস গ্রোথ মেন্টর
আরও পড়ুনএই ৪ প্রবাদ থেকেই বোঝা যায়, ফিনল্যান্ড কেন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ২০ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।