তিস্তা সড়ক সেতুর টোল প্লাজায় সশস্ত্র হামলা, ১৪ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ
Published: 24th, April 2025 GMT
তিস্তা সড়ক সেতুর টোল প্লাজায় হেলমেটধারী সশস্ত্র ডাকাতরা হামলা করেছে। এ সময় আহত হয়েছেন তিনজন। হামলাকারীরা সেখানে থাকা ১৪ লাখ টাকা লুট করে নিয়েছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার রাত ৯টার দিকে তিস্তা সড়ক সেতুর লালমনিরহাট অংশে অবস্থিত টোল প্লাজায় এই ঘটনা ঘটে।
টোল প্লাজার ঠিকাদার রানা কনস্ট্রাকশনের পার্টনার রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু জানান, বুধবার রাত ৯টার দিকে ২০ থেকে ২৫টি মোটরসাইকেলে এসে হেলমেট পরিহিত সশস্ত্র ডাকাত দল টোল প্লাজায় অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এ সময় পুরো টোল প্লাজা ভাঙচুর করে তারা। টোল প্লাজার ক্যাশ বাক্সে থাকা দু’দিনের অন্তত ১৪ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। তাদের হামলায় কর্মচারী সুরুজ মিয়া (৪০), মুসলিম মিয়া (৩৭) ও জুয়েল ইসলাম (২৮) আহত হয়। তাদের কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ঘটনার সময় এসআই রওশন আলীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম টোল প্লাজার মাত্র ২০ ফুট দূরে টহলে থাকলেও হামলা ঠেকানোর কোনো উদ্যোগ নেননি তারা। কর্মচারীরা পুলিশের সহযোগিতা চাইলেও তারা সাড়া দেননি বরং ঘটনার পর পুলিশের ওই এসআই টোল প্লাজায় লেগে থাকা রক্তের দাগ পানি দিয়ে ধুয়ে দিয়েছেন। ঘটনাটি খুবই রহস্যজনক। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তিনি।
টোল প্লাজার ম্যানেজার দাউদ আলী সরদার জানান, ঘটনার সময় পুলিশের নীরব ভূমিকার কারণে ডাকাতরা নির্বিঘ্নে ডাকাতি করে চলে যেতে পেরেছে। ডাকাত দলের সঙ্গে পুলিশের সখ্যতা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে পুলিশের টহল দলে থাকা এসআই রওশন আলী জানান, তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে আসতে আসতেই হামলাকারীরা দ্রুত লুটপাট করে চলে যায়।
এ ঘটনায় টোল প্লাজার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেছেন নাজমুল আলম নাজু।
লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরুন্নবী বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, ‘রাতে ঘটনা শোনার পরই ঘটনাস্থলে গেছি। বিষয়টি তদন্ত করছি। পুলিশের গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি
রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রুজুর আগে এজাহার ফাঁসের ঘটনায় এবার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) বদলি করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা চলছে।
নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে বদলি হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এস এম রকিবুল ইসলাম। চাঁদাবাজির মামলার এজাহার থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই তিনি সেটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ওরফে লিমনের কাছে। এমদাদুল হক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব। ২৩ জুলাই রাতে আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এজাহার ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোমবার এসআই রকিবুলকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
এসআই রকিবুলের সঙ্গে সেই রাতে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেন এমদাদুল হক নিজেই। হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথন ভিডিও করে রেখেছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, এমদাদুল হক সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন। এসআই রকিবুল তাঁর উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হচ্ছে, হচ্ছে...রেকর্ডটা করতে দে।’ এমদাদুল জানতে চান, ‘আচ্ছা, ওর (মোস্তাফিজুর রহমানের) মামলাডা হলো, কে কে ভাই বলেন তো একটু। বলা যাবে?’ এসআই বলেন, ‘তুই ফোন দিছিস তোর পরে আমি গেছি। যায়ে এজাহার নিসি, তোরে দিসি। আমি জানি? কমিশনার অফিস থেকে এজাহার লিখিসে।’ এমদাদুল প্রশ্ন করেন, ‘ওখানেই এজাহার লিখেছে? কমিশনার অফিসে?’ এসআই বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখান থাইকা অফিসে থেকে এজাহার পাঠায়ে দিসে। অপারেটর তাই কলো যে স্যার, পেনড্রাইভে করে এজাহার পাঠায় দিসে ফোর্স দিয়ে।’
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এমদাদুল বলেন, ‘ও, কমিশনার নিজেই লিখেছে?’ এসআই বলেন, ‘তা জানি না। সে (পুলিশ কমিশনার) তো আর নিজে লেখে না। ওই অফিস (আরএমপি সদর দপ্তর) থেকে পাঠায়ছে। আমি কাজ করতেছি, ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি। রাখো।’
পরে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি ও বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। সেখানে মাইকে বাজিয়ে শোনানো হয় এসআই রকিবুল ও এমদাদুলের এই কল রেকর্ড।
এরপর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ। বিষয়টি বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসআই রকিবুল ইসলামকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গতকাল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘রকিবুল ইসলামের গত তিন মাসের চাকরির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই কল রেকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কল রেকর্ডে সে যা বলেছে, তার ব্যাপারে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’
পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো মামলার এজাহার পাঠানোর প্রসঙ্গে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনো হয় না। মামলার বাদী থানায় এসে লিখিত এজাহার ওসির কাছে জমা দেন অথবা লিখতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখে তা বাদীকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি তাতে সায় দিলে টিপসই নেওয়া হয়।’ কমিশনার কার্যালয় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা পাঠানো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাতে কমিশনার অফিসে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি রেকর্ডটি শুনেছি। বলেছে, কমিশনার অফিস থেকে। এখন কমিশনার তো আরও আছে। সেটা ঠিক নয়।’