খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সহউপাচার্য শেখ শরীফুল আলম বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করেননি; বরং তিনি অব্যাহতি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকা এবং অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কুয়েটের উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ ও সহউপাচার্য শেখ শরীফুল আলম পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর শেখ শরীফুল আলম এ কথা জানিয়েছেন। তবে বিষয়ে জানতে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

শেখ শরীফুল আলম আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবরে দেখছি যে কুয়েটের ভিসি ও প্রোভিসিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং অধ্যাপক হারুন অর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এ–সংক্রান্ত কোনো মেইল এখনো আমি পাইনি। আর আমি পদত্যাগ করিনি বা পদত্যাগের জন্য কোনো চিঠি পাঠাইনি।’

শেখ শরীফুল আলম আরও বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টার মুঠোফোন নম্বর আমার কাছে ছিল না। তাই আমি শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে লেখা একটা চিঠি পাঠিয়েছি ইউজিসির একজন সদস্যের কাছে। সেখানে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার মতো পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছি বা অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।’

আরও পড়ুনঅনশন ভাঙলেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা, ক্যাম্পাসে উল্লাস৮ ঘণ্টা আগে

শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর লেখা ওই চিঠির একটি কপি প্রথম আলোর কাছে আছে। এতে শেখ শরীফুল আলম বলেছেন, ‘গত বছরের ৪ ডিসেম্বর তিনি সহউপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তবে যোগদানের পর থেকে উপাচার্য তাঁকে কোনো প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজে সহযোগিতা করেননি। উপরন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক সহউপাচার্যের সীমিত আকারে প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজ করার যে নীতিমালা ছিল, তা গত ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৭তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলে গত চার মাসে প্রশাসনিক কাজ এবং আর্থিক বিলে স্বাক্ষর করতে না দিয়ে তাঁকে বঞ্চিত করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য পদটি একটি অলংকারিক পদে পরিণত করা হয়।’

শেখ শরীফুল আলম ওই চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘আমি নিজে এখনো আমার অপরাধ সম্পর্কে জানি না এবং আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি, যা খুবই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়া এবং কোনো অপরাধ বা অপকর্ম না করে অব্যাহতি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুল বার্তা যাবে বলে মনে করি।’

আরও পড়ুনকুয়েটে শিক্ষা উপদেষ্টার অনুরোধে সাড়া দেননি শিক্ষার্থীরা, অনশন অব্যাহত, ক্যাম্পাসে আবার বিক্ষোভ২৩ এপ্রিল ২০২৫

এর আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সহউপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে। অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্যে থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।

উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীরা প্রায় ৫৮ ঘণ্টা পর তাঁদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য (ইউজিসি) অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।

গতকাল দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল বিকেল থেকে ছাত্রদের ছয়টি ও ছাত্রীদের একটি হল আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। সভায় আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু করার আগের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র উপ চ র য পদত য গ

এছাড়াও পড়ুন:

তিন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় ডিআরইউ’র উদ্বেগ

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সাংবাদিক রফিকুল বাসার, মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডিআরইউ।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সংবাদকর্মীদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় এ উদ্বেগ জানান।

উল্লেখ্য, চ্যানেল আই’র সাংবাদিক রফিকুল বাসার, এটিএন বাংলার মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।

ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন।

এএএম//

সম্পর্কিত নিবন্ধ