স্ত্রীর লাশ গুম করে ছেলেকে নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেন মমিন
Published: 24th, April 2025 GMT
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ধনুসাড়া গ্রামে সাহিদা বেগম নামে বৃদ্ধাকে হত্যা করেন তাঁর স্বামী আবদুল মমিন। তিনি ধনুসাড়া জামে মসজিদের ইমাম। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে স্ত্রীকে হত্যা করে লাশটি কাঁধে করে নিয়ে বাড়ির একটি সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর গুম করে রাখেন। এর পর গোসল করে ফজরের নামাজের ইমামতি করতে মসজিদে চলে যান। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার চৌদ্দগ্রাম থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, আবদুল মমিনের মায়ের বয়স প্রায় ১৩০ বছর। সুস্থ থাকলেও বয়সের ভারে চলাফেরা করতে পারেন না। তাই তাঁর মায়ের সেবাযত্ন নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এ অবস্থায় আবদুল মমিন (৭০) ও তাঁর ভাই এক মাস করে পালাক্রমে মায়ের দায়িত্ব নিয়ে সেবাযত্ন করছেন। মমিনের ছেলে তাদের পুরাতন বাড়িতে মা ও পরিবার নিয়ে থাকেন। মমিন ও তাঁর স্ত্রী সাহিদা বেগম (৬০) ধনুসাড়া পূর্বপাড়ায় তাদের নতুন বাড়িতে থাকেন। তিনি স্থানীয় মসজিদে ইমামতি করেন। তাঁর মা যখন তাঁর পুরাতন বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তখন মমিন সেখানে মায়ের খোঁজখবর নিতে যান। তখন মা নালিশ করেন তাঁর স্ত্রী (সাহিদা) দুর্ব্যবহার করেছেন। তখন মমিন মনে মনে রাগান্বিত হন।
ওসি হিলাল উদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তার ইমাম পুলিশকে জানিয়েছে, ওইদিন রাতে মমিন তাঁর স্ত্রী সাহিদা বেগমকে মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণের কথা জিজ্ঞাসা করেন। এতে সাহিদা বেগম গালমন্দ শুরু করেন। মমিন বিরক্ত হয়ে বালিশ চাপা দিয়ে তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করেন। পরে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে বাড়ির পাশে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতরে রেখে ঢাকনা লাগিয়ে দেন। লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় সাহিদা বেগমের পেটিকোটটি তাঁর শরীর থেকে পড়ে যায়। লাশ সেপটিক ট্যাঙ্কে রেখে বাড়ির নলকূপ গোসল করে ভোর ৫টায় আবদুল মমিন মসজিদে চলে যান। মসজিদ থেকে এসে তাঁর ছেলেকে ফোন করে বলেন, তাঁর মাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে লাশটি খুঁজে পান তারা। লাশ খোঁজার সময় আবদুল মমিন সবার সঙ্গেই ছিলেন। তাই তাঁকে কেউ সন্দেহ করেনি।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি জানান, এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন তাঁর ছেলে মাছুম বিল্লাহ। প্রধান সাক্ষী করা হয় তাঁর বাবা আবদুল মমিনকে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৭ মার্চ আবদুল মমিনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আবদুল মমিন তাঁর স্ত্রী সাহিদা বেগমকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। আদালতেও জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র
গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানেরইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।
ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।
ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।