সিডিএ ও চসিকের গাফিলতি খতিয়ে দেখতে দুদকের অভিযান
Published: 27th, April 2025 GMT
হিজড়া খালে পড়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) গাফিলতি রয়েছে কি না, তা তদন্তে কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার সংস্থাটি সিটি করপোরেশন ও সিডিএতে অভিযান চালিয়েছে। এ ছাড়া নগরের হিজড়া খালের যে উন্মুক্ত স্থানে ব্যাটারিচালিত রিকশাটি পড়ে গিয়েছিল, সে স্থানও পরিদর্শন করেছে দুদকের দল।
‘নগরের খাল-নালায় পড়ে মৃত্যু: মৃত্যুর দায় নেয় না, তদন্তও করে না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ২১ এপ্রিল প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দুদক তদন্ত শুরু করেছে বলে জানান সংস্থার এক কর্মকর্তা।
১৮ এপ্রিল রাত আটটার দিকে মায়ের কোলে থাকা ছয় মাস বয়সী শিশুসহ তিনজনকে নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা হিজড়া খালে পড়ে যায়। রিকশায় থাকা শিশুটির মা ও দাদি খাল থেকে উঠে এলেও শিশুটির খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থল থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে চাক্তাই খালে সেহরিশ নামের শিশুটির নিথর দেহ পাওয়া যায়।
দুদকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিটি করপোরেশন ও সিডিএ নগরের নালা ও খাল যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সংগ্রহ করা হয় প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র।
এ ছাড়া নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে দুদকের দল। অভিযানে যাওয়া দুদকের কর্মকর্তারা জানান, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) যে নিরাপত্তাবেষ্টনী বা রেলিংয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে, পরিদর্শনে গিয়ে মূল কাজের সঙ্গে তার মিল পাওয়া যায়নি। আরও কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে।
এদিকে সার্বিক বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ করেন দুদক কর্মকর্তারা। এ সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দুদককে জানান, ১৮ এপ্রিল হিজড়া খালে পড়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় করপোরেশনের সচিবকে প্রধান করে চার সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সিডিএতে অভিযান চালায় দুদক। এ সময় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন দুদক কর্মকর্তারা। আজ দুপুরে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত প রকল প নগর র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম অধিকার ও সুস্থ কর্মপরিবেশ
আজ মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী মেহনতি মানুষদের স্মরণ করিবার দিন। তৎসহিত সকল শ্রমজীবী মানুষের জন্য মর্যাদাকর জীবন নিশ্চিতকরণের সংগ্রামে নূতন শপথ গ্রহণের দিন।
মে দিবস বিশ্বের শ্রমিকদের সংহতি যদ্রূপ বৃদ্ধি করিয়াছে, তদ্রূপ তাহাদিগকে অধিকার সচেতনও করিয়াছে; প্রেরণা জোগাইয়া চলিয়াছে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে। মে দিবস বাংলাদেশসহ বিশ্বের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়া স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশসমূহের জন্য বিপুল প্রেরণার উৎসরূপে কাজ করিয়াছে।
তাহারই প্রতিফলনস্বরূপ এই সকল দেশে ছুটিসহকারে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়। উন্নত দেশসমূহ এই দিবসে পৃথক ছুটির ব্যবস্থা না করিলেও উহার প্রভাব উপেক্ষা করিতে পারে নাই। তাই ভিন্ন প্রকারে সেই সকল দেশেও দিবসটি পালিত হয়। আন্তর্জাতিকভাবে আজিকে শ্রমমান লইয়া যে আলোচনা হয়, জাতীয় ন্যূনতম মজুরিসহ শ্রমিকের বহু অধিকার আজিকে যে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বহু দেশে কার্যকর হইয়াছে, উহারও পশ্চাতে রহিয়াছে মে দিবসের চেতনা। তবে ইহা সত্য, বাংলাদেশে ঘটা করিয়া দিবসটি পালিত হইলেও মজুরি ও কর্মপরিবেশ প্রশ্নে খামতি সীমাহীন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতসমূহে শ্রমিকদের জন্য এক প্রকার আইনি আশ্রয় থাকিলেও বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে উহার লেশমাত্র নাই। শেষোক্ত খাতে কোটি কোটি শ্রমিক উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও অন্যান্য অধিকার হইতে বঞ্চিত।
এই বৎসর শ্রমিক দিবস এমন সময়ে উপস্থিত, যখন গণঅভ্যুত্থানের ফসলস্বরূপ দেশে নূতন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে। সেই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসাবে শ্রম খাতের সংস্কারেও উদ্যোগী। তাহাদের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে প্রতিবেদনও দাখিল করিয়াছে, যথায় দেশের সাড়ে সাত কোটি শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার-সংক্রান্ত একগুচ্ছ সুপারিশ রহিয়াছে। প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়োজিত সকল শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ ন্যূনতম মানদণ্ডরূপে বিবেচিত হইবে– কমিশনের এই সুপারিশ যুগান্তকারী বলিয়া আমরা মনে করি। উপরন্তু কমিশন ইহাও বলিয়াছে, কোনো খাতের মজুরি কাঠামো নির্ধারণে পরিবারে একক উপার্জনকারী হিসাবে বিবেচনায় লইয়া এমন পরিমাণ নির্ধারণ করিতে হইবে, যাহাতে শ্রমিক তাঁহার পরিবারের প্রয়োজন মিটাইতে পারেন।
বিভিন্ন খাতের শ্রমিকের মজুরি তিন বৎসর অন্তর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণ, মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য আপৎকালীন তহবিল, ট্রেড ইউনিয়ন করিবার শর্ত শিথিল, স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস এবং স্থায়ী শ্রম কমিশন প্রতিষ্ঠা-সংক্রান্ত সুপারিশসমূহও প্রণিধানযোগ্য। একটা সময় ছিল যখন শ্রমিক আন্দোলন বলিতে কারখানা ভাঙচুর ও সম্পদ ধ্বংস বোঝাইত। পরিণামে নিজের রুটি-রুজি লইয়া শ্রমিকদেরই টানাপোড়েনে পড়িতে হইত। ইহার সমাধান দিয়াছিল ট্রেড ইউনিয়ন প্রথা। দুর্ভাগ্যবশত এই দেশে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার বিগত দশকসমূহে ক্রমশ জটিল রূপ ধারণ করে। উহার সহিত সুস্থ ধারার শ্রমিক আন্দোলনও বিরল হইয়া পড়ে।
আমাদের বিশ্বাস, শ্রম সংস্কার কমিশনের ট্রেড ইউনিয়ন-সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ আলোর মুখ দেখিলে শ্রমিক-মালিক উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা হইবে। সর্বোপরি দেশের বিকাশমান শিল্প খাত হইবে লাভবান। উৎপাদন ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তিরূপে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে উদ্যোক্তার যদ্রূপ অবদান, তদ্রূপ শ্রমিকেরও অবদান ব্যাপক। তাই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণে আর কোনো অবহেলা নহে। এইবারের মে দিবসে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে এই অঙ্গীকার গ্রহণ করিবে– ইহাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা সমকালের পক্ষ হইতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে মে দিবসের অভিনন্দন জানাই।