চাহিদার তুলনায় ব্যাংকগুলোকে নতুন নোট দিতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই সংকট প্রকট হয়েছে। কারণ, সব ধরনের টাকা ও ধাতব মুদ্রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় গত এপ্রিলের শুরুতে হঠাৎ নতুন নোট বাজারে ছাড়া বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবি–সংবলিত নতুন নোট বাজারে আসছে না। তাই মানুষের হাতে, দোকানে ও ব্যাংকে ছেঁড়াফাটা ও পুরোনো ময়লা নোটে সয়লাব হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন নাগরিকেরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নতুন নকশার নোট আগামী মাসে ছাপানো শুরু করবে দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বা টাঁকশাল। প্রথম ধাপে নতুন নকশার ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট ছাপানো হবে। এরপর তা ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে দেওয়া হবে।

এদিকে আগে ছাপানো হয়েছে, এমন নোট বাজারে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের কাগুজে নোট ছাপানো আছে। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না ব্যাংক কর্মকর্তারা। তবে তাঁদের অনেকেই নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন নোট নেওয়া একটা দীর্ঘদিনের রীতি। এটা হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। একদিকে ছাপানো টাকা ব্যবহার না করে অপচয় করা হচ্ছে, অন্যদিকে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছে।

বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত লাখ লাখ নোট এখনো বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে পড়ে আছে। একসঙ্গে সব নোট বাতিল করে নতুন নোট ছাপানোর সক্ষমতা টাঁকশালের নেই। মানুষের ভোগান্তি কমাতে যেসব নোট ছাপানো আছে, সেগুলো বাজারে ছাড়া উচিত জিয়াউদ্দীন আহমেদ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টাঁকশাল

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নির্দেশ এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই এ নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকেই আসতে হবে।

গ্রাহক ভোগান্তি

রাজধানীর মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়সহ সারা দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০টি কার্যালয় রয়েছে। নগদ টাকার প্রয়োজন হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিদ্যমান ব্যবস্থার আওতায় এসব কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যালয় নেই, সেখানে সোনালী ব্যাংক সেই দায়িত্ব পালন করে। সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে থাকা নিজস্ব হিসাবের বিপরীতে নতুন টাকা নিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। কখনো কখনো ছেঁড়াফাটা নোট পরিবর্তন করে ও ধার হিসেবেও নগদ টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকগুলো। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরোনো নোটের পাশাপাশি নতুন নোট বাজারে সরবরাহ করে থাকে।

শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ নোট নিয়ে বিতর্ক ওঠায় গত ১০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চিঠি দিয়ে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়। পাশাপাশি ব্যাংকের শাখায় যেসব নতুন নোট গচ্ছিত রয়েছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণের কথা বলা হয়। এরপর থেকে নতুন নোট বিনিময় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং বাজারে নতুন নোটের সংকট দেখা দেয়।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শফিউল আলম থাকেন রাজধানীর মিরপুরে। গত মঙ্গলবার বাসার পাশের বিসমিল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে ৪২০ টাকা কেনাকাটা করে এক হাজার টাকার নোট দেন। বিক্রেতা তাঁকে দুটো ২০০ টাকার নোট, একটি ১০০ টাকা, একটি ৫০ টাকা, একটি ২০ টাকা ও একটি ১০ টাকার নোট ফেরত দেন। এর মধ্যে একটি ২০০ টাকার নোট ও ২০ টাকার নোট দুটি ছিল প্রায় অচল। দোকানদার তাঁকে আশ্বাস দেন, পরের মাসে ছেঁড়া টাকা নিয়ে এলে পরিবর্তন করে দেবেন। এখন এ ছাড়া কোনো উপায় নেই।

বিসমিল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে দিনে প্রায় দেড় লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয় জানিয়ে ব্যবস্থাপক মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগে ব্যাংক থেকে প্রতিসপ্তাহে নতুন খুচরা নোট আনা যেত। গত মাস থেকে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক থেকে পুরোনো নোট যা মিলছে, সেগুলোর বেশির ভাগই ছেঁড়াফাটা। এসব নোট গ্রাহককে দিলে তাঁরা নিতে চান না।

শুধু ব্যাংক নয়, ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো থেকেও এখন বেশ পুরোনো ও প্রায় অচল নোট বের হচ্ছে। এটিএম বুথে টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ না থাকায় এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকেরা। এ বিষয়ে আজমল হোসেন নামের ঢাকা ব্যাংকের এক গ্রাহক প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা ব্যাংকের কার্ড দিয়ে ওয়ান ব্যাংকের এটিএম থেকে ২০ হাজার টাকা তুলেছি। এর মধ্যে তিনটি এক হাজার টাকার নোট প্রায় অচল। এখন এসব নোট ফেরত দিতে গেলেও ব্যাংকগুলো নিতে চাচ্ছে না।

নতুন নোট আসবে কবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নতুন নকশার নোট ছাপাতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন সরকার গঠিত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধুর ছবি–সংবলিত টাকার নোটের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। গত ডিসেম্বরে নতুন নকশার নোট বাজারে আনার সিদ্ধান্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী মে মাসে টাঁকশালে নতুন নকশার নোট ছাপানো শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে একসঙ্গে তিনটি নোটের বেশি ছাপানোর সক্ষমতা নেই টাঁকশালের। এ জন্য প্রথম ধাপে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট ছাপানো হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিভিন্ন মূল্যমানের ১৫০ কোটি পিস নতুন টাকার চাহিদা রয়েছে। তবে টাঁকশাল ছাপাতে পারে ১২০ কোটি পিস। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে টাঁকশাল বিভিন্ন মূল্যমানের ১০৫ কোটি পিস নতুন নোট ছাপে। সাধারণত একটি নোট চার থেকে পাঁচ বছর স্থায়ী হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন সিদ্ধান্ত নিলেও বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ নোট এখনই বাজার থেকে সরানো যাবে না। নতুন নকশার নোট বাজারে ছাড়ার পর পুরোনো সব নোট বাজার থেকে তুলে নিতেও পাঁচ থেকে সাত বছর লেগে যাবে।

ছাপানো টাকা কত

বাংলাদেশে এখন ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার কাগুজে নোট ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি ১, ২ ও ৫ টাকার ধাতব মুদ্রাও বাজারে রয়েছে। সব ধরনের মুদ্রায় বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে বাজারে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা ছিল মানুষের হাতে। ব্যাংকের ভল্টে ছিল ২৬ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ব্যাংকগুলোর ৭৬ হাজার ২২০ কোটি টাকা জমা ছিল।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও টাঁকশালের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জণগণের করের অর্থে কাগজ–কালি কিনে বিভিন্ন মূল্যমানের টাকার নোট ছাপানো হয়। বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত লাখ লাখ নোট এখনো বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে পড়ে আছে। একসঙ্গে সব নোট বাতিল করে নতুন নোট ছাপানোর সক্ষমতা টাঁকশালের নেই। তাই বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত নোট চাইলেই হুট করে বাতিল করা যাবে না। এ অবস্থায় মানুষের ভোগান্তি কমাতে যেসব নোট ছাপানো আছে, সেগুলো বাজারে ছাড়া উচিত। নতুন নকশার নোট বাজারে এলে ধীরে ধীরে পুরোনো নোটগুলো তুলে নিতে হবে। সাধারণত একবার ছাপানো নোট সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ বছর ব্যবহার করা যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নত ন ন ট ব কর মকর ত ব যবস থ গ র হক সব ন ট সরক র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ