বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আরাকানদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য যে করিডোর তৈরি করার সিদ্ধান্ত, সেটি সব দলের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া উচিত ছিল। সরকারের দায়িত্ব ছিল সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা। কারণ আমরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এমনিতেই সমস্যায় আছি, আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না, আমরা গাজায় পরিণত হতে চাই না।

সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নে গণসংযোগ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এদেশের মানুষ তাদের নিজস্ব সরকার দেখতে চায়। বর্তমানে এমপি নেই, সমস্যা হলে কার কাছে যাবেন। স্থানীয় চেয়ারম্যানরা সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন না। এজন্য আমরা বারবার করে বলছি, সংস্কারটা হউক, নির্বাচনটাও হউক।

তিনি বলেন, নির্বাচনটা বাংলাদেশে খুব দরকার। এই কাজগুলো যদি আমরা না করতে পারি, তাহলে হবে না। আমরা আশা করবো, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। তারা বলেছে যে, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে থেকে জুনের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করবে। আমরা বলি এভাবে না বলে পরিষ্কার করে বলেন- নির্বাচনটা কখন হবে, রোডম্যাপ দেন। রোডম্যাপ দিলেই মানুষ আশ্বস্ত হবে।

স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছরে আপনাদের সঙ্গে আমার খুব কম দেখা হয়েছে, কারণ আপনারা সবাই জানেন। এই ১৫ বছর আমাদের শান্তিতে থাকতে দেয়নি। প্রায় ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বড় খোচাবাড়ীতে আমাদের এক ভাইয়ের হাত কেটে নেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় আমরা কেউ এ এলাকায় ঢুকতে পারিনি। তারা আমাদের গাড়িগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে, আমাদের রাস্তা গাছ ফেলে বন্ধ করে দিয়েছিল, যাতে করে আমরা আপনাদের কাছে আসতে না পারি। নির্বাচন করতে না পারি। গত ১৫ বছরে আপনারা ভোট দিতে পারেনি, নতুন ছেলেরা তো পারেইনি। এই ১৫ বছরে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে। ব্যাংকগুলো লুট করেছে।

তিনি আরও বলেন, রাস্তাগুলো দিয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। এগুলোর নাম করে তারা অনেক টাকা নিয়ে চলে গেছে। বিএনপির যদি গন্ধ পেয়েছে কোথাও তার চাকরি হয়নি। ব্যবসা বাণিজ্য হয়নি, চাকরির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। পরে এ দেশের মানুষ অস্থির হয়ে, জীবন দিয়ে তারা হাসিনাকে তাড়িয়েছে। আপনারা দেখেছেন, মানুষ কোনো কিছুকে ভয় পায়নি ওই দিনগুলোতে। তারা শুধু সামনের দিকে ছুটে গেছে। আপনাদের বিরুদ্ধেও অনেক মামলা হয়েছে, অনেকে জেলেও গেছেন। আপনাদের একমাত্র অপরাধ ছিল, আপনারা বিএনপি করেছেন।

শেখ হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সরকার যা করা দরকার তা করেছিল। সারাদেশ নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়, সে কারণে বেশি সময় পাইনা আপনাদের মাঝে আসার। ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ ১৫ বছর উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছি। চাকরি, কৃষকের ন্যায্য পাওনা থেকে, শ্রমিক ভাইয়ের পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আগামীতে যদি আমরা নির্বাচিত হতে পারি, আমরা সবার আগে নতুন কর্মসংস্থানের দিকে গুরুত্ব দেবো। চাকরির দিকে গুরুত্ব দেবো। আমাদের যুবক-তরুণ ছেলে মেয়েরা যে চাকরি পায় না তারা যেনো চাকরি পায় সে ব্যবস্থা আমরা সবার আগে করবো। 

জগন্নাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.

আব্দুল হামিদ। এতে বিএনপি-অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে একই ইউনিয়নের বড় খোচাবাড়ীতে পথসভায় বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র আপন দ র ব এনপ র ১৫ বছর র জন য আম দ র ফখর ল আপন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থা, প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতী

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব, যে আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। প্রস্তুতি না নেওয়াটা আত্মঘাতী। আধাআধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নাই।’

গতকাল বুধবার রাজধানীর বীরউত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। খবর বিবিসি বাংলা ও বাসসের।

নিজেকে ‘যুদ্ধবিরোধী মানুষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক– এটা আমরা কামনা করি না।’ যুদ্ধের প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়– এ রকম ধারণার বিষয়ে ঘোরতর আপত্তির কথা জানান ড. ইউনূস।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সব সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার, রাডার সংযোজনের জন্য বিমানবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিতভাবে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান-দক্ষতাকে যুগোপযোগী করতে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।’

তিনি দেশের বিমানবন্দরগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।

মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। 

এর আগে বিমানঘাঁটিতে এসে পৌঁছলে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। অনুষ্ঠানস্থলে বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার

গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর বিতরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব ঘর বিতরণ করেন।

ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্মাণের সামর্থ্য নেই, এ রকম তিনশ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফেনীতে ১১০টি, নোয়াখালীতে ৯০টি, কুমিল্লায় ৭০টি ও চট্টগ্রামে ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুটি কক্ষ, কমন স্পেস, শৌচাগার, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। ৪৯২ বর্গফুট আয়তনের ঘরে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং ৫০০ বর্গফুটের ঘরে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেনাবাহিনী ঘরগুলো নির্মাণ করেছে।

অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান বক্তব্য দেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত ও বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় এমন অপারেটরদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

বৈঠকে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘দেশের নৌবন্দরগুলোর বর্তমান হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ইউনিট, যা সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মপন্থার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ইউনিটে উন্নীত করা সম্ভব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ