দেশে ক্যানসার শনাক্তে জিন প্রযুক্তির ব্যবহার
Published: 29th, April 2025 GMT
দেশে ক্যানসার শনাক্তে জিন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। এতে ঠিকভাবে ক্যানসার শনাক্ত সম্ভব হবে। পাশাপাশি বাজারে আছে দেশে উৎপাদিত ক্যানসারের ওষুধ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দুইয়ের সমন্বয়ে দেশে ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।
২৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) জিনোম সিকোয়েন্সিং–ভিত্তিক ক্যানসার শনাক্ত শুরু করেছে। অল্প সময়ে ক্যানসার শনাক্তের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। এ ছাড়া কোনো ওষুধ ক্যানসারের ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে থাকলে, তা–ও রোগীকে জানিয়ে দেবে আইসিডিডিআরবি।
দেশে কত মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের একটি সমীক্ষা বলছে, দেশের এক লাখ মানুষের মধ্যে ১০৬ জনের কোনো না কোনো ক্যানসার আছে। অন্যদিকে ক্যানসারের ওপর নজরদারি করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবোক্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ নানা ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। আর প্রতিবছর ক্যানসারে মারা যান ১ লাখ ১৭ হাজার মানুষ।
বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসার একটি বড় দুর্বলতা হচ্ছে, দেশে ঠিকভাবে রোগ শনাক্ত হয় না। অনেক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক দেশের রোগ শনাক্তের প্রতিবেদনে আস্থা রাখেন না। অনেক রোগীকে ক্যানসার পরীক্ষার জন্য বিদেশে নমুনা পাঠাতে হয়। এতে রোগনির্ণয় প্রতিবেদন পেতে বিলম্ব হয় এবং প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবেদন নির্ভরযোগ্য হয় না।
বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) জিনোম সিকোয়েন্সিং–ভিত্তিক ক্যানসার শনাক্ত শুরু করেছে। অল্প সময়ে ক্যানসার শনাক্তের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। এ ছাড়া কোনো ওষুধ ক্যানসারের ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে থাকলে, তা–ও রোগীকে জানিয়ে দেবে আইসিডিডিআরবি।কী নতুন প্রযুক্তি
ক্যানসার–বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান যুগে তিনভাবে বা তিন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্যানসার শনাক্ত হয়। ইমিউনোহিস্টো কেমিস্ট্রি (আইএইচসি), রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরটি–পিসিআর) টেস্ট এবং নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং (এনজিএস)। তিনটিই স্বীকৃত পদ্ধতি। ঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে সব কটি থেকে সঠিক রোগ শনাক্ত সম্ভব।
ক্যানসার শনাক্তে আইএইচসি পরীক্ষা বাংলাদেশে বেশি হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তে আরটি– পিসিআর টেস্টের ব্যবহার করোনা মহামারির সময় বেশি হতে দেখা গেছে। তবে এটি ক্যানসার শনাক্তেও ব্যবহার করা হয়।
জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বা এনজিএসের মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্তের কাজটি দেশে একেবারে নতুন নয়। একাধিক চিকিৎসক বলেছেন, দেশে দু–একটি পরীক্ষা হয়েছে। মূলত বিদেশ থেকে এনজিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষা করে আনা হয়। এতে খরচ অনেক বেশি পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোষে থাকা জিনের মিউটেশনের (রূপান্তর) কারণে ক্যানসার হয়। মিউটেশন হওয়া কোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে থাকে। মানুষের শরীরে থাকা কোটি কোটি জিনের মধ্যে ঠিক কোনটিতে এই মিউটেশন হয়েছে, তা এনজিএস প্রযুক্তিতে শনাক্ত করা সম্ভব। একবার শনাক্ত হলে সেই জিনকে লক্ষ্য রেখে ক্যানসারের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের ক্যানসার রোগীদের জন্য আইসিডিডিআরবির এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রযুক্তি জিন মিউটেশন শনাক্ত করে, যার মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা অর্থাৎ টার্গেটেড থেরাপি দেওয়া সম্ভব হয়। এতে রোগী অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা এড়াতে পারেন। এটিই ক্যানসার চিকিৎসার নতুন দিগন্ত।অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেনআইসিডিডিআরবির জিনোম সেন্টারের প্রধান মো.
আইসিডিডিআরবির কাগজপত্র বলছে, তারা নমুনা পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবে। এই নমুনা মহাখালী, মিরপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি, উত্তরা, নিকেতন, গুলশান ও বারিধারার আইসিডিডিআরবির ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বুথে জমা দেওয়া যাবে। ক্যানসার ভেদে নমুনা পরীক্ষার ফি ১১ হাজার টাকা থেকে ৩৪ হাজার টাকা।
এনজিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্তের যে প্রতিবেদন পাওয়া যাবে, সেখানে চিকিৎসাবিষয়ক বাড়তি তথ্যও থাকবে। যেমন শনাক্ত হওয়া ক্যানসার কোন কোন ওষুধে ভালো হয় না বা ঠিকভাবে কাজ করে না, তার একটি তালিকা থাকবে প্রতিবেদনে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই তালিকা তৈরি করা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স–এআই) ব্যবহার করে। তাতে ওষুধের অকার্যকারিতার প্রামাণ্য সূত্র থাকে। এতে রোগীর জন্য ওষুধ নির্বাচন চিকিৎসকের পক্ষে সহজ হয়।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ও স্কয়ার হাসপাতালের ক্যানসার সেন্টারের সমন্বয়কারী অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের ক্যানসার রোগীদের জন্য আইসিডিডিআরবির এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রযুক্তি জিন মিউটেশন শনাক্ত করে, যার মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা অর্থাৎ টার্গেটেড থেরাপি দেওয়া সম্ভব হয়। এতে রোগী অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা এড়াতে পারেন। এটিই ক্যানসার চিকিৎসার নতুন দিগন্ত।
প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, অত্যাধুনিক এনজিএস যন্ত্র, আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও বিদেশে প্রশিক্ষণ পাওয়া জনবল আমাদের আছে। আমরা আন্তর্জাতিক ও সর্বোচ্চ গুণমান নিশ্চিত করে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং–ভিত্তিক ক্যানসার শনাক্তের সক্ষমতা অর্জন করেছি। আমরা ক্যানসার চিকিৎসক ও রোগীকে ঠিক সময়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন দিতে পারব। আমাদের উদ্যোগ ক্যানসার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।আইসিডিডিআরবির জিনোম সেন্টারের প্রধান মো. মোস্তাফিজুর রহমানসঙ্গে আছে ওষুধ
গত তিন দশকে বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের লক্ষণীয় অগ্রগতি ও উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি বলছে, দেশের প্রয়োজনীয় ওষুধের ৯৮ শতাংশ এখন দেশেই তৈরি হয়। একাধিক ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে—বিকন, এসকেএফ, ইনসেপ্টা, হেলথকেয়ার, স্কয়ার, বেক্সিমকো, জিসকা, এভারেস্ট, রেনেটাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ক্যানসারের ওষুধ তৈরি করে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ক্যানসারের ওষুধ কিছু কোম্পানি বিদেশেও রপ্তানি করছে। দেশে তৈরি ক্যানসারের ওষুধ নিয়মিত বাজারে আসছে। এতে ক্যানসারের কিছু ওষুধের দাম কমে আসার প্রবণতা দেখা গেছে।
বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) এস এম মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো বিদেশে ক্যানসারের ওষুধ রপ্তানি করে, এটি সাফল্যের একটি দিক। আবার বিদেশ থেকে অনেকে বাংলাদেশে এসে ক্যানসারের ওষুধ কিনে নিয়ে যান, এমন নজিরও আছে। তারা মনে করেন, কিছু ক্যানসারের ওষুধের দাম বাংলাদেশে কম।
প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও একদিকে দেশে ক্যানসার শনাক্তের নির্ভুল পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রসার ঘটছে। অন্যদিকে ক্যানসারের ওষুধও সহজলভ্য হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও ওষুধ আরও সহজপ্রাপ্য হওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনবল ও চিকিৎসাকেন্দ্র বাড়ানো দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ সমানভাবে প্রয়োজন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ক্যানসারের ওষুধ কিছু কোম্পানি বিদেশেও রপ্তানি করছে। দেশে তৈরি ক্যানসারের ওষুধ নিয়মিত বাজারে আসছে। এতে ক্যানসারের কিছু ওষুধের দাম কমে আসার প্রবণতা দেখা গেছে।সার্ক ফেডারেশন অব অনকোলজির মহাসচিব মোস্তফা আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ক্যানসারের মতো জটিল রোগ সঠিকভাবে শনাক্ত হওয়া এবং চিকিৎসার ওষুধ হাতের কাছে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন সবাই মিলে রোগ শনাক্তের পরিধি আরও বাড়ানো, ওষুধ আরও সহজলভ্য করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এসব করা গেলে দেশে ক্যানসার চিকিৎসা উন্নত হবে বলে আশা করা যায়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইস ড ড আরব র স ড ড আরব র প রথম আল ক ব যবহ র কর চ ক ৎসক র জন য পর ক ষ আম দ র র একট
এছাড়াও পড়ুন:
পিডিবির ভুলে ২৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হলো বাংলাদেশকে
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) খামখেয়ালিজনিত এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশকে দুই কোটি মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ২৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে।
খামখেয়ালিটি হলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০০০ সালে হওয়া ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে (বিরোধ নিষ্পত্তির আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা) একটি মামলায় পক্ষভুক্ত না হওয়া। পক্ষভুক্ত হতে গেলে বাংলাদেশকে ৬০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করতে হতো। তা করেনি পিডিবি। ফলে আইসিসি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে একতরফা রায় হয়েছে। দুই যুগ পর এখন বাংলাদেশকে জরিমানা দিতে হয়েছে ৩৩৩ গুণ বেশি অর্থ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত ১৯ মে পিডিবিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ হিসেবে পিডিবিকে দেওয়া হবে, যা তারা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি স্মিথ কো-জেনারেশন (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেডকে। হরিপুরে ১০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের স্পনসর (পৃষ্ঠপোষক) ছিল এই স্মিথ কো-জেনারেশন।
আইনজীবী ও পিডিবির তৎকালীন পর্ষদের খামখেয়ালির কারণে আজ এত বড় অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিতে হলো। আইসিসির আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ না করাটা ছিল মস্ত ভুল। ফলে একতরফা রায় হয়েছে, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে।বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানঅবশ্য পিডিবি অর্থ বিভাগের ঋণ নেয়নি। সংস্থাটি নিজের তহবিল থেকে গত ২৩ মে ২৪৫ কোটি টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে কোম্পানিটি।
এই পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করেই ২০২৪ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। জটিলতা এড়াতে তাঁরা দুজন পরে হোটেল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসায় (বাংলাদেশ হাউস) গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনজীবী ও পিডিবির তৎকালীন পর্ষদের খামখেয়ালির কারণে আজ এত বড় অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিতে হলো। আইসিসির আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ না করাটা ছিল মস্ত ভুল। ফলে একতরফা রায় হয়েছে, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে।’
ঘটনা শুরু যেভাবেমূল ঘটনা ১৯৯৭ সালের অক্টোবরের। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার হরিপুরে বেসরকারি খাতে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ কো-জেনারেশন ইন্টারন্যাশনালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্মিথ কো-জেনারেশন (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে দুটি চুক্তি করে বাংলাদেশ। কোম্পানিটির সঙ্গে পিডিবির একটি চুক্তি হয় ১৯৯৭ সালের ১৪ অক্টোবর। দুই দিন পর ১৬ অক্টোবর সরকারের সঙ্গে আরেকটি চুক্তি হয় বিদ্যুৎ কেনার (পিপিএ)।
চুক্তি অনুযায়ী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ১৯৯৮ সালের ১৫ আগস্ট। কিন্তু কোম্পানিটি তা পারেনি। শর্ত ছিল নির্ধারিত দিন থেকে উৎপাদন করতে না পারলে দুই মাস মেয়াদ বাড়াবে সরকার, তবে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার মার্কিন ডলার করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কোম্পানিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন তো দূরের কথা, কোনো নির্মাণকাজ করতে পারেনি; বরং আরও ৬ মাস ২০ দিন সময় চায়। সরকার তা না মেনে ১৯৯৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পিপিএ ও জমির ইজারা চুক্তি বাতিল করে দেয়। শুধু তা–ই নয়, ব্যাংক নিশ্চয়তার (পিজি) ১৫ লাখ ডলারও নিয়ে নেয় পিডিবি।
সচিবালয়ে গত ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক থেকে মার্কিন কোম্পানিটিকে ২ কোটি ডলার দেওয়ার জন্য যে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। বিদ্যুৎসচিব ফারজানা মমতাজ এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এতে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কথা আসেনি। যদিও সম্প্রতি আলাদা এক চিঠিতে অর্থ বিভাগ এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছে বিদ্যুৎ বিভাগকে।
বিদ্যুৎসচিবের সঙ্গে গত ১৫ মে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করে জানতে চাওয়া হয় যে যাঁদের কারণে বাংলাদেশকে এখন ২৪৫ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে, তাঁদের তিনি বাঁচিয়ে দিলেন কেন। তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা জানান।
ঘটনাটা শেষ হয়েছে। তবে পিডিবির ভুল ছিল অনেক বড়অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদবিষয়টি যেভাবে আদালতে গড়ালঅর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিতে পাঠানো বিদ্যুৎসচিবের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটি ২০০০ সালে ঢাকার সাব জজ পঞ্চম আদালতে আরবিট্রেশন মিসকেইস (বিবিধ মামলা) এবং নারায়ণগঞ্জের সাব জজ প্রথম আদালতে আরেকটি আরবিট্রেশন বিবিধ মামলা করে। উভয় মামলাই আদালত খারিজ করে দেন। আদালতে মামলার পাশাপাশি কোম্পানিটি পরে পিপিএ বাতিল ও পিজি নগদায়নের বিরুদ্ধে আইসিসি আরবিট্রেশনে যেতে পিডিবিকে নোটিশ দেয়। নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবি যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটিকে চিঠি দিয়ে জানায়, আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি হতে পারেন আরবিট্রেটর।
কিন্তু আইসিসি বিদেশে আরবিট্রেশন মামলায় অংশগ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনাল খরচ বাবদ নির্ধারণ করে ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, যা উভয় পক্ষকে সমানভাবে বহন করতে হবে। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার দিতে হবে অগ্রিম। অর্ধেক হিসেবে তখন পিডিবির খরচ করতে হতো অগ্রিমের ৬০ হাজার ডলার।
তখনকার পিডিবির পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ট্রাইব্যুনাল খরচের কোনো অর্থ দেবে না। পিডিবির তৎকালীন আইনজীবী প্যানেল একই পরামর্শ দেয়। আইনজীবীরা আরও মত দেন, দেশে আরবিট্রেশন আইন হয়েছে ২০০১ সালে। এর আগে আইসিসির আরবিট্রেশনের রায় বাংলাদেশের বাইরে কার্যকর হবে না। তাঁরা মামলায় পক্ষভুক্ত না হতে পিডিবিকে পরামর্শ দেন।
পরে একপক্ষীয় শুনানি শেষে আইসিসি আরবিট্রেশন আদালত ২০০৩ সালের ৩০ অক্টোবর রায় দেন। রায়ে বলা হয়, পিডিবি বছরে ৪ শতাংশ সুদসহ মোট ১ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেবে স্মিথ কো-জেনারেশনকে।
রায় বাস্তবায়নের ছয় মামলাআইসিসি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের রায় বাস্তবায়নে স্মিথ কো-জেনারেশন পরে ছয়টি মামলা করে। এগুলো হয় যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য ডিস্ট্রিক্ট অব অব কলাম্বিয়া, ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক, সুপ্রিম কোর্ট অব নিউইয়র্ক, স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গের কোর্ট অব সেশন, সুইজারল্যান্ডের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব বাডেন এবং ঢাকার আদালতে।
আইসিসির রায় বাস্তবায়নে ২০০৭ সালের ২০ জুলাই রায় দেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব কলাম্বিয়া। স্মিথ কো-জেনারেশন এ আদালতে বিষয়টি আবার উত্থাপন করে। এরপর ২০২৪ সালের ১৯ মে পিডিবির বিরুদ্ধে সংশোধিত চূড়ান্ত রায় দেন আদালত। এবারের রায়ে বলা হয়, পিডিবি ৩ কোটি ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার পরিশোধ করবে স্মিথ কো-জেনারেশনকে। কোম্পানিটি তখন তার আইনি প্রতিষ্ঠান ডোয়ান মরিস এলএলপিকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু রায় আর বাস্তবায়ন হচ্ছিল না।
বিষয়টি নিয়ে জানতে গত ২৮ মে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনিও কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর যে বিপদে পড়েছিলেনআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন যায় উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন একটি দল, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও ছিলেন। ২১-২৬ অক্টোবর (২০২৪) ছিল এ বার্ষিক সভা।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপদেষ্টা ও গভর্নরের ওয়াশিংটন যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে স্মিথ কো-জেনারেশন আরেকটি মামলা করে ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায়। আদালত তখন অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরের জবানবন্দি নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু যেহেতু অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরের কূটনৈতিক অনাক্রম্যতা আছে এবং তাঁরা পিডিবির সঙ্গে সম্পর্কিত নন, তাই তাঁরা জবানবন্দি দেননি।
স্মিথ কো-জেনারেশন তখন আবার আদালতে (যুক্তরাষ্ট্র) যায়। আদালত ২৫ অক্টোবর (২০২৪) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন এবং সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আহসান এইচ মনসুরকে আটক করে আদালতে নিয়ে আসতে ইউএস মার্শাল সার্ভিসকে নির্দেশ দেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা দুজন তখন আশ্রয় নেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সরকারি বাসভবনে। তাঁরা ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসির ১০ নম্বর সড়কে অবস্থিত অ্যাম্বাসি স্টু হোটেলে। দূতাবাসের গাড়িতে করে তাঁরা ম্যারিল্যান্ডে রাষ্ট্রদূতের বাসায় চলে যান।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস ২০২৪ সালের ১৮ অক্টোবর এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করতে আইনি প্রতিষ্ঠান ফলি হোয়াগ এলএলপিকে নিয়োগ দেয়। তারা আপিল করলে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করেন এবং শুনানির দিন ধার্য করেন ২৮ অক্টোবর (২০২৪)। ফলি হোয়াগ এলএলপি বিষয়টি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির জন্য মধ্যস্থতার আবেদন জানায় বিচারকের কাছে এবং বিচারক তা গ্রহণ করেন। এভাবেই অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর ওই যাত্রায় রক্ষা পান।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত ৩০ জুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটা শেষ হয়েছে। তবে পিডিবির ভুল ছিল অনেক বড়।’
বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, ২ কোটি ডলারের বাইরে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করা আইনি প্রতিষ্ঠান ফলি হোয়াগকে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ডলার দিতে হয়েছে।নিষ্পত্তির পথ খুলল যেভাবেমধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়কে ভিত্তি ধরে দেশে তখন গুরুত্বের সঙ্গে কাজ শুরু করেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর এ বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এরপর স্মিথ কো-জেনারেশনের মধ্যস্থতাকারী, বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির কর্মকর্তা এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান অনলাইনে ৫টি বৈঠক করেন। শুরুতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, জব্দ করা ব্যাংক নিশ্চয়তার ১৫ লাখ ডলার ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হোক। বিপরীতে স্মিথ কো-জেনারেশন দাবি করে ৩ কোটি ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। আরও দাবি করে, মামলার খরচ বাবদ আরও ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার তাদের দিতে হবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রস্তাবে কোম্পানিটিকে বলা হয়, ১৫ লাখ ডলার ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি দেশের বিদ্যমান আইনের আওতায় বিদ্যুৎ খাতে তাদের বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে। এতেও রাজি হয়নি স্মিথ কো–জেনারেশন। বাংলাদেশ পরে ১ কোটি ডলারে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেয়। স্মিথ কো-জেনারেশন তখন নতুন প্রস্তাব দেয়। সেটি হলো, এককালীন ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারে বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে। অথবা ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার ও দুটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে তারা মেনে নেবে।
বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্ততায় থাকা বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে গত ২৬ মে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অবশ্য অর্থ বিভাগ ও পিডিবি সূত্র জানায়, পরে স্মিথ কো-জেনারেশন ২ কোটি ডলারে রাজি হয়। বাংলাদেশ সরকারও সিদ্ধান্ত নেয়, এই পরিমাণ অর্থ ওই কোম্পানিকে দিয়ে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আগেই সম্মতি দিয়ে রেখেছিলেন (গত ১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা। গত ২৮ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, ২ কোটি ডলারের বাইরে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করা আইনি প্রতিষ্ঠান ফলি হোয়াগকে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ডলার দিতে হয়েছে।
ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে আইসিসি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে অংশ নিলে বাংলাদেশেরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল, যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি তারা (যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি) পারেনি। অথচ আজ বড় অঙ্কের জরিমানা তো গুনতে হচ্ছেই, মাঝখানে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হলো এবং দেশের বদনাম হলো।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ‘দেশের বদনাম হলো’১৯৯৬-৯৯ সময়ে পিডিবির চেয়ারম্যান ছিলেন নুরউদ্দিন মাহমুদ কামাল, তিনি ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর মারা যান। ১৯৯৯-০০ সময়ে চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক সচিব কামরুল ইসলাম সিদ্দিক, যিনি মারা যান ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর। ২০০০-০২ সময়ে চেয়ারম্যান ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এ মালেক, যিনি মারা যান ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে আইসিসি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে অংশ নিলে বাংলাদেশেরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল, যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি তারা (যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি) পারেনি। অথচ আজ বড় অঙ্কের জরিমানা তো গুনতে হচ্ছেই, মাঝখানে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হলো এবং দেশের বদনাম হলো।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ জীবিত থাকলে শাস্তি দিতে হবে। এমনকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিডিবিরও শাস্তি পাওয়া উচিত। অর্থ বিভাগের পরামর্শ মেনে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করা।