নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়, আগে প্রয়োজন গণপরিষদ: ফরহাদ মজহার
Published: 2nd, May 2025 GMT
কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, যে গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল তা কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে গণঅভ্যুত্থান হয়নি, গণঅভ্যুত্থান হয়েছে জনগণের ব্যানারে সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছিল। কী অভিপ্রায়ে গণঅভ্যুত্থান হলো সে বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য তৃনমূল পর্যায়ে এ অন্তর্বর্তী সরকারকে যেতে হবে। জনগণের কথা শুনে তাদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঢাকায় বসে সংস্কার কমিশন গঠন করে সিদ্ধান্ত নিলে তা জনগণের অভিপ্রায় পূরণ হবে না।
আজ শুক্রবার দুপুরে তিনি বগুড়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য নতুন সংবিধান না, নতুন গঠনতন্ত্রের প্রয়োজন। গঠনতন্ত্র মানে কিন্তু আইন না, তবে সংবিধান মানে হচ্ছে আইন। আর আমরা কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসক না। ইংরেজরা আইন প্রণয়ন করে আর জনগণ গঠনতন্ত্র করে। আর এ পার্থক্যটাই মনে রাখতে হবে। তার মানে আপনি যখনই সংবিধান বলবেন আপনি ঔপনিবেশিক একজন শাসক। তখন আপনি লুটেরা মাফিয়াতন্ত্রের ন্যায় একজন শাসক। আপনি একটা আইন দিয়ে গরীবদের শাসন করবেন। তাই আগে গঠনতন্ত্র তৈরি করে গণপরিষদ নির্বাচন করা প্রয়োজন, তারপর জাতীয় নির্বাচন।
গঠনতন্ত্র মানে জনগণ নিজেরাই অংশগ্রহণ করবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তারা পরস্পরের সঙ্গে কীভাবে বাস করবে এটা তারা তৈরি করবে। সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবে, তরুণদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে আবার যারা ক্ষমতায় আসবে তারা আগের সরকারের মতোই লুটপাট করবে। নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়। এ জন্য সাধারণ মানুষ ও তরুণদের অংশগ্রহণে আগে গণপরিষদ নির্বাচন, তারপরে জাতীয় নির্বাচন।
তিনি বলেন, তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এক.
ফরহাদ মজহার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রক্সি ওয়ারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমি কোনভাবেই চাইবো না করিডোর দেওয়া হোক। করিডোর কখনও আমাদের দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। এসব কারণে বাংলাদেশের প্রতিটি তরুণকে সেনাবাহিনীর সদস্য করে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। সেনাবাহিনীকে জাতীয় সেনাবাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফরহ দ মজহ র গণঅভ য ত থ ন ফরহ দ মজহ র গঠনতন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডন বৈঠক এবং গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রশ্ন
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চার দিনের লন্ডন সফর এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে। এই সফর কি কেবল একটি সম্মাননা গ্রহণ, নাকি এর মাঝেই লুকিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন রূপরেখা? এই নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
৫ আগস্ট শুধু রাজনীতি নয়, রাষ্ট্র ও সমাজের বহুক্ষেত্রে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। কিন্তু বাস্তবতার খেরোখাতা বলছে ভিন্ন কথা। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও বাংলাদেশ এক হতে পারেনি। এক হতে পারেনি রাজনীতি। বরং গণঅভ্যুত্থানের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একদল মানুষ তৈরি করে মব। ধর্মীয় অনুভূতির সুবিধা নিয়ে রাজনীতির মাঠে তৈরি করেছে বিভাজন।
যে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং মুক্ত সংবাদমাধ্যমের স্বপ্ন বাংলাদেশ দেখেছিল, দিন দিন তা যেন দূর থেকে বহু দূরের বস্তু হয়ে পড়ছে। এমন সময়ে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তোলে। তবে বাদ সাধে সংস্কারের গল্প। যাতে তাল মেলায় জামায়াত এবং গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। সব মিলিয়ে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশা। সরকারের বিভিন্ন কাজ ও বক্তব্যে বিএনপি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মাঝে তৈরি হয় দূরত্ব। ঠিক এমন সময়, লন্ডনে ১৩ জুন সকালে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। যাকে বলা যেতে পারে বরফ গলানোর রাজনীতি।
লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলের এ বৈঠককে উভয় পক্ষই ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিয়ে সৌজন্য সংলাপ’ অভিহিত করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি একটি শক্তিশালী বার্তা। কেউ কেউ বলছেন, এটি জুলাই সনদ চূড়ান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিচার ও সংস্কার বিষয়ে সম্ভাব্য জাতীয় ঐকমত্য তৈরির প্রয়াস।
তবে প্রধান উপদেষ্টার এই সফর ও বিশেষ করে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠককে ভালো চোখে দেখেনি অনেকেই। বিএনপিসহ সরকারের মুখোমুখি থাকা রাজনৈতিক দলগুলো এই সফর ও বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখছে। বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া মহলে কেউ কেউ মনে করছেন, এটি ইতিবাচক আন্তর্জাতিক বার্তা, যা বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার বাইরে যাওয়ার পথ খুলতে পারে। আবার একটি গোষ্ঠী এই সফরকে ‘পক্ষপাত’ হিসেবেও মনে করছে। বিশেষত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে ড. ইউনূসের সম্ভাব্য সম্মতি তাদের মনেই তৈরি করেছে দুশ্চিন্তার ছায়া।
ড. ইউনূস এখন কী করবেন, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তিনি কি আরও সক্রিয়ভাবে রাজনীতির আলোচনা ও সমঝোতায় যুক্ত হবেন? সফরের ধারাবাহিকতা যদি ভবিষ্যতেও থাকে, যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও বৈঠক, তাহলে এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারা তৈরি করবে।
ইংল্যান্ড সফর শেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফিরে এলেও এ নিয়ে কিছুই বলেননি তিনি এখনও। তবে এ সফরের কাঙ্ক্ষিত ফলোআপেই নির্ধারিত হবে রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন কতটা মসৃণ হতে যাচ্ছে।
রাজু আলীম: কবি ও সাংবাদিক