রাজবাড়ীর পাংশায় বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এর জেরে এক বছর আগে এক যুবদলকর্মীর বাড়িতে হামলা হয়। তাঁকে না পেয়ে পিটিয়ে আহত করা হয় তাঁর বাবা-মাকে। এবার সেই যুবদলকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করল প্রতিপক্ষ। অন্যদিকে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে দুর্বৃত্তের হামলায় খুন হয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। 
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নে যুবদলকর্মী রাশিদুল ইসলামকে (৩৩) গতকাল শনিবার কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। নিহত রাশিদুল ইসলাম পাট্টা ইউনিয়নের উত্তর পাট্টা গ্রামের কিয়ামউদ্দিন মণ্ডলের ছেলে। পেশায় তিনি একজন কৃষক ছিলেন।
স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপির দু’পক্ষের কোন্দলের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
জানা যায়, রাজনৈতিকভাবে রাশিদুল পাট্টা ইউনিয়ন যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ধান কাটার কাজে এক মাস আগে বরিশাল যান রাশিদুল। সেখান থেকে শুক্রবার রাতে ট্রাকে ধান নিয়ে বাড়ি ফেরেন। শনিবার সকালে ধান ভাগ করার জন্য বাড়ি থেকে বের হলে সকাল ১০টার দিকে নিভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর ওপর হামলা চালায়। তাঁকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
রাশেদুলের স্ত্রী জরিনা বেগম দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে ছিলেন। তাঁর বাড়িতে ভিড় করেছে প্রতিবেশীরা। জরিনা বলেন, তাঁর স্বামী ধান কেটে এক মাস পর বাড়ি ফিরেছিলেন। সকালে ধান ভাগ করতে যাচ্ছিলেন, তখনই তাঁর ওপর হামলা হয়। আওয়ামী লীগের আমলেও তাদের বাড়িতে হামলা হয়েছিল। এখন তিনি দুই সন্তান নিয়ে কী করবেন, কোথায় যাবেন বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নিহতের ঘরের টিনের বেড়ায় অস্ত্রের কোপের চিহ্ন দেখা গেছে। বেড়ার একাংশ কাটা অবস্থায় রয়েছে। পাট্টা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি জহিরুল আলম মুরাদ বিশ্বাস জানান, স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। তারা সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদের অনুসারী। রাশিদুল সাবু গ্রুপের কর্মী ছিলেন। 
রাজবাড়ী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খায়রুল আনাম বকুল জানান, রাশেদুল যুবদলের কর্মী কিনা তা তাঁর জানা নেই। ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো কমিটিতে তাঁর নাম থাকতে পারে বলে জানান তিনি। 
পাংশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দেবব্রত সরকার জানান, শত্রুতার জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। রাশিদুল ব্যক্তিগত কাজে যাওয়ার সময় নিভা নামক স্থানে দুর্বৃত্তরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত বিভিন্নভাবে তাদের নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। অতি দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। 
এদিকে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে দুর্বৃত্তের হামলায়  মিজানুর রহমান (৪৫) নামের এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা খুন হন। শুক্রবার সন্ধ্যার পর ভাইঘাট বাজারে হামলার শিকার হয়ে আহত অবস্থায় রাতে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। 
নিহত মিজানুর রহমান ভাইঘাটের সান্ডালপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। ধোপাখালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। পেশায় একজন কাঁচামাল ব্যবসায়ী। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক দায়িত্বশীল নেতা নিহতের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মিজানুরের চাচা মহির উদ্দিনসহ স্থানীয়রা জানান, ভাইঘাট বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করে মিজানুর একটি দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে ডেকে মসজিদের কাছের একটি গলিতে নিয়ে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। 
নিহত মিজানুরের ভাই আপন মিয়ার ভাষ্য, প্রতিবেশী আল আমিনের সঙ্গে জমি নিয়ে মিজানুরের বিরোধ ছিল। সালিশের কথা বলে তাঁকে ডেকে নিয়ে যায় আল আমিন ও তাঁর লোকজন। পরে তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হত্যা করে। 
ধনবাড়ী থানার ওসি এসএম শহীদুল্লাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, লাশের ময়নাতদন্তসহ আইনি প্রক্রিয়া চলমান। অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র অবস থ আওয় ম য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ