ফেসবুকে বহিষ্কৃত খুবি শিক্ষার্থীর ‘হুমকি’
Published: 5th, May 2025 GMT
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) বহিষ্কৃত বাংলা ডিসিপ্লিনের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনকে পরোক্ষভাবে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (৪ মে) দুপুরে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্টে তাকে প্রশাসনের ওপর দায় চাপাতে এবং পরোক্ষভাবে হুমকি দিতে দেখা যায়।
ফেসবুকে অভিযুক্ত নোমান লেখেন, “প্রশাসন থেকে আমাকে যখনই ডাকবে আমি হাজির হবো। কিন্তু আমার বাড়িতে পুলিশ পাঠানো বা পরিবারকে হয়রানি করলে ক্যাম্পাসে রক্তপাতের আশঙ্কা থাকবে! এবং এর দায়ভার একান্তই খুবির অথর্ব প্রশাসনের থাকবে। মাইন্ড ইট ভেরি কেয়ারফুললি।”
আরো পড়ুন:
খুলনায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ৫
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: খেলার মাঠে নেপথ্যের নায়ক আনসার ভাই
পরে ফেসবুকে সমালোচনা শুরু হলে নোমান পোস্টে ক্যাম্পাসে রক্তপাতের আশঙ্কার বিষয়টি এডিট করেন।
নোমানের ওই পোস্টকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজের একাংশ মনে করছেন, এটি শুধু আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে আরও অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক ও সহকারী ছাত্রবিষয়ক পরিচালক হাসান মাহমুদ সাকিকে লাঞ্ছনার অভিযোগে শনিবার (৩ মে) বিকেলে অনুষ্ঠিত ২৩১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। একইসঙ্গে তার ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং তার স্নাতক ডিগ্রির সনদপত্র স্থগিত রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে ‘অ্যাটেম্পট টু মার্ডার’ মামলা দায়েরও হয়েছে বলে জানা গেছে।
হরিণটানা থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ খায়রুল বাশার বলেন, “এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে এবং আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তার অবস্থান নিশ্চিত হলেই দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।”
ঢাকা/হাসিব/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মণিপুরে জমি ঘিরে সংঘাত, ‘ক্রসফায়ারে’ কুকি গ্রামপ্রধান নিহত
ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে কুকিদের সঙ্গে মেইতেই সম্প্রদায়ের সংঘাত আবার বাড়ছে। দক্ষিণ মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর জেলার লাংচিয়াংমানবি নামের একটি গ্রামে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ কুকিদের লাংচিয়াংমানবির গ্রামপ্রধানের স্ত্রী নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম হৈখোলহিং হাওকিপ।
মণিপুর পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তাদের ওপরে গুলি চালানো হলে তারা পাল্টা গুলি চালায়। এতে হাওকিপ নিহত হন।
কুকি-জো সম্প্রদায়ের বক্তব্য
তবে এই মুহূর্তে মণিপুরে আদিবাসীদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সংগঠন ইন্ডিজিনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরাম (আইটিএলএফ) জানিয়েছে, হৈখোলহিং হাওকিপ গ্রামপ্রধানের স্ত্রী ছিলেন না। তিনি নিজেই লাংচিয়াংমানবি গ্রামে কুকি-জো সম্প্রদায়ের প্রধান ছিলেন।
আইটিএলএফ বলছে, হাওকিপের একমাত্র অপরাধ, তিনি কুকি-জো সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই চূড়াচাঁদপুর জেলায় ‘ধর্মঘটের’ ডাক দিয়েছে আইটিএলএফ। কুকি-জো নাগরিক সংগঠন নামে আদিবাসীদের একটি সংগঠন ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছে।
আইটিএলএফ বলেছে, এ জঘন্য কাজটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি আরেকটি লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করে হামলা। এটি কুকি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের জাতিগত নির্মূলের পদ্ধতিগত একটি কৌশলে পরিণত হয়েছে৷ নিরাপত্তা বাহিনীকে এই ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অনুমতি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে সরাসরি দায়ী করছে আইটিএলএফ।
কী কারণে সংঘাত
কুকি-জো ও মেইতেইরা পাশাপাশি বসবাস করে। ফলে তাদের বসবাস বা চাষের জমিও পাশাপাশি। ফলে জমি বা জমির সীমানা নিয়ে কুকি-জো ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিরোধ বাড়ছে। দুই জমির মধ্যবর্তী অঞ্চলকে এখন সীমান্তের মতো ‘বাফার জোন’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। দুই পক্ষের মধ্যে যাতে জমি নিয়ে বিবাদ না হয়, তা মাথায় রেখে সরকারের তরফে এই ‘বাফার জোন’ তৈরি করা হয়েছিল।
ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকা জানিয়েছে, ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরে জমি নিয়ে এই ধরনের বিরোধের খবর পাওয়া যায়নি। অবশ্য ২০২৩ সালের মে মাসে যখন মেইতেইদের সঙ্গে কুকি-জোসহ অন্যান্য আদিবাসীর সংঘাত শুরু হয়, তখন জমি নিয়ে বিবাদের নানা ঘটনা ঘটেছিল। তখন সরকার দুই পক্ষকে আলাদা রাখতে ‘বাফার জোন’ তৈরি করে। ফলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরে জমি নিয়ে বিবাদ হয়নি।
গত এক সপ্তাহে অন্তত দুবার ফুবালা গ্রামে কৃষকদের মধ্যে জমির সীমানা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ১৫ জুন এক দফায় সংঘর্ষ হওয়ার পরে আবার হলো গতকাল, যার জেরে একজনের মৃত্যু হলো। এলাকায় উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।
আইটিএলএফ গতকালের এ ঘটনার জন্য মেইতেইদের দায়ী করেছে। তারা বলেছে, মেইতেইরা ‘বাফার জোনে’ নিয়মিত আক্রমণ চালাচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে নিরাপত্তাবাহিনী জানে। কিন্তু তারা দুর্বল সম্প্রদায়কে সাংবিধানিক সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার কারণেই আরও একজনের প্রাণ গেল।
এই ‘বাফার জোনে’ সংঘাত দিয়েই গতকাল নতুন করে লড়াই শুরু হয়। মণিপুর পুলিশ গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিষ্ণুপুর জেলার ফুবালা গ্রামের চাষি নিংথৌজাম বীরেন সিংকে বেলা ৩টার দিকে একজন অজ্ঞাত ও সশস্ত্র দুষ্কৃতি বাম হাতে গুলি করে। তিনি ধানখেতে কাজ করার সময় তাঁকে গুলি করা হয়। পরে তাঁকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ইম্ফলের আঞ্চলিক ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে।
পুলিশ দাবি করছে, এ ঘটনার জেরে গতকাল বিকেলে নিরাপত্তা বাহিনী লাংচিয়াংমানবি, হেইচাংলোক, ফুবালা গ্রামের পশ্চিমাঞ্চলে এবং তার আশপাশে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরে ‘গুলি’ চালানো হলে তারা পাল্টা গুলি চালায়, যাতে হৈখোলহিং হাওকিপ নিহত হন।
হাওকিপের মরদেহ চূড়াচাঁদপুর জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর কুকিপ্রধান জেলা। ফলে হাওকিপের মরদেহ নিয়ে যাওয়ায় সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওই জেলাসহ মণিপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
মেইতেই সম্প্রদায়ের অভিযোগ
মেইতেই সম্প্রদায়ও আদিবাসীদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করছে।
মেইতেইরা বলছে, কুকি-জো সম্প্রদায়ের মানুষ ‘বাফার জোনে’ সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে, অথচ সব জেনেও সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী চুপচাপ রয়েছে। এই ঘটনার জেরে মেইতেইরা তাদের নিয়ন্ত্রিত রাজধানী ইম্ফল এবং সংলগ্ন অঞ্চলে আজ শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। গতকালের ঘটনার পরে তারা বিষ্ণুপুর এবং চূড়াচাঁদপুরের মধ্যবর্তী জাতীয় সড়কও দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। এতে মেইতেই নিয়ন্ত্রিত ইম্ফল ও বিষ্ণুপুর এবং কুকি-জো নিয়ন্ত্রিত চূড়াচাঁদপুর আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়তি বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে।
২০২৩ সালের মে মাস থেকে জাতিগত সহিংসতায় মণিপুরে ২৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।