মিলানের ফ্লাইটে ওঠার আগেই বার্সা কোচ হ্যান্সি ফ্লিক স্কোয়াড লিস্ট জানিয়ে দিয়েছেন। দলের তারকা স্ট্রাইকার লেভানডস্কিকে নিয়েই আজ রাতে ‘ইন্টার’ পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছেন তিনি। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ৩-৩ গোলে ড্র করতে ঘাম ছুটে গিয়েছিল ইয়ামালদের। আজ সেখানে সান সিরোতে প্রায় ৮০ হাজার দর্শকের সামনে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে বার্সাকে। 

১০ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার চ্যালেঞ্জ কি আজ নিতে পারবেন ইয়ামাল-রাফিনহারা? রেকর্ড বলছে এ পর্যন্ত ইতালিয়ান এই জায়ান্টদের মাঠে গিয়ে ছয় ম্যাচের মাত্র একটিতে জিততে পেরেছে কাতালানরা। এমনকি বার্সার ইতিহাসে ইতালিতে গিয়ে সাফল্যের হার মাত্র ২১ শতাংশ; ২৪ ম্যাচে মাত্র পাঁচটিতে জয়! 

তবে যে দলে ইয়ামালের মতো কিশোর ম্যাজিশিয়ান রয়েছেন, রাফিনহার মতো ফর্মে থাকা উইঙ্গার রয়েছেন, এর সঙ্গে লেভানডস্কির প্রত্যাবর্তন– পুরো দলকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে আজ। অবশ্য ইন্টার মিলানও ছেড়ে দেওয়ার দল নয়, নিজেদের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গত ১৫ ম্যাচে অপরাজিত তারা। আজ একটি অপূর্ণতা নিয়েই তাদের মাঠে মানতে হবে, দলের আর্জেন্টাইন তারকা স্ট্রাইকার লাওতারো মার্টিনেজের হালকা চোট থাকলেও গতকাল অনুশীলন করেছেন। আজ তার খেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

চোট আঘাতের ধাক্কা বার্সাতেও রয়েছে। রক্ষণের দুই সেনানী আলেজান্দ্রো বালদে আর জুলেস কুন্দে ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন। চোটের পর ফিট হয়ে লা লিগায় নামলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নাম নথিভুক্ত না করানোয় গোলরক্ষক টারস্টেগান সঙ্গী হতে পারেননি দলের সঙ্গে। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে আজ শুরুর একাদশে ফেরান তোরেসকে নাও দেখা যেতে পারে। তবে এই মুহূর্তে তোরেসই কিন্তু ফ্লিকের অন্যতম অস্ত্র। রক্ষণে জেরার্ড মার্টিন, ইনিগো মার্টিনেজ, পাও কুবার্সি আর হেক্টর ফোর্টকে নিয়ে ইন্টার মিলানের আক্রমণ রুখে দেওয়ার কৌশল সাজাতে পারে বার্সা। 

ইন্টার মিলান কোচ সিমিওন ইনজাঘি সেখানে মাঠ সাজাতে পারেন ৩-৫-২ ফরমেশনে। মাঝমাঠে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতে চান তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বড় ম্যাচগুলোতে এভাবেই মাঠ সাজিয়ে সফলতা পেয়েছেন। তা ছাড়া ইতালিয়ান ক্লাবটি দর্শকদেরও আজ প্রবল সমর্থন পাবে। এরই মধ্যে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো জানিয়েছেন, তাঁর প্রিয় ক্লাব ইন্টারের ম্যাচ দেখতে মাঠে থাকবেন। 

‘সবাই জানে আমি ইন্টার মিলানের সমর্থক। দলটি আর্জেন্টাইনদেরও।’ শুধু লাওতারোর জন্যই নয়, ফিফা সভাপতি মনে করিয়ে দেন বছর ১৫ আগে যেবার ইন্টার ট্রেবল জিতেছিল, সেবার দলটিতে আর্জেন্টিনার জানেত্তি-মিলিতোরও খেলেছিলেন। এবার অবশ্য ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে  ইন্টারের। বরং লিগ থেকে মনোযোগ সরিয়ে তাদের চোখ মিউনিখে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। তবে এর আগে আজ তাদের বার্সাকে হারাতেই হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইন ট র ম ল ন ইন ট র ম ল ন

এছাড়াও পড়ুন:

চাকসু নির্বাচন: প্যানেলে ভিপি-জিএস পদে নারী শুধু একজন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে ১০টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু শীর্ষ দুই পদ—সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদকে (জিএস) ৯টি প্যানেল কোনো ছাত্রীকে মনোনয়ন দেয়নি। কেবল একটি প্যানেল জিএস পদে এক ছাত্রীকে প্রার্থী করেছে।

প্যানেলগুলো শীর্ষ পদে নারী প্রার্থী না দেওয়ার কারণ হিসেবে বলছে, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া, জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ ও সাংগঠনিক দুর্বলতা। তবে ছাত্রীরা মনে করছেন, মূল সমস্যা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতি এবং সব সময় নারীকে পিছিয়ে রাখার প্রবণতা।

যে প্যানেল থেকে একমাত্র নারী প্রার্থী হয়েছেন, তা হলো ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড) ও ছাত্র ফেডারেশন একত্র হয়ে এ প্যানেল দিয়েছে। তাদের প্যানেল থেকে জিএস পদে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাসনীম জাহান শ্রাবণ। তিনি পদার্থবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।

ক্যাম্পাসে বিগত সময়ে নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রশাসনের কেউ কেউ নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এসব করা হয়েছে মূলত নারীদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে। এ জন্য শীর্ষ পদে নির্বাচন করার জন্য নারীদের উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে আনা দরকার ছিল।মোশরেকা অদিতি হক, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ

তাসনীম জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরাপদ নয়। এখানে ছাত্রীদের নিয়মিত বুলিং, শেমিং ও মোরাল পুলিশিংয়ের মতো ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। অনলাইন ও সরাসরি—দুই ক্ষেত্রেই ছাত্রীরা এসব ঘটনার শিকার হন। তাই অনেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান না।’

আগামী ১২ অক্টোবর সপ্তম চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চাকসুর মোট ২৮ পদের মধ্যে নির্বাচিত হবেন ২৬ জন। পদাধিকারবলে সভাপতি থাকবেন উপাচার্য। আর কোষাধ্যক্ষ পদে সভাপতিই একজন শিক্ষককে মনোনীত করবেন।

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ভোট হচ্ছে এ সংসদে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিভিন্ন আন্দোলনে সামনে থাকা ছাত্রীরা শীর্ষ পদে প্রার্থী না হওয়ায় বিস্ময় তৈরি হয়েছে। চাকসু নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষা সব সময়ই বেশি। সংগঠনগুলো যদি নারী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিত, তবে নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন সুর শোনা যেত। এখন আলোচনায় নারী প্রার্থীর সংখ্যা নয়, বরং তাঁদের অনুপস্থিতিই বেশি আলোচিত হচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১০টি প্যানেলের মধ্যে ২৬০ পদের মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ৩৭ জন।

যে প্যানেল থেকে একমাত্র নারী প্রার্থী হয়েছেন, তা হলো ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড) ও ছাত্র ফেডারেশন একত্র হয়ে এ প্যানেল দিয়েছে।

মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া নাসরিন বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম অন্তত দু-তিনটি প্যানেলে ভিপি বা জিএস পদে নারী থাকবে। শেষ পর্যন্ত কেবল এক প্যানেল রাখল। এটা হতাশাজনক।’

শীর্ষ পদে নারী না থাকার বিষয়ে বড় ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি নারীদের এগিয়ে নিতে। এ কারণে দুজনকে সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে। আর ভিপি ও জিএস পদে যাঁদের মনোনীত করা হয়েছে, তাঁদের আমরা বেশি যোগ্য মনে করেছি।’

ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গত প্রায় এক দশক ক্যাম্পাসে ছাত্রদল সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারেনি। ৫ আগস্টের পরও ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির চর্চা করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে শীর্ষ একটি পদে একজন ছাত্রীকে মনোনয়ন করার বিষয়ে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরাপদ নয়। এখানে ছাত্রীদের নিয়মিত বুলিং, শেমিং ও মোরাল পুলিশিংয়ের মতো ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। অনলাইন ও সরাসরি—দুই ক্ষেত্রেই ছাত্রীরা এসব ঘটনার শিকার হন। তাই অনেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান নাতাসনীম জাহান

সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে শীর্ষ পদে কোনো ছাত্রী রাখা সম্ভব হয়নি বলে জানান দ্রোহ পর্ষদের ভিপি প্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। তিনি জানান, সাংগঠনিকভাবে তাঁরা দুর্বল অবস্থায় আছেন। সংগঠনের বর্তমান আহ্বায়ক ইসরাত হক সম্প্রতি পড়াশোনা শেষ করেছেন। এ কারণে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি।

নারীদের শীর্ষ পদে নির্বাচন করতে উৎসাহ দেওয়া দরকার ছিল বলে মনে করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশরেকা অদিতি হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসে বিগত সময়ে নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রশাসনের কেউ কেউ নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এসব করা হয়েছে মূলত নারীদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে। এ জন্য শীর্ষ পদে নির্বাচন করার জন্য নারীদের উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে আনা দরকার ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ