Samakal:
2025-11-03@23:41:30 GMT

আমাদের রনো কাকু

Published: 10th, May 2025 GMT

আমাদের রনো কাকু

কমরেড হায়দার আকবর খান রনো ছিলেন আমার কাছে রনো কাকু। আমার বাবা কমরেড আজিজুর রহমান দীর্ঘদিন রনো কাকুর সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির শীর্ষ ফোরাম পলিটব্যুরোতে থাকার কারণে আমাদের পরিবারের সঙ্গে তাঁর অকৃত্রিম ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই ঘনিষ্ঠতা কাকুর পরিবারের সঙ্গেও একই মাত্রায় বজায় ছিল। রনো কাকুর মা কানিজ ফাতিমা মোহসিনা ছিলেন এই ঘনিষ্ঠতার মূল অনুঘটক। যখনই তাদের বাসায় গিয়েছি বা দিনের পর দিন থেকেছি, তাঁর স্নেহের ঘাটতি পাইনি। রনো কাকুর একমাত্র মেয়ে রানা আপাও ছিলেন একসময়কার ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় নেতা। জামাতা রাজু ভাইও ছিলেন আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা। এ ছাড়া রনো কাকুর ছোট ভাই হায়দার আনোয়ার খান জুনো ও তাঁর পরিবার একই সংগ্রামের সহযাত্রী হওয়াতে ঘনিষ্ঠতার পরিধি পুরো পরিবার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

সম্ভবত ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি আমি প্রথম কমরেড রনোর প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে আসি। তখন বরিশাল ক্যাডেট কলেজে সবে ভর্তি হয়েছি। ছুটিতে বাবার সঙ্গে ঢাকায় এসেছি। তখন ওয়ার্কার্স পার্টির মধ্যে ১১ জনের পার্টির সুবিধাবাদী ঝোঁকের বিরুদ্ধে আলাদা অবস্থান ছিল। তাদের সঙ্গে রনো কাকু মাঝে মাঝে যুক্ত হতেন। এ রকম একটি যুক্ততার সভা বসেছিল রনো কাকুর ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাসায়। বাবা আমাকে বাসার বারান্দাতে বসিয়ে রেখে সভায় অংশ নিয়েছেন। বারান্দাতে বসে ছিলেন রনো কাকুর বাবা প্রকৌশলী হাতেম আলী খান। তিনি আমার সঙ্গে অনেক সময় ধরে গল্প করেছিলেন। তাঁর কাছ থেকে তখন প্রথম জানতে পেরেছিলাম নওশের আলী খানের কথা। অবিভক্ত বাংলার কিংবদন্তি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নওশের আলী ছিলেন রনো কাকুর নানা। দেশভাগকে মানতে না পেরে পূর্ববঙ্গের নড়াইলের সন্তান ওপার বাংলার রাজনীতিতে স্থায়ী হন। এ রকম একটি একরোখা প্রগতিশীল চিন্তার উত্তরাধিকার এ দেশের রাজনীতিতে বহন করে চলেছিলেন হায়দার আকবর খান রনো।

কমরেড রনোর সবচেয়ে বড় কীর্তি এ দেশের মার্ক্সবাদী তত্ত্ব গঠনে ভূমিকা। তাঁর সাহিত্যরসসমৃদ্ধ ও সহজবোধ্য মার্ক্সীয় তত্ত্ব রচনাশৈলীর তুলনা এখানে প্রায় বিরল। বিশেষ করে ছোট ছোট বাক্যে রচিত তাঁর লেখা সুখপাঠ্যের অনুভূতি দেয়। আমাদের রাজনীতি চর্চায় তাঁর গ্রন্থ ‘মার্কসবাদ ও সশস্ত্র সংগ্রাম’, ‘সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের সত্তর বছর’, ‘মার্কসীয় অর্থনীতি’ বেশ কাজে এসেছিল। ‘ফরাসি বিপ্লব থেকে অক্টোবর বিপ্লব’, ‘পুঁজিবাদের মৃত্যুঘণ্টা’ এককথায় অনন্য। বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত তাঁর আত্মজীবনী ‘শতাব্দী পেরিয়ে’ও এক অসাধারণ দলিল। আমি এই বইয়ের একটা বড় রিভিউ লিখেছিলাম সাখাওয়াত টিপুর অনুরোধে। রনো কাকু আমার এই রিভিউ পড়ে নাকি প্রশংসা করেছিলেন। বামপন্থি ছাত্র রাজনীতি করার সময় কমিউনিস্ট রাজনীতির প্রবেশিকা হিসেবে ‘গ্রাম শহরের গরীব মানুষ জোট বাঁধো তৈরি হও’ বেশ কার্যকর মনে হতো। আমার প্রয়াত বাবা কমরেড আজিজুর রহমান যখন ওয়ার্কার্স পার্টির গণপ্রকাশনের দায়িত্ব নেন তখন রনো কাকুকে দিয়ে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বই লিখিয়েছিলেন। আবার এক সময় পার্টির শিক্ষা সিরিজের বইগুলো আমাদের প্রাথমিক মার্ক্সবাদ শিক্ষায় বেশ কাজে এসেছিল। আবার আমরা যখন ওয়ার্কার্স পার্টি পুনর্গঠিত করি তখন তাঁর ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকতাম। সেখানে ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মহামন্দার ওপর কর্নারস্টোন পাবলিকেশন এবং মান্থলি রিভিউ প্রেসের বেশ কয়েকটি বই আমি সংগ্রহ করি। রনো কাকু সেগুলো দেখে আমাকে টাকা দেন এবং আমি তাঁর জন্য সেই বইগুলো কিনে নিয়ে আসি। তাঁর ‘পুঁজিবাদের মৃত্যুঘণ্টা’ রচনায় সম্ভবত এগুলো সহায়তা করেছিল।

আমার মতে, কমিউনিস্ট আন্দোলনে সবাই সমানভাবে সব দিকে ভূমিকা রাখতে পারেন না। এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের এই ভয়ানক দুর্বলতার জন্য আমরা রনো কাকুর তাত্ত্বিক অবদানকে আরও বিকশিত হতে দিইনি। এখন তাঁর দূর অনন্তের পথে যাত্রার কারণে এই ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতিসাধন হলো। তবে রনো কাকুর মতো লোক, যারা নিজেদের সর্বস্ব বিলীন করে দেশের শ্রমজীবী মানুষের জন্য সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের সুবিধাবাদ যেমন গ্রাস করতে পারে না, তেমনি বিস্মৃতির অতলেও তলিয়ে দেওয়া যায় না।
আজ রনো কাকুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। আমার বাবা চলে যাওয়ার পর পাঁচ বছরের মতো গত হয়েছে। কমরেড নুরুল হাসান, কমরেড জাকির হোসেন হবিসহ অনেক কমরেড আজ আর বেঁচে নেই। তবে রনো কাকুসহ এই কমরেডরা প্রাসঙ্গিক হয়ে আছেন দেশের নির্বাচনী গণতন্ত্র ফেরত আনার লড়াইয়ে; জনতুষ্টিবাদের আগ্রাসন প্রতিরোধে; উগ্র দক্ষিণপন্থার উত্থান ঠেকানোর সংগ্রামে; মৌলবাদ আর সাম্প্রদায়িকতার বাড়বাড়ন্ত ঠেকানোর যুদ্ধে; সর্বোপরি দুনিয়াজোড়া মেহনতি মানুষের মুক্তির শ্রেণিযুদ্ধে। কমরেড হায়দার আকবর খান রনো লাল সালাম।

অনিন্দ্য আরিফ: সাংবাদিক, অনুবাদক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র র জন ত আম দ র পর ব র কমর ড

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় ২২ বোতল মাদকসহ যুবক আটক

খুলনায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ২২ বোতল বিশেষ ধরনের মাদকসহ এক যুবককে আটক করা হয়েছে। 

রবিবার (২ নভেম্বর) কেএমপির মিডিয়া সেলের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

মিডিয়া সেল প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, খুলনা মহানগর ডিবি পুলিশের একটি টিম শনিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খালিশপুর থানাধীন নুরনগর মেইন রোড সংলগ্ন জনৈক আকবর মুন্সির বাড়িতে অভিযান চালায়। 

এসময় ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. আবুল কালাম সরদারের (৩৫) ঘরের খাটের নিচ থেকে ২২ বোতল কোডিন ফসফেট যুক্ত উইন কোরেক্স উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মো. আবুল কালাম সরদারকে আটক করা হয়। সে বরিশালের নলছিটি উপজেলার ভাঙ্গা দেওলা গ্রামের মৃত আমির আলী সরদারের পুত্র। 

কেএমপির মিডিয়া সেলের ইনচার্জ সহকারী পুলিশ কমিশনার খোন্দকার হোসেন আহম্মেদ বলেন, “আটককৃত আবুল কালাম সরদার নগরীর নুরনগর মেইন রোড এলাকার মো. আকবর মুন্সির বাড়িতে ভাড়াটিয়া থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ খুলনা মহানগর এলাকায় মাদকদ্রব্য কোডিন ফসফেট যুক্ত উইন কোরেক্স ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করে আসছে। তার বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেরপুরে কৃষককে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ
  • খুলনায় ২২ বোতল মাদকসহ যুবক আটক