ভারত–পাকিস্তান: যুদ্ধে সবার আগে জেতে মিথ্যা
Published: 11th, May 2025 GMT
একটা কথা প্রচলিত আছে, যুদ্ধ শুরু হলে সবার আগে যার মৃত্যু ঘটে তা হচ্ছে ‘সত্য’। যুদ্ধ লাগলে মিথ্যা খবর ছড়ানো হয় আর সত্য চাপা পড়ে যায়। যুদ্ধের কাহিনি সৈন্যরা তৈরি করতে পারেন না। সেই কাহিনি তৈরি হয় মিথ্যা আর গুজব দিয়ে। বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষ মরে, আহত হয়। কিন্তু তার আগেই খবরের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সেখানেই জয়-পরাজয় ঠিক হয়। যারা এসব খবর নিয়ন্ত্রণ করে, তারা শুরুতেই জিতে যায়।
যুদ্ধের সময় সত্যিটা জানার চেয়ে দেশকে এক রাখা বা যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন জোগানো বেশি জরুরি মনে করা হয়। তাই অনেক সত্যি কথা লুকিয়ে ফেলা হয় বা ঘুরিয়ে বলা হয়। যুদ্ধ মানেই প্রয়োজনীয় সবাইকে একসঙ্গে রাখার চেষ্টা। এর জন্য একটা জোরালো গল্প দরকার হয়, যাতে মানুষের মনোবল বাড়ে, যুদ্ধকে সঠিক মনে হয় আর শত্রুর প্রতি ঘৃণা জন্মায়। ইতিহাসে দেখা গেছে, সরকার ও সেনাবাহিনী যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন পেতে ইচ্ছা করেই এমন প্রচারণা চালায়।
সরকার বা সেনাবাহিনী যখন যুদ্ধের কথা বলে, তখন তারা বোঝায় যে দেশের স্বাধীনতা বা ভালোর জন্যই এই যুদ্ধ দরকার। তারা শত্রুকে বিপদ হিসেবে দেখায় আর নিজেদের সৈন্যদের সাহসী বলে তুলে ধরে। এতে মানুষ গর্বিত হয় ও দেশের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যায়। তারা সৈন্যদের কষ্টের কথা বলে, যুদ্ধে জেতার কাহিনি শোনায় আর শত্রুকে খারাপ, নিষ্ঠুর বা বোকা হিসেবে দেখায়, যাতে মানুষ শত্রুকে ঘৃণা করে। অনেক সময় শত্রুর দোষ বাড়িয়ে বলা হয়, মিথ্যা খবর ছড়ানো হয়, এমনকি খারাপ ভাষাও ব্যবহার করা হয়।
প্রচারণা শুধু বাইরের লোকদের মত বদলানোর জন্যই নয়, বরং নিজের দেশের মানুষ ও সৈন্যদের সাহস বাড়ানোর জন্যও দরকারি। শত্রুপক্ষের সৈন্যদের মনোবল ভাঙতেও এটা কাজে লাগে। আজকাল এই প্রচারণা সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়। পোস্টার, সিনেমা, উত্তেজক কথাবার্তা ও স্লোগানের মাধ্যমেও এটা করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের সামনে যুদ্ধকে একটা মজার অভিযান হিসেবে উপস্থাপন করা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শত্রুকে খারাপভাবে দেখিয়ে মানুষকে এক করা হয়েছিল। আজও যুদ্ধের সময় প্রচারণা একটা শক্তিশালী অস্ত্র, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা ছড়িয়ে মানুষের চিন্তাভাবনা বদলে দেয়।
সম্প্রতি ভারত যখন পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে হামলা চালাল, তখন এক নতুন ধরনের যুদ্ধ শুরু হলো—তথ্যের যুদ্ধ। দুই দেশের মানুষই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম কথা ছড়াতে লাগল, আর এতে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার ভয় তৈরি হলো। দুই দেশই চাইছিল যেন মানুষ তাদের সমর্থন করে।
এ রকম অবস্থায় সত্যিটা খুঁজে বের করা খুব কঠিন। কারণ, অনেক উল্টোপাল্টা খবর একসঙ্গে ছড়াতে থাকে। আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কারণে আগের মতো সহজে খবর লুকানো যায় না। কিন্তু দুই দেশের নিজেদের সংবাদমাধ্যম সাধারণত সরকারের কথাই বলে। তাই সরকার এখনো মানুষের চিন্তাভাবনা সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
এই যুদ্ধ আবারও মনে করিয়ে দেয় যে যুদ্ধ শুরু হলে তার প্রথম শিকার হয় সত্য। তখন মিথ্যা গল্প, প্রচারণা আর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ ঘৃণার মধ্যে ডুবে যায়। ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক এমনিতেই খারাপ, তার ওপর এই তথ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। দুই পক্ষই নিজেদের গল্পে জিততে চায়, আর এতে শান্তি স্থাপন আরও কঠিন হয়ে পড়ে।এ ধরনের পরিস্থিতিতে দুই দেশের নেতারাই লাভবান হন। তাঁরা সরকারি সংবাদমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো আবেগময় বা ভুয়া খবর ব্যবহার করে মানুষের সমর্থন আদায় করেন। সত্যি নিয়ে যখন সন্দেহ জাগে, তখন তাঁরা নিজেদের মতো করে ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারেন, শত্রুকে খারাপ বানাতে পারেন, এমনকি দেশের ভেতরের সমালোচকদেরও শত্রু বানিয়ে ফেলতে পারেন। ‘দেশের নিরাপত্তা’ আর ‘ঐক্যের’ কথা বলে তাঁরা মানুষকে নিজেদের গল্প বিশ্বাস করায়। তখন মানুষ নিজেরা চিন্তা না করে, যা বলা হয় তাই বিশ্বাস করে। আর যারা এই গল্পগুলো তৈরি করে, তারা অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
প্রচারণা হলো যুদ্ধের একটা কৌশল। এর মানে হলো সাধারণ মানুষ আর শত্রুকে ভুল খবর দিয়ে ধোঁকা দেওয়া। এই তথ্যের যুদ্ধে দুই পক্ষই দাবি করে তারা কত বিমান ধ্বংস করেছে বা কতজন মারা গেছে; কিন্তু একেক পক্ষ একেক রকম কথা বলে। সবাই দেখাতে চায় যে তারাই জিতেছে। একজন বলেছিলেন, ‘যুদ্ধের সময় সত্যিটা এত দামি যে তাকে সব সময় মিথ্যার আড়ালে রাখতে হয়।’ অর্থাৎ যুদ্ধের সময় দেশের নিরাপত্তা বা মনোবল ঠিক রাখতে সত্যি না বলে মিথ্যা বলাটাকেই জরুরি মনে করা হয়।
যখন চারদিকে মিথ্যা খবর, পুরোনো ভিডিও আর বিভিন্ন দাবি ঘুরতে থাকে, তখন মানুষ কী করবে? প্রথমে বুঝতে হবে এটা একটা তথ্যের যুদ্ধ। সরকার বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব আবেগময় বা বড় দাবি করা হয়, সেগুলোকে সন্দেহের চোখে দেখা উচিত। অনেক সময় ইচ্ছা করেই সত্যিটা লুকানো হয়। পুরোনো বা অন্য ঘটনার ভিডিও নতুন বলে চালানো হয়।
তাই যেকোনো খবর দেখার সময় ভাবুন—এটা কে বলছে? সরকার বা কোনো দল কি এটা দিয়ে নিজেদের সুবিধা করতে চাইছে? নাকি কোনো অচেনা সোশ্যাল মিডিয়া পেজ, যা এক পক্ষের হয়ে কথা বলছে?
ভুল খবর দেখতে পেলে তা ছড়ানো বন্ধ করতে সাহায্য করুন। যারা কোনো ঘটনার ভিডিও বা ছবি শেয়ার করে, তা শেয়ার করার আগে যাচাই করুন। গুগলে ছবি খুঁজে দেখুন বা ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইটে দেখে নিন এটা পুরোনো বা মিথ্যা কি না। যাচাই না করে আবেগময় বা বিভ্রান্তিকর কিছু শেয়ার করবেন না। এতে যুদ্ধ আর ঘৃণা আরও বাড়ে।
আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সত্যের চেয়ে আলোচনাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তাই সত্যিটা যাচাই করার দায়িত্ব আমাদের নিজেদের। যা-ই দেখি বা শুনি, তা নিজের বিচারবুদ্ধি দিয়ে বোঝা দরকার। কোনো কিছু শুধু আবেগের বশে বিশ্বাস করা ঠিক নয়। সবাই যদি সত্যিটা খোঁজার চেষ্টা করে, তাহলে ভুল-বোঝাবুঝি ও সংঘাত কমে যেতে পারে।
এই যুদ্ধ আবারও মনে করিয়ে দেয় যে যুদ্ধ শুরু হলে তার প্রথম শিকার হয় সত্য। তখন মিথ্যা গল্প, প্রচারণা আর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ ঘৃণার মধ্যে ডুবে যায়। ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক এমনিতেই খারাপ, তার ওপর এই তথ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। দুই পক্ষই নিজেদের গল্পে জিততে চায়, আর এতে শান্তি স্থাপন আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
তাই আমাদের দরকার প্রশ্ন করা, যাচাই করা আর চিন্তা করা। সত্যি খুঁজে বের করা কঠিন হলেও আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ, সত্যি ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়।
● রিজওয়ান-উল-আলম সহযোগী অধ্যাপক, মিডিয়া, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য দ ধ র সময় ব স কর শত র ক তখন ম দরক র সরক র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তনের প্রস্তুতি
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তনের প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। এর মধ্যে মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হিসেবে বিবেচিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) পর্যায়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে কিছু রদবদল করা হতে পারে। আর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় এ পদে ব্যাপক রদবদল হবে। এ লক্ষ্যে এখন যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই (ফিট লিস্ট) করা হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ২১ জন ডিসিকে প্রত্যাহার করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। যোগ্য কর্মকর্তা বাছাইয়ের কাজটি শেষ হলেই তাঁদের পরিবর্তন করা হতে পারে। বাছাইয়ের কাজটি শেষ হতে পারে এই মাসের মধ্যে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু সামনে জাতীয় নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন রয়েছে, তাই মাঠ প্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে ‘যোগ্য’ কর্মকর্তাদের পদে আনার চেষ্টা চলছে। এবার নতুন করে ২৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে ডিসি পদে নিয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে। বাছাই তালিকা তৈরির জন্য ২১ জুন ২৮তম ব্যাচের বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, ঢাকা, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাট জেলার ডিসিরা ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ডিসি পদে এই ব্যাচের ২৬ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের পদোন্নতি হয়নি।বর্তমানে ২৪তম, ২৫তম এবং ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা ডিসি পদে দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে ২৪ ও ২৫তম বিসিএসের কর্মকর্তারা বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের (২০০১-০৬) আমলে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। এক–এগারোর পটপরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (২০০৭–০৮) আমলে ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন।
সরকারি ভাষ্য—বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি একটি নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বদলির সময় ও প্রেক্ষাপট স্পষ্টভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে আলোচনা আছে তাতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে, এমনটি ধরে নিয়েই এ প্রস্তুতির কাজ চলছে।
বিগত সরকারও নির্বাচনের কয়েক মাস আগে অনেক জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন এনেছিল। অবশ্য গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের ডিসিদের প্রত্যাহার করে পর্যায়ক্রমে সব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয় সরকার। তবে এ নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তারা হাতাহাতি, হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। তখন ৯ জন ডিসির পদায়ন বাতিল করা হয়েছিল। রদবদল করা হয়েছিল চার জেলার ডিসিকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। একই সঙ্গে আরও কিছু জেলায়ও পরিবর্তন আসতে পারে।যেসব জেলায় পরিবর্তন হতে পারে২১ জেলায় বর্তমানে যাঁরা ডিসির দায়িত্বে আছেন, তাঁরা গত মার্চে উপসচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়েছেন। তবে ডিসির পদটি উপসচিব পদমর্যাদার। ফলে এই জেলাগুলোতে বদলির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
এই জেলাগুলো হলো—হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, ঢাকা, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাট। এসব জেলার ডিসিরা ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ডিসি পদে এই ব্যাচের ২৬ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের পদোন্নতি হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। একই সঙ্গে আরও কিছু জেলায়ও পরিবর্তন আসতে পারে।
এ ছাড়া আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় শরীয়তপুরের ডিসিকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। ফলে এই জেলায় নিয়মিত ডিসি নেই। স্বাভাবিকভাবে এই জেলাতেও পরিবর্তন আসবে।
জেলা প্রশাসক পর্যায়ে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে। যখন যে জেলায় প্রয়োজন হবে, সেখানে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে।মো. মোখলেস উর রহমান, সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসক পর্যায়ে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে। যখন যে জেলায় প্রয়োজন হবে সেখানে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। সামনে হয়তো ৪-৫ জন ডিসি বদল হতে পারে। এর মধ্যে শরীয়তপুরে অবিলম্বে একজন ডিসি নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া বাছাই তালিকা হয়ে গেলে যাঁরা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তাঁদের জায়গায় নতুন ডিসি দেওয়া হবে।
জনপ্রশাসন সচিব বলেন, যাতে বিতর্কের সুযোগ না থাকে সে জন্য খুব নিবিড়ভাবে বাছাই করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যাঁদের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পেশাদার ও সর্বোচ্চ যোগ্য লোককে বাছাই করা হচ্ছে। যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করাও একটি কঠিন কাজ। এ জন্য একটু সময় লাগছে। তবে জুলাইয়ের মধ্যেই বাছাই কাজ শেষ করা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এখন নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই জেলা প্রশাসকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। নির্বাচন ছাড়াও জেলায় ডিসিদের অনেক ধরনের দায়িত্ব রয়েছে।ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকবেন কি না, স্পষ্ট নয়জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকেরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তবে আগামী নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবেন কি না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।
এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র স্থাপনে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রধান করে কমিটি করার বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। এই সংশোধনী এনে সম্প্রতি ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারাই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করবেন।
আগে ইসির কর্মকর্তারাই এ কাজটি করতেন। কিন্তু গত নির্বাচনে ইসি প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের এই কাজে যুক্ত করেছিল, যা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। এবার সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে ইসির কর্মকর্তাদের হাতে।
অবশ্য বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রশাসন ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তাই নির্বাচনী দায়িত্বে থাকতে অনিচ্ছুক। তাঁরা মনে করেন, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের পর অনেক সময় বিশেষ করে সরকার পরিবর্তন হলেই ঢালাওভাবে ওএসডি বা বাধ্যতামূলক অবসরের মতো সিদ্ধান্তের মুখে পড়তে হয়। অথবা কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়। পদোন্নতিতেও অসুবিধায় পড়তে হয়। ফলে অনেকেই নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চান। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত হলে দায়িত্ব পালন ছাড়া উপায়ও থাকে না।
আগে বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করত, ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচনের সময় পছন্দের কর্মকর্তাদের ডিসি পদে বসিয়ে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। যদিও এবার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন যারা মাঠে আছে তার মধ্যে প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দল গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম (জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ফলে আগামী নির্বাচনে দলটিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এখন নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই জেলা প্রশাসকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। নির্বাচন ছাড়াও জেলায় ডিসিদের অনেক ধরনের দায়িত্ব রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়সহ জেলার প্রায় সব সরকারি কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন ডিসিরা। এসব পদের দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের ওপরই জেলার অনেক কিছু নির্ভর করবে। ফলে কেবল নির্বাচন নয়, সব সময়ের জন্যই ডিসি ও এসপির মতো পদগুলোতে নিরপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তা থাকা জরুরি।