৫ মে বেলা ১১টার দিকে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর দুপুর ১২টার দিকে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে সংস্কার প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন কমিশনের সদস্যরা। ১২ সদস্যের কমিশনের দুজন সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না।

সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে মঞ্চে থাকা কমিশনের সব সদস্যের হাতে সবুজ ও লাল মলাটের প্রতিবেদন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং ছবি তোলা হয়। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে সবার হাত থেকে সেসব প্রতিবেদনের কপি আয়োজকেরা নিয়ে নেন। সাংবাদিকদের চোখে বিষয়টি দৃষ্টিকটু ছিল। সাংবাদিকেরা আয়োজকদের আছে অনুরোধ জানিয়েও প্রতিবেদনের কপি পাননি। তবে অনুষ্ঠান শেষ হতেই প্রতিবেদনের ‘সফট কপি’ সাংবাদিকেরা পেয়ে যান। এখন সেই প্রতিবেদন বহু মানুষের হাতে।

দুর্বল সম্পাদনার এক দুর্দান্ত উদাহরণ স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন। সমগ্র প্রতিবেদনে অসংখ্য বানান ভুল। ১০টি পরিচ্ছেদের মধ্যে ভারসাম্য নেই, কোনোটি ১ পৃষ্ঠার, কোনোটি ৮২ পৃষ্ঠার। প্রতিবেদনজুড়ে অসংলগ্ন বাক্যের ছড়াছড়ি। পুরো প্রতিবেদন পড়লে মনে হতে পারে, অযত্নে-অবহেলায় তৈরি করা দলিল, যেন অভিভাবকহীন। জাতীয় দলিল এমন হওয়া উচিত নয়।

প্রতিবেদনের প্রধান দুর্বলতা এর বিষয়বস্তুতে। পুরো প্রতিবেদন একটি কারিগরি দলিল হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদন প্রস্তুতকারীরা স্বাস্থ্যের সমস্যাকে মূলত কারিগরি সমস্যা হিসেবে দেখেছেন এবং সমস্যার কারিগরি সমাধানের মধ্য দিয়ে সুপারিশমালা তৈরি করেছেন। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানুষ, এ দেশের পানি, বাতাস, মাটি, কৃষি, সংস্কৃতির উল্লেখ নেই। খুবই সচেতনভাবে এ দেশের স্বাস্থ্য আন্দোলনের ইতিহাসকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ভাষার ব্যবহার দেখে অনুমান করা যায়, কমিশনের সদস্যরা দেশকে চেনেন না।

কমিশনের সদস্য ১২ জন। তাঁদের ১০ জন চিকিৎসক, ১ জন সাবেক আমলা ও ১ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। কমিশনের প্রধান বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। প্রতিবেদন তৈরির আগে কমিশন নিজেদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক করেছে ৫১টি, অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ সভা করেছে ৩২টি। এসব পরামর্শ সভা হয়েছে ঢাকাসহ আরও আটটি জেলায়। এসব পরামর্শ সভায় কমপক্ষে ৩৬০ ব্যক্তি  উপস্থিত ছিলেন। কমিশন লিখিত পরামর্শ পেয়েছে ৪৬ ব্যক্তি, ২৩টি মন্ত্রণালয় বা সরকারি সংস্থা, ৩টি দাতা সংস্থা এবং ৮৭টি বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের কাছ থেকে। এ ছাড়া কমিশন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো.

সায়েদুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

মুখবন্ধ, নির্বাহী সারসংক্ষেপ ও মুখ্য সুপারিশ বাদ দিলে প্রতিবেদনে পরিচ্ছেদ ১০টি। সেগুলোর শিরোনাম এ রকম: ভূমিকা; পদ্ধতি; স্বাস্থ্য সেবাদান ও ভৌতকাঠামো; নেতৃত্ব, সুশাসন ও কর্মসংস্কৃতি; স্বাস্থ্য জনবল ব্যবস্থাপনা; স্বাস্থ্য জনবলের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ; অত্যাবশ্যকীয় ঔষধপত্র, চিকিৎসা প্রযুক্তি এ সরঞ্জামাদি সরবরাহ; স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থাপনা; স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন পরিকল্পনা। এরপর আছে ফারদার রিডিং/রেফারেন্স নামে তথ্য সূত্রের তালিকা। পরে বিভিন্ন জনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। সবশেষে পরিশিষ্ট, তাতে বিভিন্ন ব্যক্তি, মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, সংগঠনের তালিকা দেওয়া আছে। এই হচ্ছে ৩২২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন।

১২ মে রাজধানীতে (পুরোনো ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে) বাংলাদেশে হেলথ ওয়াচ আয়োজিত এক কর্মশালায় কমিশনের সদস্য আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কমিশনে ১২ জন সদস্য থাকলেও প্রতিবেদন লিখেছেন মূলত ৫ জন। তিনি অবশ্য ৫ জনের নাম উল্লেখ করেননি। কমিশন প্রতিবেদন নিয়েই সাংবাদিকদের জন্য ওই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল।

সম্পাদনাবিহীন দলিল

মুখবন্ধ, নির্বাহী সারসংক্ষেপ, ভূমিকা বা পদ্ধতির কোথাও উল্লেখ নেই স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন কখন গঠিত হয়। শুরুর দিকে থাকলে পাঠক বা ব্যবহারকারীর সুবিধা হয়। এটাই রীতি। তারিখ বলা আছে ১৯১ পৃষ্ঠায়, পরিচ্ছেদ ৯-এ। অর্থায়নবিষয়ক পরিচ্ছেদের সূচনায় বলা হয়েছে, ‘২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর, বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্য খাতকে আরও জনমুখী, সহজলভ্য এবং সর্বজনীন করার লক্ষ্যের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করে।’  পরিশিষ্ট ২-এ এ বিষয়ে একটি সরকারি প্রজ্ঞাপন আছে।
মোটামুটি সব পরিচ্ছেদ ‘ভূমিকা’ দিয়ে শুরু। অর্থায়নের পরিচ্ছেদ ‘সূচনা’ দিয়ে শুরু। কেন শব্দের এই পার্থক্য, তা বোঝা কঠিন।

প্রতিবেদনের দুটি পরিচ্ছেদ সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত। পরিচ্ছেদ ১ ও ১০। প্রথমটি ভূমিকা, শেষেরটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন পরিকল্পনা। দুটিই এক পৃষ্ঠা করে। ভূমিকা মাত্র দুই প্যারাগ্রাফের। স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন পরিকল্পনায় আছে ছোট আট প্যারাগ্রাফ।

ভূমিকার যে দুই প্যারাগ্রাফ, তা হুবহু আছে নির্বাহী সারসংক্ষেপের শুরুতে। অর্থাৎ ‘কাট পেস্ট’ অথবা ‘কপি’। কোন পরিচ্ছেদ আগে লেখা হয়েছে, তা অবশ্য প্রতিবেদন পড়ে বোঝা যায় না। যদি নির্বাহী সারসংক্ষেপ আগে লেখা হয়ে থাকে, তবে প্রথম পরিচ্ছেদ বা ভূমিকা কেউ লেখেননি। অবিকল নির্বাহী সারসংক্ষেপ থেকে নেওয়া।

পরিচ্ছেদগুলোর মধ্যে কোনো ভারসাম্য নেই। ১ ও ১০ পরিচ্ছেদ এক পাতার করে। অথচ পরিচ্ছেদ ৯ মোট ৮২ পাতার। স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি বা প্রবণতা বোঝানোর জন্য প্রতিবেদনে পরিসংখ্যান, পাই চার্ট, বার, গ্রাফ—এসবের সারা বিশ্বেই ব্যবহার আছে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়নের এই পরিচ্ছেদে মোট ৬৯টি ফিগার (গ্রাফ, পাই চার্ট ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয়েছে। এটা আধিক্য, দৃষ্টিকটু। অন্যদিকে কোনো কোনো পরিচ্ছেদে একটিও ফিগার ব্যবহার করা হয়নি।

ধাক্কা লাগার আরও বিষয় আছে। পরিচ্ছেদ ৩–এ বহু পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কোনো তথ্যসূত্রের নির্দেশনা নেই। কমিশন তথ্য কোথা থেকে পেয়েছে, পাঠকের পক্ষে তা জানাবোঝার উপায় নেই। অন্যদিকে কোনো কোনো পরিচ্ছেদে (১), (২), (৩)—এভাবে তথ্যসূত্রের নির্দেশ আছে। কোনো কোনো পরিচ্ছেদে (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ২০২১) বা (রহমান ও আহমেদ, ২০২২)—এভাবে তথ্যসূত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এসবের অর্থ দাঁড়ায়, জাতীয় এই গুরুত্বপূর্ণ দলিলে সম্পাদনায় কোনো নীতি মেনে চলা হয়নি। অথবা কোনো সম্পাদনাই হয়নি। বিভিন্ন পরিচ্ছেদে লেখকদের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না, কে কী লিখেছেন, অন্যরা তা জানতেন না।

গোটা প্রতিবেদনে কয়েক শ বানান ভুল পাওয়া যাবে। যাঁরা প্রতিবেদনের পাতা ওলটাতে থাকবেন, তাঁদের কমিশন সম্পর্কে বাজে ধারণা হতে থাকবে শুধু ভুল বানানের কারণে। এই ছোট লেখায় সেই তালিকা তুলে ধরা ঠিক হবে না। ৬৫ পৃষ্ঠায় একটি বাক্য আছে এ রকম: ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অনুপান এবং সংজ্ঞা কি হবে এবং কোন পর্যায় পর্যন্ত তা নির্ধারিত হবে এসব নিয়ে অনেক সময়েই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।’ এখানে অনুপানের অর্থ না জেনে ব্যবহার করা হয়েছে, এটা অনুমান করা যায়। এর আগের পৃষ্ঠায় সাড়ে আট লাইনের একটি প্যারাগ্রাফে ১২টি ‘এবং’ ব্যবহার করা হয়েছে। এ রকম বহু উদাহরণ দেওয়া সম্ভব।

তাঁরা বাস্তবায়নে থাকতে চান

পরিচ্ছেদ ১ ও ১০ ছাড়া বাকি সব পরিচ্ছেদে বহু সুপারিশ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবাদান ও ভৌত অবকাঠামো অর্থাৎ পরিচ্ছেদ ৩–এ ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের করণীয় সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে। গণনা করলে সংখ্যা তিন শ ছাড়িয়ে যায়। প্রতিবেদনে মোট সুপারিশের সংখ্যা ৪০০–এর বেশি। এসব সুপারিশ থেকে একগুচ্ছ মুখ্য সুপারিশ আলাদা করা হয়েছে। সেখানে আছে ৩২টি সুপারিশ।

এসব সুপারিশ থেকে অগ্রাধিকারের কোনো তালিকা পাওয়া যায় না। তবে মুখ্য সুপারিশগুলোর প্রতিটির শেষে স্বল্প বা মধ্যমেয়েদি লেখা আছে। কয়েকটির শেষে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি লেখা আছে। তবে কোনো সময়সীমার উল্লেখ নেই।

এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কমিশনের সদস্যদের সম্পৃক্ত করার কথা দুই জায়গায় বলা হয়েছে। প্রথম বলা হয়েছে মুখবন্ধের শেষ বাক্যে: ...এই প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো সহায়তার প্রয়োজন হলে কমিশনের সদস্যগণ সানন্দে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে। শেষ পরিচ্ছেদে বলা হয়েছে, ২০২৬ সাল এবং তৎপরবর্তী সংস্কার বাস্তবায়নকালে কমিশনের সদস্যদের পরামর্শ, প্রস্তাবগুলোর ব্যাখ্যা প্রদান, প্রস্তাব সুস্পষ্টকরণ এবং বাস্তবায়নের কাজ সুচারুভাবে সমাধা করার জন্য কমিশনের সদস্যদের বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে হবে। এটি যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব—কথাটি কমিশনের কারও চিন্তায় আসেনি।

প্রতিবেদনে সব আছে

স্বাস্থ্য খাতের সর্বক্ষেত্রের সমস্যা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। দুই দশক ধরে এসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য করণীয় বা সুপারিশ কমিশন প্রতিবেদনে আছে। এসব সুপারিশ এর আগেও করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফ, অন্যান্য দাতা সংস্থা, আইসিডিডিআরবি, এ দেশের বড় বড় এনজিও, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ, বিআইডিএস, পিপিআরসিসহ অনেক প্রতিষ্ঠান এসব সমস্যা নিয়ে অনেক গবেষণা করেছে, পাশাপাশি সুপারিশও করেছে অনেক ক্ষেত্রে।

পার্থক্য এই যে এক মলাটের মধ্যে এখন সব সমস্যা ও তাদের সমাধান পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রতিবেদনে এমন কোনো সমস্যার কথা বলা হয়নি, যা আগে চিহ্নিত হয়নি। এমন কোনো সমাধানের কথা বলা হয়নি, যা একেবারে নতুন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, শুধু কি অতীতের কাজ সংকলন বা কম্পাইল করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনকে দেওয়া হয়েছিল?

সুযোগ হাতছাড়া হলো

অন্যান্য কমিশনের মতো স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন হয়েছে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে। তা শুরু হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দিয়ে। স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক ও গভীর বৈষম্য বিরাজমান। সেই বৈষম্য আছে শহর-গ্রামে, ধনী-দরিদ্রে, নারী-পুরুষে। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের বৈষম্যের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আগেও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠনের কথা অনেকের মুখে শোনা গেছে। এ দেশে স্বাস্থ্য আন্দোলন হয়েছে। এমন কোনো কথা সংস্কার প্রতিবেদনের কোথাও নেই। একটি নীতি স্বাস্থ্যের একটি খাতকে কতটি বদলে দিতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি। সেই নীতির কথাও প্রতিবেদনে গুরুত্ব পায়নি। অর্থাৎ অতীতকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে কমিশন।

কমিশন সংবিধান পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন কমিউনিটি ক্লিনিক বিলুপ্তি করার সুপারিশ করেছে। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের সঙ্গেও বসেনি। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে নারীর স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পৃথক একটি অধ্যায় রেখেছে। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনে নারীর স্বাস্থ্য সেই গুরুত্ব পায়নি।  

স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্ধারক (ডিটারমিনেন্টস) নিয়ে কোনো কথাই কমিশন প্রতিবেদনে নেই। মাটি, পানি, কৃষি, খাদ্য ঠিক না থাকলে স্বাস্থ্য ঠিক থাকে না। মাটি নষ্ট, পানি দূষিত, কৃষিপণ্য বিষাক্ত, খাদ্য অনিরাপদ হলে স্বাস্থ্যহানি অনিবার্য হয়ে পড়ে। মাটি, পানি, কৃষি, খাদ্যের সঙ্গে স্বাস্থ্য কাঠামোর সম্পর্কের কোনো আলোচনাই প্রতিবেদনে নেই। এই আলোচনা সামনের কাতারে আনার এমন সুযোগ এর আগে আসেনি।

এই ভূখণ্ডে প্রথম স্বাস্থ্য কমিশন হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে, ১৯৪৩ সালে। সেটি ভোর কমিশন নামে পরিচিত। ভোর কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয় ১৯৪৬ সালে, ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার ঠিক এক বছর আগে। ৭৬০ পৃষ্ঠার ওই কমিশন প্রতিবেদন পাকিস্তান বা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত উন্নতিতে কোনো কাজে আসেনি। তাই বলা যায়, দেশের গোটা স্বাস্থ্য খাতের খোলনলচে পাল্টানোর সুযোগ অতীতে আর কখনো আসেনি। সুযোগ পেয়েছিল এই কমিশন। কমিশন প্রতিবেদনে তাদের সাহসের কমতি দেখা গেছে। কমিশন তামাক নিষিদ্ধ করার কথা বলেনি, বলেছে তামাক থেকে বাড়তি কর নিয়ে স্বাস্থ্যে ব্যবহারের কথা। কমিশন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করারও সাহস দেখাতে পারেনি। আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রকদের হাত থেকে মুক্ত করে দেশের স্বাস্থ্যকে নিজের মতো করে গড়ে তোলার কথা বা দিকনির্দেশনা প্রতিবেদনের কোথাও নেই। এসব করার সুযোগ নষ্ট হলো।

এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, ভুল বানানের, ভুল বাক্যের প্রতিবেদনটি দেশের মানুষ, সরকার, মন্ত্রণালয়, দাতা সংস্থা, গবেষকেরা ব্যবহার করতে থাকবেন, নাকি এসব ঠিক করা হবে। তথ্যসূত্রের বিষয়গুলোও কি ঠিক করা হবে? সংস্কার না করলে এই প্রতিবেদন কোনো শিক্ষিত নাগরিক ব্যবহার করতে পারবেন না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এসব স প র শ ব যবহ র কর স রস ক ষ প পর চ ছ দ ব যবস থ হয় ছ ল র জন য এই প র উল ল খ প রস ত সব পর সমস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভাতের মাড় ত্বক ও চুলের জন্য এত উপকারী, জানতেন?

ছবি: টুয়া সৌদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ