সমস্যা কি পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র থাকা নাকি হুকুমের
Published: 16th, May 2025 GMT
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কোন ধরনের অস্ত্র বা সরঞ্জাম ব্যবহার করবে, সেই বিষয়গুলো রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা নির্ধারিত। অর্থাৎ পুলিশ চাইলেই তার ইচ্ছেমতো যেকোনো অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে না। তবে পুলিশের এসব অস্ত্র ব্যবহারে নির্দেশনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক নীতিমালা আছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো জাতিসংঘের ‘আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা বলপ্রয়োগ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের মৌলিক নীতিমালা (১৯৯০)’ এবং ‘কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশিকা (২০২০)’।
এসব নীতিমালায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকে শেষ বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে এবং প্রতিটি বলপ্রয়োগের ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ ও তদন্তের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অন্যতম শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এসব আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনে চলতে হয়। বাংলাদেশে পুলিশের অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি, ফৌজদারি আইন, পুলিশ অ্যাক্ট ও পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল দ্বারা সুস্পষ্ট নির্ধারিত।
এ কারণে বলপ্রয়োগ ও অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুলিশ স্বেচ্ছাধীন নয়, বরং দেশীয় আইন ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা দ্বারা নির্ধারিত ও অনুমোদিত। তবে সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশের কাছে ‘মারণাস্ত্র’ (পড়ুন প্রাণঘাতী) থাকা না–থাকা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এর পক্ষে ও বিপক্ষে দুই ধরনের ব্যাখ্যা রয়েছে।
সরকারি নির্দেশ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ মানতে বাধ্য। কাজেই সমস্যাটি এখানে অস্ত্রের? নাকি হুকুমের? পুলিশের অস্ত্র ব্যবহারের ধরনের সঙ্গে দেশের মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অপরাধপ্রবণতা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িতস্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন হলো, পুলিশের কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্র থাকা না–থাকার প্রশ্ন কেন আসছে। কারণ, গত জুলাই আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের শরীরে ৭.
তবে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সরকারি বাহিনীগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই অস্ত্র ব্যবহার করে। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলো এর থেকে আরও বেশি কার্যকর অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। উন্নত দেশগুলো নিয়মিত পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে একই সঙ্গে লিথ্যাল ও নন-লিথ্যাল শর্ট আর্মস বা হ্যান্ডগান ব্যবহার করে।
অন্যদিকে বিশেষ অভিযান বা বিশেষ পরিস্থিতিতে লং ব্যারেল অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। আপনি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল কিংবা চীনের মতো দেশগুলোর প্রত্যেক দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের কাছে লেস-লিথ্যাল উইপন যেমন লাঠি, পেপার স্প্রে, ইলেকট্রিক শক দেওয়ার টিজার, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, ফ্ল্যাশব্যাগ গ্রেনেড ও হ্যান্ডকাফ থাকে। একই সঙ্গে লিথ্যাল উইপন সাইড আর্মস হিসেবে এক বা একাধিক পিস্তল রাখে, যাতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া প্রত্যেকের কাছে ওয়াকিটকি, বডিওর্ন ক্যামেরা ও অন্যান্য কমিউনিকেশন ডিভাইস থাকে। তাঁদের ইউনিফর্মের ডিজাইনটিকে এমনভাবে করা হয়, যাতে করে এসব অস্ত্র ও কমিউনিকেশন ডিভাইস ইউনিফর্মের অংশ হিসেবেই থাকে। এ কারণে বিদেশের দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের ডিউটির সময় দুই হাত ফ্রি থাকে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তিনি সহজেই সাড়া দিতে পারেন। যুক্তরাজ্য ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কয়েকটি দেশের পুলিশ নিয়মিত টহলে লিথ্যাল উইপন রাখে না, তবে তাদের সঙ্গে সশস্ত্র ইউনিট থাকে।
পক্ষান্তরে বাংলাদেশের পুলিশ যে ধরনের ইউনিফর্ম ব্যবহার করে, তাতে বিদেশি পুলিশের মতো এসব অস্ত্র ও সরঞ্জাম ব্যবহার করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদিও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স কয়েক বছর আগে পুলিশের নিয়মিত ডিউটির সময়ের জন্য ‘ট্যাকটিক্যাল বেল্ট’ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত সেটির বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতার পুনর্মূল্যায়ন জরুরি। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে একই সঙ্গে নন-লিথ্যাল, লিথ্যাল ও ক্রাউড কন্ট্রোল সামগ্রী দিতে না পারার কারণে তা পুলিশ সদস্যের নিজের ও জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার প্রবল ঝুঁকি থাকে।
বর্তমানে পুলিশ লং ব্যারেল অস্ত্র নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিউটি করে, এটি খুবই কঠিন কাজ। শুধু অস্ত্রই নয়, বরং পুলিশের যাবতীয় ইউনিফর্ম, অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রীর বিন্যাস, ডিউটি স্টাইল একটির সঙ্গে আরেকটি ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। পুরো সিস্টেমকে না বদলে কেবল আংশিক বদলে দেওয়ার ফলাফল কেমন হবে, তা সময়েই বলে দেবে।
জুলাই আন্দোলনে রাইফেলের ব্যবহারের ঘটনা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। কিন্তু এখানে আমরা মৌলিক একটি বিষয় ভুলে যাচ্ছি, সেটি হলো, কেন এই আন্দোলন দমাতে লং ব্যারেল অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে? এটি তো এমন নয় যে হঠাৎ করেই জুলাই আন্দোলনের আগে পুলিশকে এসব অস্ত্র প্রদান করা হয়েছে। পুলিশের লং ব্যারেল অস্ত্র ব্যবহারের ইতিহাস শত বছরের পুরোনো। পূর্ব থেকেই পুলিশের এসব অস্ত্র ব্যবহারের প্রতিটি পদক্ষেপ আইন দ্বারা বিধিবদ্ধ। জুলাই আন্দোলনে লং ব্যারেল অস্ত্র ব্যবহারের সরকারি নির্দেশনা ছিল, তা বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।
বিদ্যমান পুলিশ আইন অনুসারে, সরকারি নির্দেশ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ মানতে বাধ্য। কাজেই সমস্যাটি এখানে অস্ত্রের? নাকি হুকুমের? পুলিশের অস্ত্র ব্যবহারের ধরনের সঙ্গে দেশের মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অপরাধপ্রবণতা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশকে হতে হয় সমসাময়িক অপরাধীদের তুলনায় সব দিক থেকে স্মার্ট ও অগ্রগামী।
এ কারণে পুলিশের অস্ত্রের থাকা না–থাকার মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে বাংলাদেশের অপরাধীদের হাতে থাকা অস্ত্রের ধরন, জনগণের আস্থা, নিরাপত্তাবোধ, সামগ্রিক অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলার মধ্যকার সম্পর্ককে বহুমাত্রিকভাবে বিশ্লেষণ করা জরুরি। কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা নয়, বরং পুরো বিষয়টিকে সামষ্টিকভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। পুলিশ যদি লিথ্যাল উইপন ব্যবহার বাদ দেয়, তাহলে অপরাধীরাও এমন অস্ত্র ব্যবহার বাদ দেবে, তার গ্যারান্টি কী?
মো. ইমরান আহম্মেদ পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইকের পিএইচডি গবেষক
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ত র ব যবহ র র প ল শ সদস য ইউন ফর ম ধরন র সরক র র ইউন অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সমস্যা কি পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র থাকা নাকি হুকুমের
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কোন ধরনের অস্ত্র বা সরঞ্জাম ব্যবহার করবে, সেই বিষয়গুলো রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা নির্ধারিত। অর্থাৎ পুলিশ চাইলেই তার ইচ্ছেমতো যেকোনো অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে না। তবে পুলিশের এসব অস্ত্র ব্যবহারে নির্দেশনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক নীতিমালা আছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো জাতিসংঘের ‘আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা বলপ্রয়োগ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের মৌলিক নীতিমালা (১৯৯০)’ এবং ‘কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশিকা (২০২০)’।
এসব নীতিমালায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকে শেষ বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে এবং প্রতিটি বলপ্রয়োগের ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ ও তদন্তের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অন্যতম শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এসব আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনে চলতে হয়। বাংলাদেশে পুলিশের অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি, ফৌজদারি আইন, পুলিশ অ্যাক্ট ও পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল দ্বারা সুস্পষ্ট নির্ধারিত।
এ কারণে বলপ্রয়োগ ও অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুলিশ স্বেচ্ছাধীন নয়, বরং দেশীয় আইন ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা দ্বারা নির্ধারিত ও অনুমোদিত। তবে সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশের কাছে ‘মারণাস্ত্র’ (পড়ুন প্রাণঘাতী) থাকা না–থাকা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এর পক্ষে ও বিপক্ষে দুই ধরনের ব্যাখ্যা রয়েছে।
সরকারি নির্দেশ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ মানতে বাধ্য। কাজেই সমস্যাটি এখানে অস্ত্রের? নাকি হুকুমের? পুলিশের অস্ত্র ব্যবহারের ধরনের সঙ্গে দেশের মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অপরাধপ্রবণতা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িতস্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন হলো, পুলিশের কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্র থাকা না–থাকার প্রশ্ন কেন আসছে। কারণ, গত জুলাই আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের শরীরে ৭.৬২ এমএম ক্যালিবারের গুলি পাওয়া গেছে বলে বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বাংলাদেশে এসব গুলি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চীনের তৈরি টাইপ ৫৬ অ্যাসল্ট রাইফেলে ব্যবহার করা হয়। শুধু তা–ই নয়, এটি বিশ্বের অন্যতম বেশি ব্যবহৃত এবং ছড়িয়ে পড়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর একটি।
তবে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সরকারি বাহিনীগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই অস্ত্র ব্যবহার করে। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলো এর থেকে আরও বেশি কার্যকর অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। উন্নত দেশগুলো নিয়মিত পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে একই সঙ্গে লিথ্যাল ও নন-লিথ্যাল শর্ট আর্মস বা হ্যান্ডগান ব্যবহার করে।
অন্যদিকে বিশেষ অভিযান বা বিশেষ পরিস্থিতিতে লং ব্যারেল অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। আপনি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল কিংবা চীনের মতো দেশগুলোর প্রত্যেক দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের কাছে লেস-লিথ্যাল উইপন যেমন লাঠি, পেপার স্প্রে, ইলেকট্রিক শক দেওয়ার টিজার, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, ফ্ল্যাশব্যাগ গ্রেনেড ও হ্যান্ডকাফ থাকে। একই সঙ্গে লিথ্যাল উইপন সাইড আর্মস হিসেবে এক বা একাধিক পিস্তল রাখে, যাতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া প্রত্যেকের কাছে ওয়াকিটকি, বডিওর্ন ক্যামেরা ও অন্যান্য কমিউনিকেশন ডিভাইস থাকে। তাঁদের ইউনিফর্মের ডিজাইনটিকে এমনভাবে করা হয়, যাতে করে এসব অস্ত্র ও কমিউনিকেশন ডিভাইস ইউনিফর্মের অংশ হিসেবেই থাকে। এ কারণে বিদেশের দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের ডিউটির সময় দুই হাত ফ্রি থাকে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তিনি সহজেই সাড়া দিতে পারেন। যুক্তরাজ্য ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কয়েকটি দেশের পুলিশ নিয়মিত টহলে লিথ্যাল উইপন রাখে না, তবে তাদের সঙ্গে সশস্ত্র ইউনিট থাকে।
পক্ষান্তরে বাংলাদেশের পুলিশ যে ধরনের ইউনিফর্ম ব্যবহার করে, তাতে বিদেশি পুলিশের মতো এসব অস্ত্র ও সরঞ্জাম ব্যবহার করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদিও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স কয়েক বছর আগে পুলিশের নিয়মিত ডিউটির সময়ের জন্য ‘ট্যাকটিক্যাল বেল্ট’ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত সেটির বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতার পুনর্মূল্যায়ন জরুরি। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে একই সঙ্গে নন-লিথ্যাল, লিথ্যাল ও ক্রাউড কন্ট্রোল সামগ্রী দিতে না পারার কারণে তা পুলিশ সদস্যের নিজের ও জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার প্রবল ঝুঁকি থাকে।
বর্তমানে পুলিশ লং ব্যারেল অস্ত্র নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিউটি করে, এটি খুবই কঠিন কাজ। শুধু অস্ত্রই নয়, বরং পুলিশের যাবতীয় ইউনিফর্ম, অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রীর বিন্যাস, ডিউটি স্টাইল একটির সঙ্গে আরেকটি ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। পুরো সিস্টেমকে না বদলে কেবল আংশিক বদলে দেওয়ার ফলাফল কেমন হবে, তা সময়েই বলে দেবে।
জুলাই আন্দোলনে রাইফেলের ব্যবহারের ঘটনা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। কিন্তু এখানে আমরা মৌলিক একটি বিষয় ভুলে যাচ্ছি, সেটি হলো, কেন এই আন্দোলন দমাতে লং ব্যারেল অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে? এটি তো এমন নয় যে হঠাৎ করেই জুলাই আন্দোলনের আগে পুলিশকে এসব অস্ত্র প্রদান করা হয়েছে। পুলিশের লং ব্যারেল অস্ত্র ব্যবহারের ইতিহাস শত বছরের পুরোনো। পূর্ব থেকেই পুলিশের এসব অস্ত্র ব্যবহারের প্রতিটি পদক্ষেপ আইন দ্বারা বিধিবদ্ধ। জুলাই আন্দোলনে লং ব্যারেল অস্ত্র ব্যবহারের সরকারি নির্দেশনা ছিল, তা বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।
বিদ্যমান পুলিশ আইন অনুসারে, সরকারি নির্দেশ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ মানতে বাধ্য। কাজেই সমস্যাটি এখানে অস্ত্রের? নাকি হুকুমের? পুলিশের অস্ত্র ব্যবহারের ধরনের সঙ্গে দেশের মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অপরাধপ্রবণতা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশকে হতে হয় সমসাময়িক অপরাধীদের তুলনায় সব দিক থেকে স্মার্ট ও অগ্রগামী।
এ কারণে পুলিশের অস্ত্রের থাকা না–থাকার মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে বাংলাদেশের অপরাধীদের হাতে থাকা অস্ত্রের ধরন, জনগণের আস্থা, নিরাপত্তাবোধ, সামগ্রিক অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলার মধ্যকার সম্পর্ককে বহুমাত্রিকভাবে বিশ্লেষণ করা জরুরি। কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা নয়, বরং পুরো বিষয়টিকে সামষ্টিকভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। পুলিশ যদি লিথ্যাল উইপন ব্যবহার বাদ দেয়, তাহলে অপরাধীরাও এমন অস্ত্র ব্যবহার বাদ দেবে, তার গ্যারান্টি কী?
মো. ইমরান আহম্মেদ পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইকের পিএইচডি গবেষক
[email protected]