সব পক্ষের সহযোগিতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে, আশা পরিকল্পনা উপদেষ্টার
Published: 16th, May 2025 GMT
সব পক্ষের সহযোগিতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আজ শুক্রবার প্রথম আলোর জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এর আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গত মার্চ মাসে নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা হন সি আর আবরার। অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এখন শুধু পরিকল্পনা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবির কিছু বিষয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ, একনেক সভায় অনুমোদনের বিষয় আছে।
তিন দফা দাবিতে ঢাকার কাকরাইল মোড়ে টানা তিন দিন অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ পরিস্থিতিতে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার পর অনেক সময় চলে গেলেও শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টিকে চরম অবহেলা করা হয়েছে। এ কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আছে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে বিষয়গুলো নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছিল বলে জানান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘সে সময় শিক্ষার্থীদের জানা ছিল না যে ইতিপূর্বেই শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্ব–উদ্যোগে একনেক সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস কেরানীগঞ্জে নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। একনেকের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, অধিকৃত ভূমিতে একটি সুপরিকল্পিত, দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক মানসম্পন্ন ক্যাম্পাসের জন্য ভবনসমূহ ও অন্যান্য অবকাঠামো–সংবলিত একটি মাস্টারপ্ল্যান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তৈরি করবে। শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাকালে যেসব চলমান নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে ঠিকাদার চলে গিয়েছিল, সেগুলোর কাজ শেষ করতেও বলা হয়। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে কাজটি দেওয়ার বিষয়ে কোনো অসুবিধা নেই বলে জানানো হয়। এসব কাজে বিলম্ব হচ্ছে কেন, তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি খতিয়ে দেখবে বলে আশা করি।’
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প, অর্থাৎ মাস্টারপ্ল্যানের অধীনে নির্মাণ প্রকল্পের অংশবিশেষ যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা হলে একনেকের দ্রুত অনুমোদন পাওয়া সম্ভব হবে। শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবিদাওয়া নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। আশা করি, সব পক্ষের সহযোগিতায় সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। কারণ, ইতিমধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রমের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কার শুধু সাংবিধানিক জায়গায় আটকে আছে: হোসেন জিল্লুর রহমান
ত্বত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সংস্কার টপ প্রায়োরিটি হওয়া দরকার। সংস্কার আলোচনা শুধু সাংবিধানিক জায়গায় আটকে আছে। জনগণের প্রাত্যহিক জীবন নির্বিঘ্ন করার বিষয়গুলো বিশেষত পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট এক পাশে ফেলে দেওয়া আছে, জনপ্রশাসন রিপোর্টটাও একই।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে 'গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সিভিল মিলিটারি সম্পর্ক' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘ইউনিটি ফর বাংলাদেশ' সংগঠনের আয়োজনে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবির, লেখক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দর্শন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ নিজার আলম।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সংস্কার টপ প্রায়োরিটি হওয়া দরকার। এটার পলিটিক্যাল ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই। কক্সবাজার একজন কাউন্সিলরকে মেরে ফেলছে, অন ক্যামেরায় পাওয়া যাচ্ছে। ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির রিপোর্ট হবে ইন্টেলিজেন্ট কিন্তু অনেক রিপোর্ট শুধুমাত্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ইন্টেলিজেন্ট নয়। কাজে এটা সংস্কার হতে হবে। আমার মনে হয়, সংস্কার আর্মির নেতৃত্বেও এটি হতে পারে। এটা অবশ্যই হতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। এটা রাষ্ট্রের জন্য জরুরি। সক্ষম রাষ্ট্রের জন্য চারটি বিষয় জরুরি। সার্বভৌমত্ব বলতে আমরা বুঝি জিওগ্রাফিক, এটার অন্যতম হলো নীতি সার্বভৌমত্ব। স্বৈরাচারের সময় দেখেছি নীতি নেওয়া হচ্ছে, তবে সার্বভৌমভাবে নেওয়া হচ্ছে না। পলিটিক্যাল সার্বভৌমত্ব আছে তবে ভেতরে অন্তঃসারশূন্য।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে হবে। সিভিল মিলিটারি সম্পর্ক তার একটি অংশ। রিফর্ম নিয়ে একধরনের সাংবিধানিক বিষয়গুলোর আলোচনাই প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু জনগণের প্রাত্যহিক জীবনের বিশেষ করে পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট পাশে ফেলে দেওয়া আছে। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনায় রিপোর্টটাই নাই। প্রশাসন সংস্কারের রিপোর্টটাই একইভাবে পড়ে আছে।
সাংবিধানিক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতার ভারসাম্য জরুরি মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নতি, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের প্রয়োজন যদি মেটানো না যায়, আইনশৃংখলা/নিরাপত্তার বিষয়গুলো যদি মেটানো না যায়, তাহলে আজাদী মিথ্যা হয়ে উঠতে পারে এমন মনে হবে। এদিকে নজর দেওয়া দরকার।
নূরুল কবির বলেন, ‘সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করা ঠিক না' এটা হচ্ছে সবচেয়ে বেঠিক কথা। সেনাবাহিনী যদি রাজনীতি না বুঝে তাহলে তারা দেশের ক্রান্তিলগ্নে সিভিলিয়ানদের সাথে একযোগে কাজ করতে পারবে না। আপনারা রাজনীতিকরণ ও দলীয়করণকে এক করে মিলাবেন না।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য একটি ভালো সেনাবাহিনী দরকার কিন্তু সেনাশাসন দরকার নেই। সিভিল এবং মিলিটারি সম্পর্ক একটি বাইনারি অপজিশন। সেনাপ্রধান যখন এরশাদকে বলে মিলিটারি আর আপনার সঙ্গে নেই, তখনই এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। আবার গত ৩ আগস্ট যখন বর্তমান সেনাপ্রধান জুনিয়র অফিসারদের দাবির মুখে হাসিনাকে সেনাবাহিনীর অপারগতার কথা জানিয়ে দেন, তখনই হাসিনার পতন তরান্বিত হয়। ২০১৪ সাল নির্বাচন পরবর্তী সময়েই যদি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী অসন্তোষ প্রকাশ করতো, তাহলে জুলাইয়ে দেড় হাজার মানুষের প্রাণ দেওয়া লাগতো না।
সৈয়দ নিজার আলম বলেন, মিলিটারি সম্পর্কে একটি বাইনারি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ এ সম্পর্ক দ্বান্দ্বিক হওয়ার কথা না। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক থেকে শুরু করে মিলিটারি সবাই আমরা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রজন। তাই সবাইকে এক কাতারে থেকে দেশের সেবা প্রদান করতে হবে।