যে দুটি পরীক্ষায় উপসর্গহীন কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে
Published: 1st, December 2025 GMT
কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে যেকোনো বয়সেই। এমনকি শিশুরাও ঝুঁকিমুক্ত নয়। তবে তার মানে এমনটাও নয় যে সব বয়সী মানুষকেই কিডনির পরীক্ষা করাতে হবে নিয়মিত। বরং যাঁদের কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে কিংবা কোনো উপসর্গ আছে, কেবল তাঁদেরই পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন।
যেসব ক্ষেত্রে কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়েডায়াবেটিস
উচ্চ রক্তচাপ
অতিরিক্ত ওজন
বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ
দীর্ঘদিন ধরে প্রস্রাব আটকে যাওয়ার সমস্যা (যেমন প্রোস্টেট বড় হয়ে গেলে এমন সমস্যা হয়)
হৃদ্রোগ
লিভার বৈকল্য
কখনো কিডনিতে পাথর হয়ে থাকলে
কখনো কিডনির নালি ব্লক (হাইড্রোনেফরোসিস) হয়ে থাকলে
পরিবারে এমন ধরনের কিডনি রোগের ইতিহাস থাকলে, যার জন্য জিনগত কারণ দায়ী
আরও পড়ুনকিডনি ভালো রাখতে রোজ কয় লিটার পানি খাবেন১১ আগস্ট ২০২৫কখন পরীক্ষা করাবেনযাঁদের বয়স ৪০ বছরের বেশি কিংবা যাঁদের কোনো কারণে কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি, তাঁদের প্রতিবছর একবার করে কিডনি পরীক্ষা করাতে হয়। এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকায় খানিকটা ব্যতিক্রম কেবল টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের রোগী।
তাঁদের ক্ষেত্রে রোগটা ধরা পড়ার পাঁচ বছর পর থেকে এই বার্ষিক পরীক্ষা শুরু করতে হয়। টাইপ টু ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে তখনই শুরু করতে হয় এ পরীক্ষা।
কিডনির কার্যক্ষমতা বোঝার জন্য অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করানো যায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ডন র পর ক ষ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
রোগ নির্ণয়ের নামে অতিরিক্ত পরীক্ষা, প্রতিকার কোথায়!
স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। দেশে আধুনিক চিকিৎসাসুবিধা ও ডায়াগনস্টিক প্রযুক্তির উন্নতি যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যে হাসপাতাল নিয়ে ভয়ও তৈরি হয়েছে। কারণ, প্রায়ই শোনা যায় পরীক্ষা না করালে চিকিৎসক চিকিৎসা শুরু করেন না। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৬৭ শতাংশ মানুষকে নিজেদের পকেট থেকে দিতে হয়, যার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ খরচ চলে যায় ডায়াগনস্টিক পরীক্ষায়।
জ্বর, সর্দি বা কাশির মতো সাধারণ অসুখ অনেক সময় বিশ্রামে বা সামান্য ওষুধে সেরে যায়। কিন্তু এখন দেখা যায়, জ্বর নিয়ে হাসপাতালে গেলে ধরিয়ে দেওয়া হয় পরীক্ষার দীর্ঘ তালিকা; যেমন সিবিসি, সিআরপি, ডেঙ্গু বা টাইফয়েড পরীক্ষা। সাধারণ জ্বরের রোগীদের প্রায় ৫৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই পাঁচটির বেশি পরীক্ষা লেখা হয়, যার খরচ দাঁড়ায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। একইভাবে বুক ব্যথার মতো সাধারণ উপসর্গেও ৬২ শতাংশ রোগীকে ইসিজি, সিবিসি, আলট্রাসনোগ্রাফি বা এন্ডোস্কোপির মতো পরীক্ষা করতে বলা হয়, যদিও অনেক সময় একটি সাধারণ অ্যান্টাসিডই যথেষ্ট হতে পারত।
স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এ ধরনের খরচ বড় চাপ তৈরি করে। একজন দিনমজুরের মাসিক আয় যদি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা হয়, তাহলে একবার হাসপাতালে গিয়ে তিন বা চার হাজার টাকা খরচ করা তাঁর পক্ষে কঠিন। এর ফলে অনেকেই হাসপাতাল এড়িয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান। এতে সাময়িক উপশম মিললেও গুরুতর রোগ শনাক্ত না হওয়ায় ভবিষ্যতে আরও বিপদের মুখে পড়েন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৪৩ শতাংশ মানুষ পরীক্ষার খরচের ভয়েই চিকিৎসা শুরু করেন না এবং ৩৩ শতাংশ প্রথমে ফার্মেসিতে যান, পরে জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসক দেখান।
কেন এত অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো হয়—এ প্রশ্নে বেশ কিছু কারণ সামনে আসে। কিছু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠালে কমিশন পান এবং কিছু ক্ষেত্রে এই কমিশনের হার ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে অনেক বেসরকারি কেন্দ্র দামি যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে থাকে।
অবশ্যই সব চিকিৎসক এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন। অনেকেই দায়িত্ব নিয়ে রোগী দেখেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরীক্ষা দেন। একই উপসর্গে একাধিক সম্ভাব্য রোগ থাকতে পারে, তাই সতর্কতার জন্য কখনো কখনো অতিরিক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
সমাধানের জন্য প্রয়োজন কঠোর তদারকি, স্বচ্ছ নীতিমালা ও সরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি। কোন উপসর্গে কোন পরীক্ষা লাগবে, তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা উচিত। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফি ও অতিরিক্ত চার্জ প্রকাশ্যে আনতে হবে এবং সেগুলো নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। পাশাপাশি রোগীকেও সচেতন হতে হবে এবং প্রতিটি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। নৈতিকতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার ভিত্তিতেই স্বাস্থ্যসেবা মানবিক ও কার্যকর হতে পারে।
ইব্রাহীম খলিল শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ই–মেইল: [email protected]