ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণে সরকার নানাভাবে কালক্ষেপণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন ট্রাইবুনালের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরও শপথ অনুষ্ঠানে গড়িমসি করা হচ্ছে। এটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করা হচ্ছে। আমি শপথ গ্রহণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছি।’

শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ আইনি পদক্ষেপ নিয়েই গেজেট প্রকাশ করেছে। কিন্তু গেজেট প্রকাশের ২০ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত শপথ গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যেটা সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় বিভাগের এখতিয়ারে পড়ে।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো চিঠির উল্লেখ করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে এবং তার নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হলে, ৩০ দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া বাধ্যতামূলক। শপথ গ্রহণের দাবিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।’

তিনি বলেন, ‘আইনের স্পষ্ট বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালন করছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন অবিলম্বে আমাকে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করেন।’

তাকে মেয়র পদে শপথগ্রহণের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনের বিষয়ে ইশরাক বলেন, ‘তিনি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে আন্দোলন করতে বলেননি। দলীয়ভাবে কোনো কর্মসূচিও দেওয়া হয়নি। জনগণ স্বত:স্ফূর্তভাবে আন্দোলন করছে, প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে- আমরা নাকি অবৈধ নির্বাচনকে (ডিএসসিসি) বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমি ঘৃণাভরে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা যথাসময়ে এই বিষয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলাম। ১৮০ দিনের মধ্যে এই আপিল করলেও অবৈধভাবে নির্বাচিত মেয়র তাপস সাহেব প্রভাব খাটিয়ে এ বিষয়ে আদালতকে কিছু করতে দেননি। আর তখন আদালতও ছিল ফ্যাসিবাদী সরকারের দখলে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজনে নানাধরনের কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের মনোভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠভাবে হবে কী-না, সে বিষয়ে জনমনে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিবৃতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এনসিপি বিবৃতি দিয়ে আদালতের রায় ও বিচারকদের নিয়ে কথা বলেছে। এ ধরনের কাজ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ আমলেও করা হতো। এনসিপি গণঅভ্যুত্থানের ফসলের দল হলে আমরা কী শেখ হাসিনার মধু খেয়ে লালিতপালিত ছিলাম নাকি ১৬ বছর আন্দোলনের মাঠে ছিলাম- সেটা জনগণই বিচার করবে।’ তাকে শপথগ্রহণে বাধা দিয়ে নগরভবনকেন্দ্রিক লুটপাটের ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ইশরাক হোসেন।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলেন প্রকৌশলী ইশরাক হোসে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। এর বিরুদ্ধে ইশরাক হোসেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনী বিধিমালার আওতায় নির্বাচন ট্রাইবুনালে মামলা করেন। তিনি ওই গেজেট বাতিল করে নিজেকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করার আবেদন জানান।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ রায় ঘোষণা করে। রায়ে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের ২০২০ সালের গেজেটটি বাতিল এবং ইশরাক হোসেনকে বৈধভাবে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এই রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ২০২৪ সালের ২৭ এপ্রিল নতুন গেজেট প্রকাশ করে, যেখানে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড এসস স ইশর ক হ স ন স থ ন য় সরক র শপথ গ রহণ র গ জ ট প রক শ ইশর ক হ স ন

এছাড়াও পড়ুন:

কংগ্রেসে ট্রাম্পের আলোচিত ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ পাস

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচিত ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ দেশটির কংগ্রেসে চূড়ান্ত বাধা পেরিয়েছে। কংগ্রেসের রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার অল্প ব্যবধানে কর হ্রাস ও সরকারি ব্যয়ের বিশাল এই প্যাকেজ পাস হয়।

প্রতিনিধি পরিষদে ২১৮-২১৪ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাস হয়েছে। পরে এতে সই করেন স্পিকার মাইক জনসন। আলোচিত এই বিলটি কংগ্রেসে পাস হওয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিলটি নিয়ে ট্রাম্পের নিজ দলেও প্রবল বিরোধিতা ছিল। শেষ পর্যন্ত বিলটি পাস হওয়ায় রিপাবলিকান পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এখন তিনি সই করলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে।

এর আগে মঙ্গলবার কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে বিলটি বিলটি কোনোরকম উতরে যায়। সিনেটে বিলটি ৫১-৫০ ভোটে পাস হয়। বিলের পক্ষে-বিপক্ষে সমান ভোট পড়ায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ‘টাই’ ভেঙে বিলের পক্ষে ভোট দেন। বিলটির বিপক্ষে ভোট দেওয়া ডেমোক্র্যাটদের ৪৭ সদস্যের সঙ্গে ৩ জন রিপাবলিকানও যোগ দেন।

এই বিলে কর কমানো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ কমানো, সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে খরচ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

বিলটি ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে দেওয়া কর ছাড়েরই সম্প্রসারিত রূপ। পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে খরচও বাড়ানো হবে।

এই বিলে কম আয়ের মার্কিন নাগরিকদের জন্য মেডিকেইড নামের স্বাস্থ্য কর্মসূচি ও খাদ্যসহায়তা কর্মসূচির খরচ থেকে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি ডলার কাটাছাঁটের কথা বলা হয়েছে। এতে লাখ লাখ আমেরিকান স্বাস্থ্য বিমার বাইরে চলে যাবেন।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে পাস হলো ট্রাম্পের আলোচিত ব্যয় বিল ০২ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ