নগদের লেনদেন চালু আছে, ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা
Published: 19th, May 2025 GMT
মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নগদের হিসাব ব্যাংকগুলোতে যাদের স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়, তা পরিবর্তন করতে পারবে না ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো নগদের হিসাব থেকে অর্থ লেনদেন করতে পারবে না। তবে নগদের নিয়মিত লেনদেন চলবে। নগদ পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর বাংলাদেশ ব্যাংক এই নির্দেশনা জারি করেছে।
গ্রাহকের জমা করা অর্থ যাতে কোনোভাবে তছরুপের শিকার নয়, সে জন্য এই নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে আজ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, নগদ অতিরিক্ত ৬৫০ কোটি টাকা ই-মানি তৈরি করে জালিয়াতি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া কারও টাকা তৈরির ক্ষমতা নেই। তারা শুধু জমা করা টাকার সমপরিমাণ ই-টাকা তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি তারা সরকারি ভাতার ২ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষাতেও এটা উঠে এসেছে। সে জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গভর্নর বলেন, ‘আদালতের কারণে আমাদের প্রশাসক দল কাজ করতে পারছে না। আমরা আপিল করেছি, আশা করি ন্যায়বিচার পাব। এই সময় নগদ অনেক কিছু করে ফেলতে পারে। নথিপত্র নষ্ট করে বা প্রমাণ মুছে ফেলতে পারে। তবে গ্রাহকের অর্থের যেন ক্ষতি না হয়, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নগদ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো টাকা স্থানান্তর করতে পারবে না।’
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পর নিরীক্ষায় উঠে আসে, নগদ লিমিটেডে বড় ধরনের জালিয়াতি হয়েছে। ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক অর্থ বা ই-মানি তৈরি করেছে। এসব কারণে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। সাবেক সরকারের আমলে নিয়মের বাইরে গিয়ে গ্রাহক বানানো, সরকারি ভাতা বিতরণসহ একচেটিয়া সুবিধা পায় নগদ। প্রতিষ্ঠানটিতে যখন এসব অনিয়ম হয়, তখন এর পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ ঘটনায় ২৪ জনকে আসামি করে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নগদ পরিচালনায় প্রশাসক দলের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল করেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুই শীর্ষ তালেবান নেতার বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) আফগানিস্তানের তালেবানের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দেশটির নারী ও কিশোরীদের নানাভাবে দমন–পীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আইসিসি গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসে। এর পর থেকে দেশটিতে নারী ও কিশোরীদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, তাতে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এবং দেশটির প্রধান বিচারপতি আবদুল হাকিম হাক্কানির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগের ‘যুক্তিসংগত ভিত্তি’ রয়েছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর নারী ও কিশোরীদের ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের পড়াশোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং অনেক চাকরি থেকে নারীদের বিরত রাখা।
আফগানিস্তানে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীরা কত দূর ভ্রমণ করতে পারবে, সে বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে তালেবান। এমনকি জনসমক্ষে নারীদের কথা বলার বিষয়েও নির্দেশনা জারি করেছে তারা।
এক বিবৃতিতে আইসিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের জনগণের ওপর কিছু নিয়ম ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তালেবান। তবে তারা নারী ও কিশোরীদের বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছে। জাতিসংঘ এসব বিধিনিষেধকে ‘লিঙ্গবৈষম্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তালেবান। তারা বলেছে, তালেবান এই আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না। আদালতের এমন পরোয়ানাকে ‘সুস্পষ্ট শত্রুতামূলক পদক্ষেপ’ এবং ‘বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের বিশ্বাসের প্রতি অপমান’।
তালেবান সরকারের দাবি, তারা আফগানিস্তানের সংস্কৃতি ও ইসলামি আইন অনুযায়ী নিজস্ব ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারীদের অধিকারকে সম্মান করে।
গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের মতো গুরুতর অপরাধের তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে কাজ করে আইসিসি। কোনো দেশ এই অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে না পারলে বা বিচার করতে না চাইলে আইসিসি এ উদ্যোগ নেয়।