যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন। সম্প্রতি বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন আদালত। ফলে বিশ্বের প্রভাবশালী উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তির ক্ষেত্রে নতুন করে সুসংবাদ পেলেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হার্ভার্ড প্রশাসন ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হন। এর পরপরই আদালত ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত সাময়িক স্থগিত করে দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার এক মার্কিন আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের একটি নীতি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন। এই নীতি অনুযায়ী, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে পারত না। হার্ভার্ডের অভিযোগ, এই নীতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৃহত্তর চক্রান্তের অংশ। কারণ, হার্ভার্ড তাদের ‘শিক্ষাগত স্বাধীনতা’ বিসর্জন দিতে রাজি হয়নি।

মার্কিন আদালতের এই আদেশের ফলে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সাময়িক স্বস্তি পেয়েছেন। এই আদেশ বলবৎ থাকলে তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যেতে হতো। হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের ওই নীতিকে মার্কিন সংবিধান ও অন্যান্য ফেডারেল আইনের ‘প্রকাশ্য লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৭ হাজারের বেশি ভিসাধারীর ওপর ‘তাৎক্ষণিক ও ধ্বংসাত্মক প্রভাব’ পড়বে।

শুক্রবার বোস্টন ফেডারেল আদালতে দায়ের করা মামলায় ৩৯৮ বছরের পুরোনো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছাড়া হার্ভার্ড, হার্ভার্ড নয়। বর্তমান শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ডে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আছে, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশ।’

এই পদক্ষেপ হোয়াইট হাউস ও হার্ভার্ডের মধ্যে দীর্ঘদিনের চলমান বিতর্কের সর্বশেষ সংযোজন। ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়, আইন সংস্থা, সংবাদমাধ্যম, আদালত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গে মেলাতে চাইছে। রিপাবলিকানরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে বামপন্থী পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে আসছে।

এর আগে ট্রাম্প প্রশাসনের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। মামলার একদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ’ (ডিএইচএস) জানায়, তারা হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী ভিসা কর্মসূচির অ্যাকসেস বাতিল করছে। এই কর্মসূচির আওতায়ই বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে পারেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদিবিরোধিতার বিরুদ্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি এবং নিয়োগ ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় সংস্কার আনেনি। তবে এসব অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

হার্ভার্ড মামলায় বলেছে, ‘কলমের এক খোঁচায় সরকার আমাদের ছাত্রসংখ্যার এক-চতুর্থাংশকে মুছে ফেলতে চেয়েছে। অথচ এই শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।’

বিশ্ববিদ্যালয় আদালতের কাছে আবেদন করেছে, যাতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। এই সিদ্ধান্তেই হার্ভার্ডের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম সার্টিফিকেশন বাতিল করা হয়েছে।

হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার এক চিঠিতে বলেছেন, ‘আমরা এই বেআইনি ও অযৌক্তিক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানাই। সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে হার্ভার্ডকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ, আমরা আমাদের একাডেমিক স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে রাজি হইনি।’

ট্রাম্প প্রশাসন শুধু হার্ভার্ড নয়, অন্য শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও নিশানায় রেখেছে। তারা দাবি করেছে, এসব প্রতিষ্ঠানকে ফিলিস্তিনপন্থী কর্মীদের দমন ও রক্ষণশীল মতামতের প্রতি বৈষম্য দূর করতে হবে। এ ছাড়া দেশজুড়ে ডজনখানেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা কিছু ছাড়ও আদায় করে নিয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে হোয়াইট হাউস হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অর্থায়ন স্থগিত করে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়টির করছাড় সুবিধা বাতিলেরও হুমকি দেন। এই অর্থায়ন স্থগিতের পরিপ্রেক্ষিতে হার্ভার্ড আগেও একটি মামলা করেছিল, যেখানে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের ওই পদক্ষেপ বন্ধের দাবি জানায়।

উল্লেখ্য, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজে অবস্থিত এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীন ও খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র পদক ষ প কর ত প

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।

আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।

বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।

অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।

আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ