নাপোলির সিরি ‘আ’ জয়ের মধ্য দিয়ে ২০২৪–২৫ মৌসুমে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ ঘরোয়া লিগের চ্যাম্পিয়ন দল নির্ধারণ হয়ে গেছে। কাল রাতে শীর্ষ পাঁচ লিগের মৌসুমও শেষ হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে দলীয় লড়াইয়ের পর ব্যক্তিগত লড়াইয়েরও নিষ্পত্তির হয়েছে।
শেষ মুহূর্তে এসে লড়াই জমে উঠলেও ভিক্টর ইয়োকেরেস ও মোহাম্মদ সালাহকে পেছনে ফেলে কিলিয়ান এমবাপ্পেই ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জিতে নিয়েছেন। পরশু রাতে মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের শেষ ম্যাচে জোড়া গোল করে নিজেকে প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যান এমবাপ্পে। যা একটু লড়াইয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন সালাহ। কিন্তু শেষমেশ এমবাপ্পের সঙ্গে পেরে ওঠেননি।
রিয়াল মাদ্রিদের তৃতীয় ফুটবলার হিসেবে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জিতলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাঁর আগে জিতেছিলেন হুগো সানচেজ ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
প্রতিটি মৌসুমে ইউরোপের প্রতিটি দেশের শীর্ষ লিগগুলোর মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি গোল করেন, তাঁকে দেওয়া হয় সোনার জুতা। এই পুরস্কারের আনুষ্ঠানিক নাম ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু।
এমনিতে ইউরোপের সব লিগই আলাদা করে মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে গোল্ডেন বুট পুরস্কার দেয়। তবে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু তাঁকেই দেওয়া হয়, যিনি পুরো ইউরোপে সব লিগ মিলিয়ে গোলের জন্য সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পান। পয়েন্ট হিসাব করা হয় গোলসংখ্যা ও সংশ্লিষ্ট লিগের মানের ওপর ভিত্তি করে।
এমবাপ্পে স্প্যানিশ লা লিগায় নিজের অভিষেক মৌসুমেই করেছেন ৩১ গোল। নতুন নিয়মে উয়েফা কো–এফিসিয়েন্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ পাঁচ লিগে করা প্রতিটি গোলকে ২ দিয়ে গুণ করে পয়েন্ট দেওয়া হয়। লা লিগা যেহেতু র্যাঙ্কিংয়ের তিনে আছে, তাই এমবাপ্পে ৩১ গোলের দ্বিগুণ ৬২ পয়েন্ট পেয়েছেন।
স্পোর্তিং সিপির ভিক্টর ইয়োকেরেস ৫৮.
এরপরও এমবাপ্পের চেয়ে পেছনে থাকার কারণ পর্তুগিজ লিগ উয়েফা কো-এফিসিয়েন্ট র্যাঙ্কিংয়ে সাত নম্বরে থাকা। ৬ থেকে ২২ র্যাঙ্কের লিগের গোলগুলোকে যে ১.৫ দিয়ে গুণ করা হয়। সেই হিসাবে ইয়োকেরেসের পয়েন্ট ৫৮.৫।
লিভারপুলের হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতা মোহাম্মদ সালাহ তৃতীয় হয়েছেন। মিসরীয় এই তারকা এবারের লিগে ২৯ গোল করে পেয়েছেন ৫৮ পয়েন্ট। তাঁর দলের শেষ ম্যাচটি হয়েছে গত রাতে। অ্যানফিল্ডে ক্রিস্টাল প্যালেসের সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। দলের একমাত্র গোলটি সালাহই করেছেন।
তবে এমবাপ্পেকে টপকে সোনার জুতা জিতলে হলে কাল কমপক্ষে ৪ গোল করতে হতো সালাহকে। হ্যাটট্রিক করতে পারলে এমবাপ্পের সমান ৬২ পয়েন্ট হতো সালাহর। সে ক্ষেত্রেও সোনার জুতা এমবাপ্পেই জিততেন।
কারণ, নিয়ম অনুযায়ী একাধিক খেলোয়াড়ের পয়েন্ট সমান হলে যিনি কম সময় খেলেছেন, তিনিই পুরস্কারটি জিতবেন। এমবাপ্পে লা লিগার এবারের মৌসুমে খেলেছেন ২৮৭১ মিনিট, সালাহ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৩৩৭৭ মিনিট। তাই এমবাপ্পেকে টপকে সোনার জুতা জিততে হলে সালাহর হাতে ‘অপশন’ ছিল একটাই—ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ৪ গোল করা।
পেশাদার ক্যারিয়ারে সালাহ এক ম্যাচে ৪ গোল করেছিলেন দুবার—২০১৮ সালে লিভারপুলের হয়ে এবং ২০২৩ সালে জাতীয় দল মিসরের হয়ে। তবে কাল ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে সেটির পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি।।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউর প য় ন গ ল ড ন শ এমব প প র গ ল কর
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকারের কাজেও স্বচ্ছতার অভাব দেখছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘সরকার বদল হলেও বাজেটের কাজের প্রক্রিয়া বদল হয়নি। বৈষম্য কমাতে, কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকারের কোনো পরিকল্পনা দেখছি না। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের মতোই অন্তর্বর্তী সরকারের কাজেও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।’
দেশের ব্যবসায়ী–শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির যৌথ আয়োজনে ‘কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আজ মঙ্গলবার রাতে এনটিভির স্টুডিওতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আরও অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল মঈন খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান ও নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
অনুষ্ঠানে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সরকার বদল হলো, কিন্তু প্রক্রিয়া তো বদল হলো না। সরকার এখনো পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীল। আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছি, কিন্তু বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ দেখি না। কর্মসংস্থানের কোনো পরিকল্পনা দেখি না। বাজেট নিয়ে আবার সেই তথাকথিত পুরোনো আলোচনা চলছে। এই আলোচনা যদি দুই বছর আগে হতো, একই রকম লাগত। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, এই সরকারের সময়ে ২৭ লাখ মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে; তাদের মধ্যে ১৮ লাখ নারী। তাহলে নতুন সরকার কী বৈষম্যবিরোধিতা শেখাচ্ছে? এই সরকারকে আসছে বাজেটে বলতে হবে, গত সরকারের চেয়ে তারা ভিন্ন কী করল। এখানে দুই টাকা বাড়িয়েছি, ওখানে দুই টাকা কমিয়েছি, এমন আলোচনায় মন ভরবে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) যে বাজেট নিয়ে কাজ করছেন, তা তো পতিত সরকারের বাজেট। এই বাজেটে কাঠামোগত কী পরিবর্তন করলেন? আপনাদের কাজে স্বৈরাচারী সরকারের মতো স্বচ্ছতার অভাব দেখেছি। তারা (বিগত সরকার) যেভাবে সবাইকে থামিয়ে দিয়েছে, একই কাজ একইভাবে আপনারা করলেন। পতিত সরকারের যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ছিল, সেটি থেকে কীভাবে ব্যয় কমানো হলো? যেসব অতিমূল্যায়িত বৃহৎ প্রকল্প (মেগা প্রজেক্ট) ছিল, সেগুলো থেকে কোথায় টাকা কমিয়েছেন, তা জানি না। আমি তো মেগা প্রকল্পে আবারও অর্থের বরাদ্দ দেখতে পাচ্ছি।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আলাপ–আলোচনার উন্মুক্ততা না থাকলে ঠিক কাজও বেঠিক হয়ে যায়। আলোচনার সুযোগ না থাকলে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর কী পরিবর্তন হলো, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ ক্ষেত্রে এনবিআরকে ভাগ করার উদাহরণ দেন তিনি। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এনবিআরকে দুই ভাগ করা একটি সঠিক উদ্যোগ। শ্বেতপত্রেও এটির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এনবিআর ভাগের ক্ষেত্রে আলাপ–আলোচনা না করায় এখন দুঃখজনক পরিণতি হয়েছে। এটি হওয়ারই কথা ছিল। কারণ, ঠিক কাজও আলাপ–আলোচনা ছাড়া করলে এ রকম পরিণতি হবে। একই উদাহরণ দেওয়া যায় শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রে। আইসিইউতে থাকা শেয়ারবাজার চালুর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেটিও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া বিএসইসির পক্ষে একা কোনো দিনও করা সম্ভব নয়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘এই সরকার নিঃসন্দেহে বৈধ সরকার; কিন্তু নির্বাচিত সরকার তো নয়। ফলে সরকারের সীমাবদ্ধতা থাকবে। তবে এতগুলো সংস্কারের কর্মসূচি হয়েছে; সবাই সংস্কারের, নির্বাচনের, বিচারের পথরেখা চায়। আমি জানতে চাই, অর্থনীতির পথরেখা কোথায়?’
দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যাঁরা বলেন, দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায়নি, আমি তাঁদের সঙ্গে ভিন্ন মত দিতে চাই। দেশের অর্থনীতি আইসিইউতে চলে গিয়েছিল। লাইফ সাপোর্টের জন্য বিগত সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছিল। আইএমএফের কর্মসূচি অন্তত তিন–চার বছর স্থায়ী হয়। কিন্তু আমরা আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির পর্যালোচনা পর্বেই আইসিইউ থেকে বের হয়ে গেছি। এটা অনেক বড় অর্জন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটটিও অন্তর্বর্তী বাজেট; সত্যিকার বাজেট নয়। কারণ, এই বাজেট কেমন হবে, সেটি গত ৯ মাসে একবারও দেশের মানুষের সঙ্গে আলাপ করেনি সরকার। সরকার প্রায় ১৫টির মতো সংস্কার কমিশন করেছে। এ জন্য সবার সঙ্গে আলোচনা করছে। তাহলে বাজেটের ক্ষেত্রেও এমন কেন করা হয়নি? এটা তো কোনো ঔপনিবেশিক সরকার নয় যে আলোচনা করবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে রাজস্ব সংগ্রহে আমরা এগিয়ে রয়েছি। এবারের বাজেটে রাজস্ব আরও বাড়ানোর চেষ্টা থাকবে। পাশাপাশি ব্যবসা সহজ করার জন্য বিদ্যমান যেসব বাধা আছে, সেগুলো যতটা সম্ভব দূর করার চেষ্টা আমরা করব। তবে কর অব্যাহতির যে সংস্কৃতি আছে, সেখানে থেকে আমরা বের হতে চাই। নতুন করে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না।’
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে বাজেটের আগে যেসব পরামর্শ দিতাম, তার তেমন প্রতিফলন বাজেটে দেখা যেত না। তবে এ বছর আমরা আশাবাদী যে এনবিআর যৌক্তিকভাবে বেশ কিছু পরামর্শ আমলে নেবে।’
মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে অর্থনীতি অনেকটা চাঙা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের শিল্প খাত অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইসিইউতেই রয়েছে বলা যায়। আইসিইউ থেকে বের করতে হলে এখনো কিছু ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্রয়োজন।