বাজারে কার্বন বিনিয়োগ ও বিকাশে নীতিমালাসহ কয়েক দফা সুপারিশ
Published: 26th, May 2025 GMT
বিশ্বব্যাপী কার্বন বাজার থেকে বাংলাদেশের বার্ষিক প্রায় ১.০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি কার্বন ক্রেডিট বাজারেও বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। উন্নত রান্নার চুলা এবং সৌর গৃহ ব্যবস্থার মতো প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০৬ সাল থেকে ১৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
এত সব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পরিবেশ সুরক্ষায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কার্বন খাতে বিনিয়োগ করলেও বাংলাদেশে এ খাতে বিনিয়োগ অনেক কম। কারণ কার্বন ক্রেডিট বাজার নিয়ে আমাদের দেশে সুস্পষ্ট কোন নীতিমালা নেই। এ অবস্থায় এই খাতের বিকাশে সুস্পষ্ট নীতিমালাসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
সোমবার (২৬ মে) গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে কার্বন অর্থায়নের উপায়: বেসরকারি খাতের সম্ভাবনা এবং নীতিমালায় করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। আন্তর্জাতিক কনসালটেনসি প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
বাংলাদেশের কার্বন বাজারের প্রস্তুতি, প্যারিস চুক্তির অধীনে অনুচ্ছেদ ৬ কার্যকর করার বিষয়ে বেসরকারি খাতের নেতৃবৃন্দ ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এতে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আহমেদ জুবায়ের মাহমুদ, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের নীতিনির্ধারণবিষয়ক উপদেষ্টা অসিম রহমান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ শাহাদাত হোসেন শাকিল, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সাসটেনিবিলিটি বিভাগের হেড সুমাইয়া টি আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এর বিজন ইসলাম। ’কৃষি, বাংলাদেশ ও কার্বন মার্কেট শীর্ষক উপস্থাপনা তুলে ধরেন জিরো ১৩ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি.
তিনি তার উপস্থাপনায় বলেন, “বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মূল লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬% নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন অর্জন করা এবং একই বছরের মধ্যে শর্তসাপেক্ষে ৮৯.৪৭ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণ কমানো। যা টেকসই কৃষি ও পানি ব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখবে।”
বৈঠকে আহমেদ জুবায়ের মাহমুদ বলেন, “আমরা সবুজ অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি, পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করেছি। এখন চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে- কার্বন ফাইন্যান্সিং এর ক্ষেত্রে বৈশ্বিক ভালো দৃষ্টান্ত অণুসরণ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং সেক্টরের সহায়তা নিয়ে সরকারি-বেসরকারিসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করা।”
বিজন ইসলাম বলেন, “এ ক্ষেত্রে আমাদের দরকার উদ্ভাবনী এবং টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা। যা সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলবে। কার্বন ফাইন্যান্সিং এর মাধ্যমে বিনিয়োগের নতুন উৎস খুঁজতে হবে।” তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কেবল প্রবৃদ্ধির বিষয়ক না দেখে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিস্থাপক অর্থনীতি গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি সুপারিশ উঠে আসে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- কার্বন নিঃসরণ কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো, প্রযুক্তি সংযুক্তির মাধ্যমে শিল্পে দক্ষতা আনয়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বনায়নে কার্বন অর্থায়নের সুযোগগুলিকে কাজে লাগানো, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যক্রমকে আরো সহজতর করা এবং আর্থিক বাধাগুলি চিহ্নিত করে এর সমাধানে কাজ করা।
এর পাশাপাশি আলোচকরা এই খাতে সঠিক কৌশল ও বিনিয়োগ বাড়ানো, তফসিলী ব্যাংক ও বড় প্রতিষ্ঠানকে এ খাতে অর্থায়নে উৎসাহিত করণ, কার্বনের বাজারে অবস্থান শক্তিশালী করতে নীতিগত সহায়তা, কার্বন ফাইনান্সিংকে এগিয়ে নিতে সুস্পষ্ট নীতিমালা করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অর থ য ন ব সরক র ব যবস থ ক র বন
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’