পঞ্চগড়ে সরকারি চাল বিতরণের সময় টাকা আদায়, ১১ ইউপি সদস্য পুলিশ হেফাজতে
Published: 27th, May 2025 GMT
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় একটি ইউনিয়ন পরিষদে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতাধীন ভিডব্লিউবি কার্ডের চাল বিতরণের সময় উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে প্যানেল চেয়ারম্যানসহ ১১ ইউপি সদস্যকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটনা ঘটে। রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই ইউপি সদস্যদের বোদা থানা–পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর আগে বিকেলে উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে জড়ো হয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যদের ঘিরে রাখেন।
এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউপি সদস্যরা আমাদের হেফাজতে আছেন। তাঁদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।’
আটক ব্যক্তিরা হলেন ঝলই শালশিরি ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন ইসলাম, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খলিলুর রহমান, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হামিজ উদ্দিন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রিয় নাথ রায়, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুনীল চন্দ্র রায়, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দাহির উদ্দিন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খাদিমুল ইসলাম, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আশরাফুল ইসলাম, ১-২-৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শেফালী রাণী, ৪-৫-৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিলকিস বেগম এবং ৭-৮-৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুপালী বেগম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে ঝলই শালশিরি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতাধীন ভিডব্লিউবি কার্ডের ২৫৮ জন উপকারভোগীর কাছে চাল বিতরণ শুরু হয়েছিল। প্রতি মাসে ৩০ কেজি হিসাবে গত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসের মোট ১৫০ কেজি করে চাল একেকজন উকারভোগী পাচ্ছিলেন। এর বিপরীতে ইউপি সদস্যরা প্রত্যেক উপকারভোগীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে উপকারভোগীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়ভাবে তৈরি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। চাল বিতরণের প্রায় শেষ দিকে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি সেনাবাহিনী ও প্রশাসনকে অবহিত করে। এরই মধ্যে উপকারভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান নেন।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর বোদা ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান। এমনকি উপকারভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া ১ লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা পাওয়া যায়।
পরে পুলিশ ও বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও ঘটনাস্থলে গিয়ে সেনাসদস্যদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পর বেলা সাড়ে তিনটা থেকে অবরুদ্ধ ইউপি সদস্যদের রাত পৌনে ১১টার দিকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ল ব তরণ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় হামাসের প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার দাবি নেতানিয়াহুর
গাজা হামাসের প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বুধবার ইসরায়েলের পার্লামেন্টে (নেসেট) এ কথা বলেন তিনি। তবে সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে হামাস তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানায়নি।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলার পরিকল্পনাকারী ও হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার। ২০২৪ সালের অক্টোবরে গাজার রাফা এলাকায় ইয়াহিয়া সিনওয়ারও ইসরায়েলি সেনাদের হাতে প্রাণ হারান। তাঁর মৃত্যুর পর মোহাম্মদ সিনওয়ার গাজায় হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।
মোহাম্মদ সিনওয়ারের অবস্থান নিশানা করে চলতি মাসে দক্ষিণ গাজার একটি হাসপাতালে হামলা চালায় ইসরায়েল। গত ২১ মে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, খুব সম্ভবত মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। বুধবার নেসেটে নেতানিয়াহু বলেন, মোহাম্মদ সিনওয়ারকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় ২০ মাসে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হামাস নেতাদের নামও তুলে ধরেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘গত দুই দিনে আমরা হামাসের পুরোপুরি পরাজয়ের দিকে একটি নাটকীয় মোড় দেখতে পেয়েছি।’ ইসরায়েল এখন গাজায় ‘খাদ্য বিতরণের নিয়ন্ত্রণও নিচ্ছে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। এখানে তিনি গাজায় নতুন ত্রাণ সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থার কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সংগঠন তা পরিচালনা করছে।
নেতানিয়াহুর এই ঘোষণা এমন এক সময় এসেছে যখন ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা তীব্রতর করেছে। চলতি বছরের শুরুতে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ১৮ মার্চ থেকে উপত্যকাটিতে হামলা জোরদার করে ইসরায়েল। ইসরায়েল বলেছে, হামাসের শাসন ও সামরিক ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং গাজায় বন্দী থাকা আটকদের মুক্ত করাই তাদের লক্ষ্য।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্ব ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। সেদিন ২৫০ এরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।
হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজায় পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, উপত্যকাটিতে ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলে হামলার মুখে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি স্থানচ্যুত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, নিহতদের অধিকাংশই নিরীহ নাগরিক। কতজন যোদ্ধা মারা গেছে, সে বিষয়ে তারা কোনো তথ্য দেননি। ইসরায়েলের দাবি, তারা লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। কিন্তু তারা এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।