ভারতে কারাভোগের পর দেশে ফিরল ৩৬ শিশু
Published: 28th, May 2025 GMT
ভারতে পাচারের শিকার ৩৬ বাংলাদেশি শিশুকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের হস্তান্তর করে। দেশের বিভিন্ন সীমান্তপথে ভারতে গিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে দেশটির পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল তারা। তাদের বয়স ১০-১৮ বছরের মধ্যে।
বেনাপোল বন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরির (জিডি) মাধ্যমে সীমান্ত থেকে শিশুদের গ্রহণ করেছে মানবাধিকার সংগঠন জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি, রাইটস যশোর ও মানব উদ্ধার শিশু সুরক্ষার প্রতিনিধিরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পাচারের শিকার ৩৬ বাংলাদেশিকে উদ্ধারের পর ফেরত আনতে সরকারের পাশাপাশি কাজ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
ফেরত আসা শিশুরা পুলিশের হাতে আটকের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি নিরাপদ আশ্রয়ে ছিল। আইনি জটিলতায় দুই থেকে আট বছর পর্যন্ত ভারতের হোমে থাকতে হয়েছিল। পরে ভারত-বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া স্বদেশ প্রত্যাবাসনে তারা দেশে ফেরার সুযোগ পায়।
পাচারের শিকার শিশুদের পরিবারের এক স্বজন জানান, তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ত। চাকরির আশ্বাস দিয়ে ভারতে নিয়ে বিক্রি করে দেয় দালাল চক্র। মেয়েকে নেওয়ার জন্য তিনি বেনাপোল সীমান্তে এসেছেন।
জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের উপব্যবস্থাপক মুহিত হোসেন বলেন, ‘ভারত থেকে ৩৬ শিশু দেশে ফিরেছে। এদের মধ্যে ১৩ জনকে আমরা গ্রহণ করেছি। অন্যদের বিভিন্ন সংগঠন গ্রহণ করেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। সবাইকে স্বজনদের কাছে হস্তন্তর করা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।
সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা