জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় হয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরস্পরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়াচ্ছেন তাঁরা।

তবে মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুল এলাকায় বিপরীত চিত্রও রয়েছে। এসব এলাকায় সন্ত্রাসীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তুলনামূলক কম। এই এলাকাগুলোতে অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সন্ত্রাসীদের মধ্যে একধরনের সমঝোতা রয়েছে।

দুই দশক পর জামিনে বের হওয়ার পর খুনোখুনিতে নাম আসে মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজারে সাদেক খান আড়তের সামনে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এলাকার ‘দখল’ নিতে সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের বিরোধ থেকে জোড়া খুনের ওই ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ওই ঘটনায় গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর পিচ্চি হেলালের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়। এতে কিছুটা চাপে পড়েন এই শীর্ষ সন্ত্রাসী।

মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশের এলাকার অপরাধজগতে পিচ্চি হেলালের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যাপ্টেন ইমন। ওই মামলার পর ইমনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অনেকেই একের পর এক গ্রেপ্তার হন।মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশের এলাকার অপরাধজগতে পিচ্চি হেলালের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যাপ্টেন ইমন। ওই মামলার পর ইমনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অনেকেই একের পর এক গ্রেপ্তার হন।

গত ১০ জানুয়ারি রাতে এলিফ্যান্ট রোডের বিপণিবিতান মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে ব্যবসায়ী এহতেশামুল হককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনার নেপথ্যে হাজারীবাগের শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ওরফে ক্যাপ্টেন ইমনের নাম আসে। পরে এ ঘটনায় পিচ্চি হেলালের ভাই ও এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহিদুল হাসান নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন।

মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশের এলাকার অপরাধজগতে পিচ্চি হেলালের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যাপ্টেন ইমন। ওই মামলার পর ইমনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অনেকেই একের পর এক গ্রেপ্তার হন। জিগাতলা থেকে গ্রেপ্তার হন ইমনের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ হিসেবে পরিচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী এজাজ বিন আলম। এরপর এই এলাকায় ইমনের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা কমে যায়। এই সুযোগে পিচ্চি হেলালের তৎপরতা বেড়ে যায়।

আরও পড়ুনতৎপর শীর্ষ সন্ত্রাসীরা, আধিপত্য বিস্তারে খুনোখুনি২৮ মে ২০২৫

একইভাবে মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুল এলাকায় অন্তত চার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তৎপরতার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এই সন্ত্রাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বিদেশ থেকে মুঠোফোনে কল দিয়ে প্রায়ই আতঙ্ক তৈরি করছেন তাঁরা। তাঁদের হয়ে কাজ করেন চিহ্নিত অপরাধীরা। কোথাও কোথাও অপরাধমূলক কাজে কিশোর গ্যাং সদস্যদের ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে।

এই অপরাধবিশেষজ্ঞ মনে করেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণেও পরিবর্তন এসেছে। এ জন্য শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বন্ধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। এখনই যদি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা শক্তভাবে দমন করা না যায়, তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো.

নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে যাঁদের নাম আসছে, তাঁদের বেশির ভাগই ফোন ব্যবহার করছেন না। কেউ কেউ দেশের বাইরে চলে গেছেন, এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে। যেসব ঘটনায় এ ধরনের সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে এলাকাভিত্তিক সাঁড়াশি অভিযান চলছে।

কুষ্টিয়া থেকে আটক করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ফ য ন ট র ড ক য প ট ন ইমন গ র প ত র হন ম হ ম মদপ র র তৎপরত দ বন দ ব র এল ক র র জন ত ক ধ নমন ড এল ক য় পর চ ত অপর ধ ঘটন য় ইমন র

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ