সৌদি আরবে দিনমজুর ওয়াহিদুর এখন ফ্রিল্যান্সার, মাসে আয় আড়াই লাখ টাকার বেশি
Published: 29th, May 2025 GMT
সালটা ছিল ২০২৩। ওয়াহিদুর রহমান কাজের জন্য পাড়ি দিলেন সৌদি আরব। সেখানে তিনি একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ নিলেন। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। ওয়াহিদুরের কাজটা ছিল দুই তলা থেকে পাঁচ–ছয়তলা পর্যন্ত ৫০ কেজির সিমেন্টের বস্তা ওঠানো। কিছু একটা করে বাড়ি ফিরতে হবে, সেই তাড়া সব সময় ছিল ওয়াহিদুর রহমানের। তাই কাজের ফাঁকে খুঁজতেন কী করা যায়।
ওয়াহিদুর রহমান খোঁজ পেলেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের। ২০২৩ সালেই কাজের পাশাপাশি শুরু করলেন ফ্রিল্যান্সিং শেখা; কিন্তু কাজ হলো না। ছয় মাস করে কিছুই শিখতে পারলেন না ওয়াহিদুর। আবার একটা হতাশায় পড়লেন।
বাংলাদেশে যেহেতু মেহেরপুরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে কাজ করেছেন, ওই সনদ দেখিয়ে সৌদি আরবের সেই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের কাজে ঢুকলেন। কাজের চাপ একটু কমে ওয়াহিদুরের। আবার খোঁজ নেওয়া শুরু করলেন কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং শেখা যায়। তখন আরেকটি প্রতিষ্ঠানে শুরু করেন শেখা। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে ১০ ঘণ্টা কাজ করেন আর রাত জেগে কাজ শেখেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের। এভাবে ধের্য ধরে শিখতে শিখতেই দক্ষ হলেন গুগল অ্যাডস, ওয়েব অ্যানালাইটিকস ও কনভার্সন ট্র্যাকিংয়ের ওপর। এখন তিনি আপওয়ার্কের টপ–রেটেড ফ্রিল্যান্সার, পাশাপাশি লিংকডইন থেকেও গ্রাহকের অনেক কাজ করেন। এখন মাসে আয় করেন আড়াই লাখ টাকার বেশি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন পরিবারের কাছে। দেশ ছাড়লেন কাজের সন্ধানে, কাজ শিখে আবার দেশেই ফিরে এলেন ওয়াহিদুর রহমান।
আরও পড়ুনশুধু এক আঙুল নাড়াতে পারেন, সেই যোবায়ের এখন সফল ফ্রিল্যান্সার২৪ মে ২০২৪যেন স্বপ্নের অতীতওয়াহিদুর রহমান, ডাকনাম তুহিন। জন্ম কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার দৌলতপুরের ইউসুফপুর গ্রামে। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। তবে পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে ওয়াহিদুর রহমানের মা–বাবা গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে আসতে বাধ্য হন। তিনি তখন কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজে এইচএসসি পড়েন। একদিন মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফোন করে বলেন, ‘আমাদের পক্ষে আর তোমার পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব নয়।’ সেদিন থেকে শুরু হয় ওয়াহিদুর রহমানের সংগ্রামী পথচলা। সেদিন অবশ্য ওয়াহিদুর স্বপ্নেও ভাবেননি, তিনি মাসে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ডলার আয় করতে সক্ষম হবেন।
চড়াই–উতরাইয়ে ভরা জীবনওয়াহিদুরের জীবন চড়াই–উতরাইয়ে ভরা। এই সফলতা তাঁর জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে অনেক সময় ও আনন্দ। তবে এই সময় ও আনন্দের বিনিময় মূল্য তাঁর আজকের সফলতা।
জীবনের প্রথম উপার্জন শুরু হয়েছিল টিউশনি দিয়ে। টিউশনি করে সামান্য যে টাকা উপার্জন করতেন, তা দিয়ে নিজের মেসের খরচ চালানোই দুষ্কর হয়ে পড়েছিল। স্কুলের বন্ধুদের কেউ ১০০ টাকা, কেউ ৫০০ টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন তাঁকে। পারিবারিক দুর্দশার মধ্যেও নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন পরীক্ষার জন্য। এমন সময় টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে পড়েন ওয়াহিদুর রহমান। ফলে পরীক্ষার ফল আশানুরূপ হয় না। আশপাশের মানুষজন তখন কটূক্তি করতে শুরু করে। ফলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। আর্থিক সংকটের কারণে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাও দিতে পারেন না।
এরপর ওয়াহিদুর ঠিক করেন যে তিনি চাকরি করবেন। মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতনে যোগ দেন একটি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে। নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ শুরু করেন। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যেতে হয়। ফলে একাকিত্ব আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে তাঁকে। ভুগতে শুরু করেন হতাশায়।
এরপর বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে মেহেরপুরে লাইনম্যান পদে চাকরি পান। বেতন সর্বসাকল্যে ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিয়ে করেন। ফলে মাস শেষে হাত খালিই থাকত। কিস্তি ও ধারদেনায় ক্রমেই জর্জরিত হতে থাকে জীবন। কী করবেন, কিছু ভেবে পাচ্ছিলেন না। স্ত্রীকে বলতেন, এভাবে তো চলবে না। একসময় সিদ্ধান্ত নিলেন, চাকরি ছেড়ে দেবেন। পাড়ি জমাবেন সৌদি আরবে। পরিবার বা শ্বশুরবাড়ির কেউ বিদেশ গমনের এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করেননি। তবে ওয়াহিদুরের জেদ তাঁকে পিছু ফিরতে দেয় না। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তিনি। কিন্তু সৌদি আরবে যেতে অন্ততপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন। এমনিতেই তিন লাখ টাকার মতো দেনা জমে আছে। নতুন করে টাকা কোথায় পাবেন?
আরও পড়ুনশাশুড়ির কিনে দেওয়া ল্যাপটপে ফ্রিল্যান্সিং, পপির মাসিক আয় ৩ লাখ টাকা২৯ নভেম্বর ২০২৪সৌদি আরবে ওয়াহিদুর রহমান.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়
আগের দিন রোহিত শর্মার রেকর্ড ভেঙেছিলেন বাবর আজম। লাহোরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ১১ রানের ইনিংস খেলেই ভারতের সাবেক অধিনায়ককে টপকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়েছিলেন বাবর। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আজ তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৬৮ রানের ইনিংস খেলে কেড়েছেন আরেক ভারতীয় কিংবদন্তি বিরাট কোহলির রেকর্ড। ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাবরের এটি ৪০তম ৫০ ছোঁয়া ইনিংস। ৩৯টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে এত দিন বাবরের সঙ্গে রেকর্ডটির যৌথ মালিক ছিলেন কোহলি।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৩ ইনিংস পর ফিফটি পাওয়া বাবরের ইনিংসে ভর করেই লাহোরে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিটা ৪ উইকেট জিতেছে পাকিস্তান। তাতে তিন ম্যাচের সিরিজটা পাকিস্তান জিতল ২-১ ব্যবধানে। প্রথম ম্যাচ হারার পর ঘুরে দাঁড়িয়েই সিরিজ জিতল পাকিস্তান।
টসে হেরে ব্যাটিং পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা পুরো ২০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে করে ১৩৯ রান। রানটা ৬ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে পাকিস্তান।
রান তাড়ায় ইনিংসের ১১তম বলে ৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। বাবর ব্যাটিংয়ে নামেন এরপরই। দ্বিতীয় উইকেটে সাহিবজাদা ফারহানকে নিয়ে ৩৬ রান জুটি গড়া বাবর তৃতীয় উইকেটে সালমান আগাকে নিয়ে ৫২ বলে যোগ করেন আরও ৭৬ রান। ২৬ বলে ৩৩ রান করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান যখন ফেরেন ২৭ বলে ২০ রান দরকার পাকিস্তানের।
৫ রান যোগ হওয়ার পর চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন বাবর ৪৭ বলে ৯ চারে ৬৮ রান করা বাবর ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। এরপর ১৫ রানের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে আরও ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের অপেক্ষা একটু লম্বা করেছে পাকিস্তান।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে ৩৬ বলে সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন ওপেনার রিজা হেনড্রিকস। এ ছাড়া অধিনায়ক ডোনোভান ফেরেইরা ১৪ বলে ২৯ ও অলরাউন্ডার করবিন বশ ২৩ বলে করেন ৩০ রান। পাকিস্তানি পেসার শাহিন আফ্রিদি ২৬ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
দুই দল এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে। সিরিজের প্রথম ম্যাচ মঙ্গলবার ফয়সালাবাদে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরদক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৩৯/৯ (হেনড্রিকস ৩৪, বশ ৩০*, ফেরেইরা ২৯, ব্রেভিস ২১; আফ্রিদি ৩/২৬, তারিক ২/২৬, ফাহিম ২/২৮)।পাকিস্তান: ১৯ ওভারে ১৪০/৬ (বাবর ৬৮, সালমান ৩৩, ফারহান ১৯; বশ ২/২৪, উইলিয়ামস ২/২৬)।
ফল: পাকিস্তান ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩-ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ২-১ ব্যবধানে জয়ী।