ক্যাম্পাসে কোরবানির ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে ২৯ মে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বাড়িতে ফেরার ট্রেন। রীতিমতো যুদ্ধ করে কাটা ট্রেনের ‘আরাধ্য’ টিকিট। কোনোভাবেই ট্রেনটা মিস করা যাবে না। কমপক্ষে মিনিট ১৫ আগে হলেও পৌঁছাতে হবে কমলাপুরে স্টেশনে।

সকাল থেকেই তুমুল বর্ষণ। বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার হলের বারান্দায়ও। ভরা জৈষ্ঠ্যেও কেন যেন ঘোর বর্ষাকাল ভেবে ভ্রম হলো। সকালের ঘোলা আলোয় মনে হলো—বহুদিন হয়েছে এমন বৃষ্টি দেখিনি! সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরার ট্রেন ধরতে হবে বলে আগের রাতে কিছু কাপড়চোপড় ধুয়ে শুকাতে দিয়েছিলাম। সেগুলো পুরোটা শুকায়নি, আধভেজা হয়ে আছে এখনো। কিছুটা বাধ্য হয়েই আধভেজা কাপড়গুলো হলের লন্ড্রিতে দিয়ে ইস্ত্রি করিয়ে নিলাম।

গোছগাছ সেরে প্রস্তুত। বৃষ্টি একটু কমলেই কমলাপুরের দিকে পা বাড়াব। কিন্তু কমার তো লক্ষণ নেই, বরং বিকেলের দিকে বর্ষণধারা বেড়ে গেল। বন্ধুর পরামর্শে প্রায় দেড় ঘণ্টা আগেই বেরিয়ে পড়লাম। প্রথম বিপত্তি এল হলের ফটকে। দিনভর বর্ষণে গোড়ালির ওপর পর্যন্ত পানি উঠে এসেছে। অন্য সময় হলের সামনে দু-চারটা রিকশা অলস বসে থাকলেও আজ এই তল্লাটে রিকশা পাওয়া যেন ভার! আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে কোনোমতে একটা রিকশা পেলাম। চড়া ভাড়ায় সেই রিকশাওয়ালা আমাকে টিএসসির মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিলেন।

ভারী বর্ষণ, সঙ্গে বাতাসের এলোমেলো ঝাপটা। রিকশা থেকে নেমে মেট্রো স্টেশনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আধভেজা হয়ে গেলাম। ক্যাম্পাসের হলপাড়া থেকে টিএসসি—কোথাও যেন কেউ নেই। মেট্রোতে চেপে মতিঝিল পর্যন্ত যাওয়া গেল। মেট্রো থেকে নেমে বিপত্তি যেন আরও বাড়ল।

এবার একসঙ্গে দুটি সংকট! একে তো ফাঁকা, কোনো রিকশা নেই; তার ওপর দু-একটা রিকশা ফাঁকা থাকলেও কমলাপুর পর্যন্ত যেতে ভাড়া চায় এক শ টাকা! সাধারণ দিনের ভাড়ার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি! রিকশা খুঁজতে খুঁজতে কাকভেজা হয়ে গেলাম। সঙ্গে থাকা তল্পিতল্পাও ভিজেছে। এমন সময় কোত্থেকে এসে এক বৃদ্ধ রিকশাচালক ন্যায্য ভাড়াতেই কমলাপুরে যেতে রাজি হলেন! মনে মনে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রিকশায় চেপে বসলাম। ট্রেন ছাড়তে বাকি আর আধা ঘণ্টা।

বৃদ্ধ রিকশাচালক ধীরে ধীরে আমাকে নিয়ে এগোচ্ছেন। সামনে যেতেই আরামবাগ মোড়ে গাড়িগুলো স্থবির হয়ে বসে আছে। দীর্ঘ জট, একবার গাড়ি ছাড়লে হয়তো রিকশা মোড়ও পার হতে পারবে না। প্রথমবারের মতো ট্রেন মিস করার শঙ্কা মনে জেগে উঠল।

যানজটে বসে ট্রেন মিস হলে বাড়িতে কীভাবে যাব, সেই হিসাব-নিকাশ কষতে লাগলাম। কিছুক্ষণ বাদে মনে হলো, দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই, যা হওয়ার হবে। আশপাশে একটু খেয়াল করলাম। দেখলাম, এই ঘোর বর্ষণের দিনেও কিছু মানুষ ‘পেটের দায়ে’ ঘরের বাইরে। করপোরেট দুনিয়ার স্যুটেড-বুটেড চাকরিজীবীরা যেমন ভিজছেন, নিম্ন আয়ের রিকশাওয়ালাও ভিজছেন। ঝুম বৃষ্টি যেন সমাজের সব শ্রেণিব্যবধান এক করে দিয়েছে আজ।

এর মধ্যেই হুট করে রিকশা চলতে শুরু করল। আমিও মিনিট দশেক আগে স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনটা ধরতে পেরে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।

লেখা: আবু দারদা মাহফুজ, শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কমল প র

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রাবণের মেঘগুলো

২ / ১০শ্রাবণের মেঘগুলো আকাশে জড়ো হয়েছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ