আকাশ এত মেঘলা/ যেও নাকো একলা/ এখনি নামবে অন্ধকার/ ঝড়ের জল-তরঙ্গে, নাচবে নদী রঙ্গে/ ভয় আছে পথ হারাবার। বৃষ্টিমুখর বিকেলে বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের এই গান শুনতে শুনতে একটি প্রশ্ন মনে জাগল– আমাদের জাতীয় জীবনের আকাশেও তো মেঘ জমে আছে দীর্ঘদিন। তাহলে কি আমাদেরও পথ হারাবার ভয় আছে? আবারও কি কোনো অন্ধকার গ্রাস করবে চারদিক? 

মেঘলা আকাশেই বাংলাদেশের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ড.

মুহাম্মদ ইউনূস। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনের ফলে গণতন্ত্রের আকাশে যে কালো মেঘ জমেছিল, তা সরে গিয়ে ভোরের সূর্য উদিত হবে– এটা ছিল দেশবাসীর প্রত্যাশা। শুরুটা একেবারে খারাপ ছিল না। রাজনৈতিক দলগুলোও অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারা সে প্রতিশ্রুতি থেকে এখনও সরে যায়নি। তবে ১০ মাসের মাথায় এসে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষত বিএনপির কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, যদিও তা দুর্লঙ্ঘ্য নয়। এই দূরত্ব কেন সৃষ্টি হলো, তা নিয়ে রয়েছে নানাজনের নানা মত। তবে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হলো, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্পষ্ট ঘোষণা না দেওয়ায় সরকারের ওপর নাখোশ বিএনপি। সরকার নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ স্পষ্ট না করায় নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহের বীজ অঙ্কুরিত হতে শুরু করেছে।

এদিকে গত ২১ মে সেনা সদরে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য এবং এর এক দিন পর হঠাৎ প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের চিন্তাভাবনার কথা প্রচারিত হলে সর্বত্র উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। লক্ষণীয়, সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্যে যেসব কথা বলেছেন, দেশবাসী বা রাজনৈতিক নেতারা তাতে নেতিবাচক কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। বরং তাঁর বক্তব্যকে সবাই গ্রহণ করেছেন। বিশেষত বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইনে করিডোর দেওয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ‘নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল’-এর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকার থেকে আসতে হবে– তাঁর এ বক্তব্যকে সবাই স্বাগত জানিয়েছে। কেউ এটা স্বীকার না করলেও অনুমান করা কঠিন নয়, সেনাপ্রধানের এ সংক্রান্ত বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তা ছাড়া সরকার অনেক ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে অন্ধকারে রাখছে– জেনারেল ওয়াকারের এ মন্তব্যও প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সহচরদের মনঃপূত হয়নি। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে কেবিনেট কলিগদের সঙ্গে অনির্ধারিত দীর্ঘ চার ঘণ্টার বৈঠকে ড. ইউনূসের ‘কাজের পরিবেশ পাচ্ছি না’ বলে পদত্যাগের অভিপ্রায় ব্যক্ত করার মধ্যে। 
ড. ইউনূস কাজের পরিবেশ পাচ্ছেন না– এ কথা বিশ্বাস করা কঠিন। গত ১০ মাসে তিনি যেটা যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই হয়েছে এবং হচ্ছে। কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেনি। ১০ মাসের মাথায় সরকারের কয়েকটি কাজের এখতিয়ার নিয়ে মুখ খুলেছেন সেনাপ্রধান। অবশ্য করিডোর ও বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়ার বিরোধিতা বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আগেই করেছে। ১০ মাসের খতিয়ান দেখে অনেকেরই ধারণা ছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে তোয়াক্কা না করে অন্তর্বর্তী সরকার করিডোর ও বন্দর প্রশ্নে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে। সেনাপ্রধানের প্রকাশ্য অভিমত সরকারের সে এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দেখা দিয়েছে। যেহেতু করিডোর ও বন্দর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত, তাই এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান তথা সেনাবাহিনীর মতামতকে উপেক্ষা করা সহজ হবে না। এই প্রতিবন্ধকতাই ড. ইউনূসের কাছে ‘কাজের পরিবেশ নেই’ বলে অনুমিত হচ্ছে। 

কেউ কেউ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু কিছু বিষয়ে ‘একলা চলো’ নীতি অবলম্বন করছে। যেহেতু দেশে এখন জাতীয় সংসদ নেই, তাই ওইসব বিষয়ে জনগণের সম্মতিরও কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এসব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শক্রমেই সরকারের সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের যে রেফারেন্সের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত, তাতে স্পষ্টই বলা আছে– এ সরকার শুধু প্রয়োজনীয় রুটিন কাজ সম্পন্ন করবে। তারপরও সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজে সরকার হাত দিয়েছে। 
লক্ষণীয়, রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া আর কোনো জাতীয় নীতিনির্ধারণী বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ বা মতামত গ্রহণের গরজ অনুভব করেনি। মিয়ানমারের রাখাইনকে করিডোর দেওয়া ও বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়ার উদ্যোগ তার উদাহরণ। যদিও শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলতে বাধ্য হয়েছেন, করিডোর নয়, রাখাইনে ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর ব্যাপারে কথা হয়েছে। 

সরকারের একলা চলো নীতির আরেক উদাহরণ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পথে পা বাড়ানো। গত ২২ মে একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। যে সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো সবার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার, সেই সময়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উদ্যোগ রাজনৈতিক দলগুলোকে উপেক্ষা করার নামান্তর। রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বাগ্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিকে উপেক্ষা করে ঢাকা সিটি নির্বাচনের আয়োজন করার চেষ্টা নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে সচেতন মহল মনে করে। কেউ কেউ মনে করেন, বিদ্যমান উত্তপ্ত পরিবেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চেষ্টা করা হবে আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার শামিল। অন্তর্বর্তী সরকারের এই একলা চলো মনোভাব নতুন এক সংকটের জন্ম দেবে– এটা চোখ বন্ধ করে বলা যায়।
 
মহিউদ্দিন খান মোহন: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমক ল ন প রসঙ গ উপদ ষ ট য় সরক র সরক র র পর ব শ কর ড র ১০ ম স ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

গরুর হাটে ছাগলকাণ্ডের ছায়া, দুশ্চিন্তায় বড় খামারিরা

গত বছর ঈদুল আজহার আগে ১২ লাখ টাকার এক ছাগল দেশজুড়ে শোরগোল ফেলেছিল। রাজধানীর ‘সাদিক এগ্রো’ থেকে ছাগলটি কিনেছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছেলে। মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ছাগল নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। ছাগলকাণ্ড ঘিরে যেন বেরিয়েছিল কেঁচো খুঁড়তে সাপ! দেশজুড়ে তৈরি হয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিস্ফোরণ। একে একে বেরিয়ে আসে দুর্নীতবাজ কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদের নানা অপকীর্তির তথ্য। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বছর ঘুরে আবার কোরবানির ঈদ সামনে। তবে এবার দামি গরু কিংবা ছাগলের বিজ্ঞাপনের চাকচিক্য নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেই কোরবানির পশু নিয়ে বাগাড়ম্বর। খামারে খামারে নেই আগের সেই রোশনাই। পশুর হাটে হাটে এক ধরনের সতর্কতা, শঙ্কা। যার পেছনে রয়েছে ছাগলকাণ্ডের ছায়া। এ বাস্তবতায় বড় খামারির মধ্যে আছে উদ্বেগও।

এবার কোরবানির ঈদ ৭ জুন। প্রস্তুত হচ্ছে পশুর হাট। তবে বড় গরু নিয়ে বেকায়দায় আছেন খামারিরা। যেসব বড় গরু সাধারণত বিত্তবানের কাছে বিক্রি হতো, সেসব ক্রেতার অনেকেই আত্মগোপনে। পাশাপাশি আতঙ্কে আছেন ধনাঢ্য ক্রেতারাও। ফলে এবার চাহিদা বেশি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর। 

বড় গরু বোঝা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, কোরবানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার গবাদি পশু।

এর মধ্যে গরু-মহিষ ৫৬ লাখ ২ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার। চাহিদা অনুযায়ী প্রায় ২০ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছর গরুর চেয়ে ছাগল ও ভেড়ার কোরবানি বেশি হয়েছে। ২০২৩ সালে গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে ৪০ লাখ ৫৩ হাজার, আর ছাগল-ভেড়া ৫০ লাখ ৩৮ হাজার। অথচ ২০১৯ সালে গরু-মহিষ কোরবানি ছিল ৫৭ লাখের বেশি।

খামারিরা বলছেন, যারা একসময় কোরবানির হাটে লাখ লাখ টাকা ঢালতেন– রাজনীতিক, প্রভাবশালী আমলা, প্রবাসী পরিবার কিংবা বড় ব্যবসায়ী; তাদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে। কেউ দুর্নীতির মামলায়, কেউ হয়তো পরিস্থিতি বুঝে সতর্ক। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, দুর্নীতির তদন্ত, গণঅভ্যুত্থানের পর দামি পশু কেনা অনেকেই এখন ‘ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত’ মনে করছেন। খামারিরা বলছেন, এ বছর বড় গরুর চাহিদা নেই বললেই চলে। অনেকেই সস্তা ও ছোট পশুর দিকেই ঝুঁকছেন। সব মিলিয়ে ছাগলকাণ্ডের রেশ গিয়ে ঠেকেছে গোয়ালঘরে, কোরবানির হাটের দরকষাকষিতে, এমনকি খামারির সংসারেও।

পাবনার সাঁথিয়ার শামুকজানি গ্রামের খামারি মনজেল হোসেন ‘মোহন রাজ’ নামে ষাঁড়টি তিন বছর ধরে লালনপালন করছিলেন। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, খাওয়া-দাওয়া, পরিচর্যা করে ৯৫ হাজার টাকায় কেনা গরুটাকে বিশাল আকৃতি দিয়েছি। কিন্তু ১০ লাখের আশায় রাখা গরুটি শেষ পর্যন্ত ৬ লাখ টাকায় এক গরু ব্যাপারীর কাছে দিতে বাধ্য হয়েছি। 

রাজশাহীর খড়খড়ির খামারি আনোয়ার হোসেন ৬০টি বড় গরু প্রস্তুত করেছেন। শাহিওয়াল, ব্রাহমা ও দেশি জাতের। বললেন, আগে যারা ৮-১০ লাখে গরু কিনতেন, তারা এখন যোগাযোগই করছেন না। অনলাইনেও সাড়া নেই।

মেহেরপুর সদরের হরিরামপুর গ্রামের খামারি ইলিয়াস আলীর ২৩টি গরু। আগে যেগুলোর একেকটির দাম ছিল ৭ থেকে ১৫ লাখ টাকা, এখন সেই গরু কেউ নিতে আসছেন না। গত বছরের ছাগলকাণ্ডের পর এবার সবাই সতর্ক। ব্যাপরীরা বড় গরু নিতেই চাচ্ছেন না। 

পাবনা সদরের খামারি রিপন হোসেন বলেন, গতবার বড় গরু বিক্রি করতে গিয়ে ফেঁসে গিয়েছিলাম। এবার ৩৫টি ছোট গরু রেখেছিলাম। ১ থেকে ২ লাখের মধ্যে এগুলো বিক্রি হয়ে গেছে।

চুয়াডাঙ্গার নিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমি এবার ছোট জাতের ১১টি গরু এনেছি। এগুলোর দাম দেড় থেকে আড়াই লাখ। বড় গরু নিয়ে এখন ভিডিও কিংবা চটকদার বিজ্ঞাপন দিলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো জমকালো অবস্থা নেই। ৯-১০ মণ ওজনের গরু আছে। ফলকে দাম লেখা ৮-৯ লাখ টাকা। কিন্তু কেউ এসে দামও জানতে চাচ্ছেন না।

রাজধানীর গাবতলী হাট ঘুরেও ছোট-মাঝারি গরুর সরবরাহ বেশি দেখা গেছে। গরু ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, মানুষ বড় গরুতে ভয় পায়। এই ভয় শুধু টাকার না– সামাজিক, প্রশাসনিক, সব ধরনের ভয় কাজ করছে। ছোট গরু মানেই এখন ‘নিরাপদ’। 

বড় গরুতে খরচ বাড়লেও লাভ নেই
খামারিরা বলছেন, খরচ বাড়লেও লাভের মুখ দেখা কঠিন হয়ে গেছে। প্রাণী খাদ্যের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৮৭ শতাংশ। ভুসি, খৈল, ভুট্টা, খড়–সবকিছুর দাম বেড়েছে।
পাবনার রাইয়ান ডেইরি ফার্মের ব্যবস্থাপক ইকবাল মৃধা বলেন, প্রতিটি গরুর পেছনে দিনে ৫০০-৫৫০ টাকা খরচ হয়। দেড় বছরে ২ লাখের বেশি খরচ পড়ে। যে ভুসির বস্তা আগে ১ হাজার ৬০০ টাকায় পেতাম, এখন তা ২ হাজার ২০০ টাকা।

চুয়াডাঙ্গার খামারি নিয়াজ উদ্দিন বললেন, ১১টি গরু আছে, খরচ আকাশছোঁয়া। লাভ দূরে থাক, মূলধন তুলতেই হিমশিম খেতে হবে। প্রাণী খাদ্য ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। বড় গরু পালনে আগে ছিল বিনিয়োগ, এখন সেটা বোঝা। উৎপাদন খরচের সঙ্গে বিক্রির সমন্বয় হচ্ছে না। সরকারিভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ না এলে এই খাত টিকে থাকবে না।

এদিকে অন্য বছর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোরবানির গরু নিয়ে প্রচার ছিল। এবার এখনও অনলাইন হাট জমেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উদ্যোক্তা বলেন,  আগের বছর যেখানে বড় গরুর বিজ্ঞাপন ছিল ৩০-৪০ ভাগ, এবার তা ১০ ভাগের নিচে। এ বছর বড় গরুর বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না। ছোট-মাঝারি গরুর প্রতি মনোযোগ বেশি। 

ছিনতাই-ডাকাতির নতুন আতঙ্ক
বাজার আর দামে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি নতুন করে ভয় ঢুকেছে পরিবহনে। বর্ষাকালীন ঈদের মৌসুমে পশুবাহী ট্রাক অনেক সময় দীর্ঘ যানজটে পড়ে। সেই সঙ্গে মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। খাগড়াছড়ির খামারি আব্দুর রহমান বলেন, জেলার বাইরের ব্যাপারীরা ছিনতাই ও ডাকাতির ভয়ে খামারে আসতেই চান না। এবারের ঈদ বর্ষাকালে। মহাসড়কে যানজট, কাদাযুক্ত গ্রামীণ রাস্তা আর ছিনতাইকারীর তৎপরতা মিলিয়ে বিক্রির পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক।

বিশেষজ্ঞ মত
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, কোরবানির হাট কখনও ছিল ধর্মীয় আবেগের জায়গা, কখনও সামাজিক প্রতিপত্তির। এখন সেখানে জায়গা নিয়েছে আতঙ্ক, হিসাবনিকাশ আর সম্ভাব্য জবাবদিহির ভয়। 

তিনি বলেন, বড় গরুর পরিচর্যায় সময়, শ্রম, অর্থ সবই ব্যয় করেছেন খামারিরা। কিন্তু এবার সেই গরুর ক্রেতা নেই। বড় গরুর খামারিদের দীর্ঘমেয়াদি লাভ নিশ্চিত করতে হলে দরকার পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ পরিবহন ও সরকারি সহায়তা। পাশাপাশি দরকার ভয় দূর করা। সামর্থ্য থাকলে বড় গরু কিনতে যেন কোনো বাধা দেওয়া না হয়। কারণ, দেশে হাজার হাজার বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠেছে, যারা শুধু কোরবানি ঘিরে বড় গরু উৎপাদন করে। তারা লোকসানে পড়লে সার্বিক মাংস উৎপাদন ব্যাহত হবে।

সরকারি উদ্যোগ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আমরা এ বছর সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশেষ নজর দিয়েছি। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় পশু আনতে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ব্যবস্থা থাকবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বড় গরু বিক্রির সুযোগ থাকছে। হাটগুলোতে ভেটেরিনারি সার্জনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে, যেন গরুর স্বাস্থ্য নিয়ে বিভ্রান্তি না থাকে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ঈদের সময় হাটের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি ট্রাকে নির্দিষ্ট হাটের তথ্য থাকতে হবে। রাস্তায় পশু নামানো যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মহাসড়কে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ