সরকারের একলা চলো মনোভাব পরিহার করা উচিত
Published: 30th, May 2025 GMT
আকাশ এত মেঘলা/ যেও নাকো একলা/ এখনি নামবে অন্ধকার/ ঝড়ের জল-তরঙ্গে, নাচবে নদী রঙ্গে/ ভয় আছে পথ হারাবার। বৃষ্টিমুখর বিকেলে বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের এই গান শুনতে শুনতে একটি প্রশ্ন মনে জাগল– আমাদের জাতীয় জীবনের আকাশেও তো মেঘ জমে আছে দীর্ঘদিন। তাহলে কি আমাদেরও পথ হারাবার ভয় আছে? আবারও কি কোনো অন্ধকার গ্রাস করবে চারদিক?
মেঘলা আকাশেই বাংলাদেশের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ড.
এদিকে গত ২১ মে সেনা সদরে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য এবং এর এক দিন পর হঠাৎ প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের চিন্তাভাবনার কথা প্রচারিত হলে সর্বত্র উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। লক্ষণীয়, সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্যে যেসব কথা বলেছেন, দেশবাসী বা রাজনৈতিক নেতারা তাতে নেতিবাচক কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। বরং তাঁর বক্তব্যকে সবাই গ্রহণ করেছেন। বিশেষত বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইনে করিডোর দেওয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ‘নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল’-এর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকার থেকে আসতে হবে– তাঁর এ বক্তব্যকে সবাই স্বাগত জানিয়েছে। কেউ এটা স্বীকার না করলেও অনুমান করা কঠিন নয়, সেনাপ্রধানের এ সংক্রান্ত বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তা ছাড়া সরকার অনেক ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে অন্ধকারে রাখছে– জেনারেল ওয়াকারের এ মন্তব্যও প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সহচরদের মনঃপূত হয়নি। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে কেবিনেট কলিগদের সঙ্গে অনির্ধারিত দীর্ঘ চার ঘণ্টার বৈঠকে ড. ইউনূসের ‘কাজের পরিবেশ পাচ্ছি না’ বলে পদত্যাগের অভিপ্রায় ব্যক্ত করার মধ্যে।
ড. ইউনূস কাজের পরিবেশ পাচ্ছেন না– এ কথা বিশ্বাস করা কঠিন। গত ১০ মাসে তিনি যেটা যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই হয়েছে এবং হচ্ছে। কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেনি। ১০ মাসের মাথায় সরকারের কয়েকটি কাজের এখতিয়ার নিয়ে মুখ খুলেছেন সেনাপ্রধান। অবশ্য করিডোর ও বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়ার বিরোধিতা বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আগেই করেছে। ১০ মাসের খতিয়ান দেখে অনেকেরই ধারণা ছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে তোয়াক্কা না করে অন্তর্বর্তী সরকার করিডোর ও বন্দর প্রশ্নে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে। সেনাপ্রধানের প্রকাশ্য অভিমত সরকারের সে এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দেখা দিয়েছে। যেহেতু করিডোর ও বন্দর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত, তাই এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান তথা সেনাবাহিনীর মতামতকে উপেক্ষা করা সহজ হবে না। এই প্রতিবন্ধকতাই ড. ইউনূসের কাছে ‘কাজের পরিবেশ নেই’ বলে অনুমিত হচ্ছে।
কেউ কেউ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু কিছু বিষয়ে ‘একলা চলো’ নীতি অবলম্বন করছে। যেহেতু দেশে এখন জাতীয় সংসদ নেই, তাই ওইসব বিষয়ে জনগণের সম্মতিরও কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এসব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শক্রমেই সরকারের সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের যে রেফারেন্সের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত, তাতে স্পষ্টই বলা আছে– এ সরকার শুধু প্রয়োজনীয় রুটিন কাজ সম্পন্ন করবে। তারপরও সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজে সরকার হাত দিয়েছে।
লক্ষণীয়, রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া আর কোনো জাতীয় নীতিনির্ধারণী বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ বা মতামত গ্রহণের গরজ অনুভব করেনি। মিয়ানমারের রাখাইনকে করিডোর দেওয়া ও বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়ার উদ্যোগ তার উদাহরণ। যদিও শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলতে বাধ্য হয়েছেন, করিডোর নয়, রাখাইনে ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর ব্যাপারে কথা হয়েছে।
সরকারের একলা চলো নীতির আরেক উদাহরণ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পথে পা বাড়ানো। গত ২২ মে একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। যে সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো সবার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার, সেই সময়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উদ্যোগ রাজনৈতিক দলগুলোকে উপেক্ষা করার নামান্তর। রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বাগ্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিকে উপেক্ষা করে ঢাকা সিটি নির্বাচনের আয়োজন করার চেষ্টা নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে সচেতন মহল মনে করে। কেউ কেউ মনে করেন, বিদ্যমান উত্তপ্ত পরিবেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চেষ্টা করা হবে আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার শামিল। অন্তর্বর্তী সরকারের এই একলা চলো মনোভাব নতুন এক সংকটের জন্ম দেবে– এটা চোখ বন্ধ করে বলা যায়।
মহিউদ্দিন খান মোহন: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমক ল ন প রসঙ গ উপদ ষ ট য় সরক র সরক র র পর ব শ কর ড র ১০ ম স ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের শীর্ষ ১০ আইকনিক ফুটবল স্টেডিয়াম
১সিগনাল ইদুনা পার্ক | ডর্টমুন্ড, জার্মানি সিগনাল ইদুনা পার্ক