ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র সাতদিন। ঈদকে সামনে রেখে কেরানীগঞ্জের হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খামারি ও ব্যাপারীরা গরু-ছাগল নিয়ে হাটে আসছেন।

বিক্রেতারা জানান, এখনো বেচাবিক্রি জমে ওঠেনি। রবিবার (১ জুন) সকাল থেকে ক্রেতারা আসতে শুরু করবেন হাটে। 

রাজশাহী থেকে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা হাটে গরু বিক্রি করতে আসা ব্যাপারী ফাহিম বলেন, ‍“আমরা প্রতিবছর জিনজিরা হাটে ৫০-৬০টি কোরবানির পশু নিয়ে আসি। এ হাটে বিক্রি ভালো হয়, পশুর দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই আমরা যত কষ্টই হোক এ হাটেই আসি। এখানে হাট কর্তৃপক্ষ আমাদের জন্য পর্যাপ্ত থাকা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।” 

আরো পড়ুন:

রাজধানীতে বসছে ১৯টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট 

কুমিল্লার হাটে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু 

জামালপুর থেকে কেরানীগঞ্জের আগানগর হাটে গরু নিয়ে আসা কলিম ব্যাপারী বলেন, “আমরা গরিব মানুষ, একটু বেশি দাম পাওয়ার আশায় ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাটে পশু নিয়ে আসি। এখনো গরু বেচাকেনা শুরু হয়নি। আমি ৩০টি গরু এনেছি। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে আমাদের থাকতে একটু কষ্টই হচ্ছে। যদি গরুর দাম ভালো পাই তাহলে এই কষ্ট থাকবে না।”

জিনজিরা হাটে গরুর দাম যাছাইয়ে আসা ইয়াসিন বলেন, “পশুর হাটে ঘুরছি, যদি দামে বনিবনা হয়; তাহলে কোরবানির জন্য পশু কিনে বাসায় যাব। এখন পশুর অনেক দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। আশা করি, আরো পশু হাটে এলে দাম কমে যাবে। গত বছরের চেয়ে এবার অনেক আগেই হাটে বেশি গরু উঠেছে। দুইদিন পর আরো গরু হাটে আসলে মনে হয় দাম অনেকটাই কমে যাবে।”

জিনজিরা হাটের ইজারাদার মোজাদ্দেদ আলী বাবু বলেন, “কোরবানির হাটের প্রস্তুতি শেষ বললেই চলে। নিরাপত্তার জন্য পুরো মাঠে আলোসহ সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শতাধিক সেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে হাটে পশুতে ভরে গেছে। রবিবার থেকে বেচাকেনা জমে উঠবে বলে আশা করছি।”

আগানগর হাটের ইজারাদার আরশাদুর রহমান সপু বলেন, “আমাদের হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা ট্রাকে করে গরু আনছেন। কোরবানির হাটের প্রস্তুতি শেষ বললেই চলে। নিরাপত্তার জন্য পুরো মাঠে আলোসহ সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রবিবার থেকে বেচাকেনা জমে উঠবে। আমাদের হাটে আশা গরুর পাইকারদের থাকা খাওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।” 

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো.

আলামিন তালুকদার বলেন, “কেরানীগঞ্জের প্রতিটি কোরবানির পশুর হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা  করা হয়েছে। প্রতিটি হাটে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। হাঁটের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।” 

ঢাকা/শিপন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র হ ট র জন য প ব যবস থ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী বাজেটে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ

অর্থনীতির নানা রূঢ় বাস্তবতা সামনে নিয়ে আজ সোমবার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ সোমবার বেলা তিনটায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের আগে ধারণকৃত বাজেট বক্তব্য বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রচারিত হবে।

এটি হবে দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর প্রয়োজনীয় সংশোধন করে জুন মাসের শেষ দিকে জারি হবে অর্থ বিল। বরাবরের মতো এবারও তা কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট উপলক্ষে গত ২৫ মে এক সাক্ষাৎকার দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির সুফল যেন সবাই পান, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বাজেট করতে যাচ্ছি। এ বাজেট হবে জনগণের জীবন-জীবিকা উন্নত করার বাজেট। বাজেট হবে বাস্তবসম্মত, কল্যাণমুখী ও সমতাভিত্তিক।’

এত দিন এক বছর থেকে অন্য বছর বাজেটের আকার বাড়ানো হয়ে আসছিল ১০ শতাংশের বেশি, গতবার বাড়ানো হয় ৫ শতাংশের কম। এবার তা কমানো হচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার। আর সালেহউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা করছেন ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট।

বাজেট পরিসংখ্যান

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে। বাজেটের মোট আকার কমানোর পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও কমছে এবার। চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এডিপি ঠিক করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। এ অঙ্ক চলতি অর্থবছরের চেয়ে কম। তবে আগামী অর্থবছরে কিছু কর্মসূচিকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় রাখা হবে না। সরকারকে সুদ ব্যয় বাবদ এক লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হবে আগামী অর্থবছরেও।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুদ ব্যয় বাবদ লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি থাকছে জিডিপির ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ থাকছে ৯৭ হাজার কোটি টাকার মতো।

আগামী অর্থবছরে রাজস্ব বাজেটের আকার কিছুটা বাড়ছে। লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে। বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর ভর্তুকির পরিমাণও বাড়ছে। আইএমএফের চাপ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ ও সার কেনায় ভর্তুকি একটু বেড়ে হতে পারে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

যেসব নীতি পরিবর্তন আসছে

আগামী অর্থবছরে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৫ শতাংশ এবং ১০ থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতের চলমান আটটি কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ বাড়ছে। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতার পরিমাণ ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাঁদের সন্তানদের জন্য মাসিক উপবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে নতুন করে।

বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংককে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়ার উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বাজেটে। আর জুলাই শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য এককালীন অর্থের পাশাপাশি মাসিক ভাতা দেওয়ার চিন্তা রয়েছে সরকারের।

এ ছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আরও বড় করছে অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমানে এ কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ পরিবারের কাছে কম দামে চাল বিক্রি করা হয়। আগামী অর্থবছরে বিক্রি করা হবে ৫৫ লাখ পরিবারের কাছে। শুধু তা-ই নয়, বর্তমানে চাল বিক্রি করা হয় বছরে পাঁচ মাস। এটা বাড়িয়ে ছয় মাস করা হচ্ছে।

বাজেটে করপোরেট কর বাড়তে পারে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে করপোরেট কর সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হতে পারে।

বর্তমানে বছরে তিন কোটি টাকার বেশি টার্নওভার (বছরে লেনদেন) হয় এমন প্রতিষ্ঠানকে লাভ-লোকসাননির্বিশেষে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কর দিতে হয়। এটি বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে।

জমি কেনাবেচার ওপর কর এলাকাভেদে ৬, ৪ ও ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে, যা এখন ৮, ৬ ও ৪ শতাংশ। ফ্ল্যাট ও জমি কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হলেও বর্তমানে যে করহার আছে, তা এলাকাভেদে কয়েক গুণ বাড়ানো হতে পারে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো এবং শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বাজেটে একটা অর্থনৈতিক রোডম্যাপ দিতে পারতেন অর্থ উপদেষ্টা, কিন্তু দিলেন না। উন্নয়নের যে বিকৃত বয়ান আগের সরকার দিয়ে যাচ্ছিল, তার পরিবর্তন করতে যথাযথ কোনো পদক্ষেপও নেননি তিনি। ফলে এ বাজেট একটা গতানুগতিক বাজেটই হচ্ছে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, দুঃখজনকভাবে এবারের বাজেটও গতানুগতিকই হতে যাচ্ছে এবং এতে কোনো চমক থাকছে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ